National News

বৈচিত্রে ঐক্যের কথা শোনালেন মোদী, আশ্বাস দেশের মুসলমানদের

সিএএ-এনআরসি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ মোদীর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:০৪
Share:

ছবি: পিটিআই।

কাগজেকলমে দিল্লির মঞ্চটা ছিল বিজেপির নির্বাচনী জনসভা। সেই মঞ্চই কার্যত হয়ে উঠল সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদীর ভাষণস্থল। এই দুই বিষয় নিয়ে দেশজোড়া বিক্ষোভের মুখে দাঁড়িয়ে মোদীর আশ্বাস, হিন্দু হোক বা মুসলিম, দেশের কোনও নাগরিকের জীবনেই প্রভাব পড়বে না। সেই সঙ্গে উল্লেখ করলেন ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কাঠামোর কথা। পাশাপাশি, সিএএ-এনআরসি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করলেন মোদী।

Advertisement

রবিবার দিল্লি রামলীলা ময়দানে বিজেপির নির্বাচনী জনসভায় ভাষণে মোদী তুলে ধরলেন নয়া স্লোগান, “বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই ভারতের বিশেষত্ব।” সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর পাশ হওয়ার বহু আগে থেকেই যে বিশেষত্ব উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে, তাকেই উল্লেখ করে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, এই আইনের ফলে দেশের ১৩০ কোটি ভারতবাসীর জীবনে কোনও প্রভাব পড়বে না, তা সে সংখ্যাগুরু হোক বা সংখ্যালঘু। তাঁর কথায়, “সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কারও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নয়। দেশের কোনও মুসলমানকে তাড়াতে এই আইন নয়। যে শরণার্থীরা আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ধর্মের কারণে প্রতারিত এই আইন তাঁদের জন্য। এই আইন সে সব শরণার্থীদের জন্য যাঁরা বহু বছর এ দেশে রয়েছেন।”

এ দিনের সভায় মোদী একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, ভারতের জনগণের একটা বৃহদাংশই তাঁকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছেন। সংসদেও বহুমতে ভোটে পাশ হয়েছে সিএএ এবং এনআরসি। সেই মতকে সম্মান জানানোর কথা বলেছেন তিনি। বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, “আপনারা যদি জনমতকে অগ্রাহ্য করেন, তবে মোদীর কুশপুতুল পোড়ান। কিন্তু দেশের সম্পত্তি পোড়াবেন না। তা নষ্ট করবেন না।”

Advertisement

আরও পড়ুন: নাড্ডার মিছিলে থাকতে ‘আন্তরিক’ ফোন বিজেপির, কথা দিলেন না শোভন

দিল্লির রামলীলা ময়দানে নরেন্দ্র মোদীর সভায় বিজেপি সমর্থকদের ভিড়। ছবি: পিটিআই।

১১ ডিসেম্বর সংসদে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এই আইনের ফলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ খ্রিস্টান, পার্সি ও জৈন শরণার্থীদের এ দেশের নাগরিকত্বের পথ প্রশস্ত হয়েছে। তবে এই বাদ রাখা হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের। তা নিয়ে প্রতিবাদে মুখর গোটা দেশ। যদিও মোদীর বক্তব্য, এই আইনের ফলে এ দেশের মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তাঁর দাবি, এই আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই গুজব ছড়াচ্ছে বিরোধী দলগুলি ও কিছু শিক্ষিত শহুরে নকশাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। মোদীর কথায়, “কিছু শিক্ষিত শহুরে নকশাল ভুল বোঝাচ্ছেন, সকলকে ডিটেনশন শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সকলকে বলব, কংগ্রেস আর শহুরে নকশালরা ডিটেনশন শিবির নিয়ে যা বলছেন, তা মিথ্যে কথা।”

আরও পড়ুন: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি-তে ধর্ম উল্লেখ করতে হবে না, জানাল কেন্দ্র

সিএএ-র পাশাপাশি জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়েও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে দেশ। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, দিল্লি-সহ সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তাঁদের রাজ্যে এনআরসি কার্যকর করতে দেবেন না। তবে সংসদে পাশ হওয়ার পর সে কথা কী ভাবে বলতে পারেন ওই মুখ্যমন্ত্রীরা, সে প্রশ্নও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি মোদীর পরামর্শ, “আপনারা তো মুখ্যমন্ত্রী, ভারতের সংবিধানকে সামনে রেখে শপথ নিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় থেকে এমনটা কি করা যায়? কিছু আইন জানা মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তার পর কথা বলুন।”

আরও পড়ুন: ‘বদলা’ নিলেন যোগী, বহু দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিল প্রশাসন

বিরোধীদের মধ্যে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুই আইনের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মী-সমর্থক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ দিনের ভাষণে সেই মমতাকে তীব্র আক্রমণ করেন মোদী। তিনি বলেন, “সংসদে কয়েক দিন আগেই মমতা দিদি বলতেন, অনুপ্রবেশকারীদের আটকাতে হবে। শরণার্থীদের নাগরিকত্বের কথা বলতেন। কিন্তু মমতা দিদি এখন সোজা কলকাতা থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জে পৌঁছে গিয়েছেন।” মোদীর কটাক্ষ, “আপনি কাদের বিরোধিতা করছেন, কাদের সমর্থন করছেন, সেটা গোটা দেশ দেখছে মমতা দিদি? এমনটা কী হল, যাতে আপনি পাল্টে গেলেন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন