‘শাহি লিচু’র স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলেন নরেন্দ্র মোদী! এর জন্য রাজনীতি নয়, দায়ী চলতি বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। যা স্বাদই পাল্টে দিয়েছে বিহারের মুজফ্ফরপুরের বিখ্যাত লিচুর।
পাঁচ দশক ধরে বিহার প্রশাসনের তরফে বিখ্যাত শাহি লিচু পাঠানো হয় দেশের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার-সহ বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীদের কাছে। কিন্তু অন্যথা হল এই বছরে।
কেন পাঠানো গেল না লিচু? মুজফ্ফরপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকুল ভাল হলেও গরমের জেরে শুরু হয়েছিল পোকার আক্রমণ। ফলে প্রথম থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল লিচুর ফলন। তার উপরে ফল ধরার পর প্রতিদিনই শিলাবৃষ্টি হতে থাকে। তাতেই বাকি ফলন কার্যত তলানিতে এসে ঠেকে। যেটুকু লিচু হয়েছে তার গুণগত মান এতই খারাপ যে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তা পাঠালে মুজফ্ফরপুরের নাম ডুববে।
১৯৬০ সাল থেকে দিল্লির ক্ষমতাসীনদের লিচু পাঠানোর এই পরম্পরার শুরু। তার জন্য খাটনিও কম নয়। প্রতি বছর জেলা কৃষি আধিকারিক বিভিন্ন বাগানে গিয়ে উন্নত মানের শাহি লিচু খুঁজে বার করেন। সেই লিচু সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় জেলা কৃষি দফতরে। সেখানে চলে বাছাই। ছোট ছোট কাঠের বাক্সে ২০০০ করে লিচু প্যাকিং করা হয়। এর পরে বিহার সরকারের তরফে সেই লিচুর বাক্স ট্রেনে চাপিয়ে দিল্লি পাঠানো হয়। দিল্লির চাণক্যপুরীর বিহার নিবাসে রেসিডেন্ট কমিশনারের তত্ত্বাবধানে সেই লিচু পৌঁছয় ল্যুটিয়েন দিল্লির বিভিন্ন বাংলোয়। আর কমিশনার নিজে গিয়ে সেই লিচু ভর্তি বাক্স পৌঁছে দিয়ে আসেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
এ বারেও লিচুর খোঁজে প্রায় ১৫ দিন ধরে জেলার বিভিন্ন ব্লকে চক্কর মেরেছেন জেলা কৃষি আধিকারিক সুধীর কুমার। কিন্তু মনের মতো লিচু পাননি। কৃষি দফতরের অফিসাররা জানান, ফলন খারাপ। আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্যই এমন অবস্থা। স্বাদও আশানুরূপ নয়। অধিকাংশ লিচুই টক। পরিস্থিতি জানিয়ে পটনায় রিপোর্ট পাঠান জেলাশাসক। সেই রিপোর্ট পেয়েই রাজ্য সরকার এ বার লিচু না পাঠানোরই সিদ্ধান্ত নেয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক ভানুপ্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘এ বারে ফলনের যা অবস্থা, তাতে দিল্লিতে পাঠানোর মতো লিচু নেই। আমরা বিষয়টি রাজ্য স্তরে এবং দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনারকেও জানিয়ে দিয়েছি।’’
কী আর করা। টক লিচুকে আর যা-ই হোক, ‘শাহি’ তো বলা চলে না!