বাজেট শুনতে সংসদে প্রবেশ করছেন মুনমুন সেন।
রেল বাজেটের প্রতিক্রিয়া নিয়েও মুুকুল-তৃণমূল ভিন্নসুর। পরিস্থিতি সামলাতে তৃণমূল নেতৃত্বকে জানাতে হল, ডেরেক ও’ব্রায়েন ও সৌগত রায়ের মন্তব্যই কেবল দলের সরকারি প্রতিক্রিয়া হিসেবে গণ্য হবে।
রেল-বাজেট পেশের পরেই প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অসন্তোষ প্রকাশ না-করে জানান, “ভাড়া না বাড়ায় আমি খুশি। যথেষ্ট বাস্তবসম্মত রেল বাজেট হয়েছে বলা যায়।” উল্লেখ্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও এই রেল বাজেটকে বাস্তবসম্মত বলেই বর্ণনা করেছেন। দলের অপর এক প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী অবশ্য তাঁর দলের লাইনেই বাজেটের বিরোধিতা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে মুকুলের প্রতিক্রিয়া জানার পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব নড়েচড়ে বসেন। কারণ, রেলবাজেট পেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ‘জনবিরোধী’ আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
এ দিন বিধানসভায় নিজের কক্ষে যাওয়ার সময় প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভাড়া তো আগেই বাড়িয়েছে। (কেন্দ্র) বলেছিল ডিজেলের দাম কমলে ভাড়া কমানো হবে। ডিজেলের দাম তো কমেছে। কই, ভাড়া কমিয়েছে! আমাদের বোকা বানানো হচ্ছে।”
এর পরেই বিধানসভায় তৃণমূলের পক্ষে বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গের জন্য নতুন কোনও ট্রেন বা প্রকল্পের উল্লেখ এই বাজেটে নেই। তাঁর কথায়, “বাংলা বঞ্চিত ছিল, বঞ্চিতই থাকল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করা জোকা-তারাতলা, ফুরফুরা শরিফের প্রকল্পও ব্যাহত হয়েছে।” রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতার তৈরি করা ‘ভিশন ২০২০’-র উল্লেখ করেছেন সুব্রতবাবু। এই বাজেটের ফলে বিদেশি পুঁজির আমদানির পথ প্রশস্ত হল বলে মন্তব্য করেন সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “বিদেশি পুঁজির আমদানি হবে, স্বদেশি পুঁজির সুযোগ-সুবিধে আরও কমবে নীরবে মোদী সরকার এটা করে দিল। এখান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সাধারণ বাজেটেও বিদেশি পুঁজিরই রমরমা হবে।”
সে সময়েই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, দিল্লিতে দলের আর এক নেতা মুকুলবাবু তো বাজেটকে বাস্তবসম্মত বলে সন্তোষ প্রকাশই করেছেন।
কিছুটা থতমত খেয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “এই বাজেটে কোনও দিশা নেই। মানুষের এবং রেলের কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী এই বাজেট।” তৃণমূলে কার্যত কোণঠাসা মুকুলের প্রতিক্রিয়া যে দলের বক্তব্য হিসাবে গ্রাহ্য হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়ে সুব্রতবাবু বলেন, “এখানে যে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি, তার সঙ্গে দিল্লিতে সৌগত রায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন বলছেন। এর বাইরে তৃণমূলের আর কারও বক্তব্য দলের প্রতিক্রিয়া হিসাবে গ্রাহ্য করা হবে না!”
বাজেট চলাকালীন সংসদ চত্বরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ এবং হেমা মালিনী।
তৃণমূলের আর এক রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী দলের লাইন মেনেই বলেন, “সবই প্রভুর মায়া! তা ছাড়া আর কিচ্ছু নেই এই বাজেটে!” বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “এ হল ব্রেক ফেল বাজেট!” দীঘা-নন্দীগ্রামের প্রকল্পে অতি সামান্য বরাদ্দ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের আর এক সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও। দলীয় সূত্রে খবর, সংসদে রেল বাজেট নিয়ে সরব হওয়ার প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। সেখানে মুকুলবাবুর সতর্ক প্রতিক্রিয়া যথেষ্টই বেমানান।
ব্রিটিশ আমলের মতো রেলে ফের কোম্পানি জমানা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমাদের পয়সায় রেলের পরিকাঠামো হবে, অথচ কোম্পানির নামে স্টেশন করবে সরকার! একে বাজেট বলা যায় না।” কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া এ দিন বিধানসভায় বলেন, “রাজ্য বঞ্চিত হয়েছে মনে করলে মুখ্যমন্ত্রী সর্বদলীয় প্রতিনিধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।” এর জবাবে সুব্রতবাবু বলেন, “মানসবাবু তাঁর দলের তরফে প্রস্তাব দিলে তা বিবেচনা করে দেখা হবে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ দাবি করেছেন, এই প্রথম একটি সুপরিকল্পিত রেল বাজেট সংসদে পেশ করা হয়েছে। ভাড়া না বাড়িয়ে, যাত্রীদের উপর কোনও রকম করের বোঝা না চাপিয়ে একটি জনমূখী বাজেট করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এর আগে লালু প্রসাদ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন চালাকির বাজেট করেছেন। মমতা করেছেন ঘোষণার বাজেট। আজ পেশ হয়েছে একটি বাস্তবসম্মত বাজেট।”
ছবি: পিটিআই।