Supreme Court

ধর্ষণ হোক বা যৌন নিগ্রহ, নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করা যাবে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট

২০১২ সালে দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। সেইসময় জনসাধারণের সামনে চলে আসে নির্ভয়ার আসল পরিচয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৬
Share:

সুপ্রিম কোর্ট।—ফাইল চিত্র।

আরও দায়িত্বশীল হতে হবে সংবাদমাধ্যমকে। বিশেষ করে ধর্ষণের খবরের ক্ষেত্রে। ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না কোনওমতেই। তাঁর মৃত্যু হলেও নয়। যৌন নিগ্রহের ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে নির্যাতিতা যদি নাবালিকা হয়। মিটিং-মিছিল এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও যেন কোনওভাবে তার পরিচয় প্রকাশ না পায়। তাদের পরিবারের সম্মতি থাকলেও নয়। মঙ্গলবার সাফ জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

Advertisement

২০১২ সালে দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। সেইসময় জনসাধারণের সামনে চলে আসে নির্ভয়ার আসল পরিচয়। সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন নির্ভয়ার মা-বাবাও। চলতি বছরের শুরুতে জম্মু-কাশ্মীরের ধর্ষণ করে খুন করা হয় ৮ বছরের এক বালিকাকে। তার পরিচয়ও গোপন থাকেনি। যাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন মানবাধিকার কমিশনও। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তাই আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী নিপুণ সাক্সেনা। তাঁর যুক্তি ছিল, এ ভাবে নির্যাতিতার নাম-পরিচয় সামনে এলে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। আদালতের তরফে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।

এ দিন মামলাটির শুনানি করছিল বিচারপতি মদন বি লোকুর, এস আব্দুল নাজির এবং দীপক গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ। সেখানেপ্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক দুই ধরনের সংবাদমাধ্যম, পুলিশ এবং ফরেনসিক আধিকারিকদের উপর নির্যাতিতার নাম-পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা বসানো হয়। সংবাদমাধ্যমের জন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ ঘোষণা করে আদালত। তাতে বলা হয়, আগ বাড়িয়ে ধর্ষিতা বা যৌন নির্যাতনের শিকার কোনও মহিলার সাক্ষাত্কার নিতে পারবে না সংবাদমাধ্যম। যদি না তাঁরা নিজে থেকে এগিয়ে আসেন। শুধুমাত্র টিআরপি-র দৌড়ে টিকে থাকতে এই ধরনের সংবেদনশীল ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা যাবে না। পুলিশ এবং ফরেনসিক আধিকারিকদেরও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। যৌন নির্যাতনের এফআইআর মামলা দায়ের হলে, বিশেষ করে নির্যাতিতা যদি নাবালিকা হয়, সে ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে তাঁদের। লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনওভাবেই তার নাম-পরিচয় যেন জনসাধারণের সামনে এসে না পড়ে। তাই বন্ধ খামে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে রমনের ‘উন্নয়ন’-এর রথ আটকে দিল কংগ্রেস​

আরও পড়ুন: ধুন্ধুমার যুদ্ধ মধ্যপ্রদেশে, বিজেপি-কংগ্রেসে জোর টক্কর​

কয়েকটি বিরল ঘটনা বাদ দিলে, ভারতীয় সমাজে আজও ঠাঁই নেই ধর্ষিতাদের। সামাজিকভাবে তাঁদের বয়কট করা হয়। এমন একটি ঘটনা, যেখানে নির্যাতিতার কোনও দোষই নেই, সারাজীবন তার বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় তাঁকে। লাগাতার হেনস্থার শিকার হতে হয়। তা নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করে আদালত। বলা হয়, ‘‘ধর্ষণের শিকার মহিলাদের আজও অস্পৃশ্য ভাবে আমাদের সমাজ, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ তবে যৌন নির্যাতনের শিকার মহিলাদের নিয়ে মিটিং-মিছিল এবং আন্দোলনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। শীর্ষ আদালত জানায়, ‘‘নির্যাতিতাদের আইকন প্রতিপন্ন করে তুলতে আজকাল প্রতিবাদ মিছিল বেরোয়। তাতে তাঁদের নাম-পরিচয় কিছুই গোপন থাকে না। এই ধরনের আন্দোলন একেবারেই সমর্থন করি না আমরা। এ ভাবে নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করা উচিত নয়। তিনি মারা গেলেও নয়, তাঁর পরিবারের সম্মতি থাকলেও নয়। এ সব করতে গেলে এ বার থেকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।’’

এ ছাড়াও দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যার মধ্যে অন্যতম হল, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় একটি করে কেন্দ্র খুলতে হবে, যেখানে নির্যাতিতাদের কাউন্সেলিংয়ের সুবিধা থাকে। ঠিকমতো চিকিৎসা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন