প্রতীক হাজেলা
পশ্চিমবঙ্গ থেকে নথি যাচাই হয়ে ফেরত না-আসায় সে রাজ্যে শিকড় থাকা লক্ষাধিক বাঙালির নাম নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়েছে— এই বক্তব্য ঠিক নয় বলে বলে জানালেন এনআরসি কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১ লক্ষ ৫ হাজার নথি যাচাই হয়ে আসেনি, এটা ঠিক। কিন্তু তার জন্যই লক্ষাধিক বাঙালির নাম বাদ পড়েছে, সেটা বলা ঠিক নয়।’’
হাজেলার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোটা দেশে ছ’লক্ষেরও বেশি নথি যাচাই করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। তিন লক্ষ নথি যাচাই হয়ে আসে। হাজেলা সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, এই পরিস্থিতিতে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা পিছোতে রাজি হয়নি।
বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি আর এফ নরিম্যানের ডিভিশন বেঞ্চ এনআরসি দফতরকে বাড়তি ক্ষমতা দিয়ে বলে, আবেদনকারীর অন্যান্য নথি খতিয়ে দেখে, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের মতো তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের আছে। হাজেলা বলেন, ‘‘সেই তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই ভিন্ রাজ্য থেকে যাঁদের নথি ফেরত আসেনি, তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই হয়েছে।’’
মরিগাঁও জেলায় ২০০ জন ডি-ভোটার ও তাঁদের পরিবারের নাম চূড়ান্ত খসড়ায় ওঠা প্রসঙ্গে হাজেলা বলেন, ‘‘সম্ভবত ২০১৫ সালে আবেদন করার সময় ওই পরিবারগুলির নাম ডি-ভোটার তালিকায় ছিল না। কিংবা তারা এনআরসিতে মিথ্যে তথ্য দিয়েছিল। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই নাম বাদ পড়ার জেলাভিত্তিক তথ্যও আপাতত দেওয়া হবে না।’’
এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশিত হবে বলে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (আরজিআই) দফতর থেকে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল তা-ও চূড়ান্ত নয় বলে হাজেলা জানান। তিনি বলেন, ‘‘সব মন্ত্রক ও দফতরের নির্দিষ্ট কাজের জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকে। সেই বাজেট ঠিক করার জন্যই ওই সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল।’’ হাজেলা জানান, এনআরসির ব্যাপারে কোনও তারিখ ঘোষণার অধিকার শুধু সুপ্রিম কোর্টেরই আছে। উল্লেখ্য, এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে ভর্ৎসনা করে। সেখানেও কেন্দ্রের পক্ষে এই বাজেট বরাদ্দের যুক্তিই দেওয়া হয়।
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের তারিখ না বললেও যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের আবেদন করার সময়সীমা ৩০ অগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পর দু’মাসের মধ্যে সেই আবেদন যাচাই করতে বলা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এত কম সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষের আবেদন যাচাই সম্ভব? হাজেলা জানান, যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের নথি এক বার যাচাই হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় বারও যাচাই হয়ে যাবে।