Narendra Modi

বিদেশি লগ্নির জন্য মোদীর পঞ্চ-তন্ত্র

বৃহস্পতিবার আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, সিঙ্গাপুর-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ২০টি বৃহৎ পেনশন ও বিদেশি রাষ্ট্রায়ত্ত (সভরেন) বিনিয়োগ তহবিলের কর্ণধারদের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠকে বসেছিলেন মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২০ ০৪:২১
Share:

‘ভার্চুয়াল গ্লোবাল ইনভেস্টর রাউন্ডটেবিল’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার। পিটিআই

মজবুত গণতন্ত্র। স্থায়ী সরকার। স্বচ্ছ প্রশাসন। সাহসী সংস্কার। আর বিপুল বাজার। মূলত এই ‘পঞ্চ-তন্ত্রে’ ভারতকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সব থেকে নিরাপদ ও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দাবি করলেন, কোভিডের ধাক্কায় লাইনচ্যুত বিশ্ব অর্থনীতির রেলগাড়িকে সেখানে ফিরিয়ে আনার ইঞ্জিন হতে পারে ‘আত্মনির্ভর’ ভারতীয় অর্থনীতি। কেন এই মুলুকে টাকা ঢালার রিটার্ন সব থেকে বেশি হতে পারে, তুলে ধরলেন তার যুক্তিও। শুধু বৃদ্ধির হার চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে যে শূন্যের ২৩.৯% নীচে নেমে গিয়েছে, সে কথা ভুলেও মুখে আনলেন না তিনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, সিঙ্গাপুর-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ২০টি বৃহৎ পেনশন ও বিদেশি রাষ্ট্রায়ত্ত (সভরেন) বিনিয়োগ তহবিলের কর্ণধারদের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠকে বসেছিলেন মোদী। যাঁদের সিদ্ধান্তে ভর করে ৬ লক্ষ কোটি ডলার খাটে বিভিন্ন দেশে। ভারতের তরফে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসরা তো ছিলেনই, এ দেশে নিজেদের লগ্নি-অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে উপস্থিত ছিলেন রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী, টাটা গোষ্ঠীর রতন টাটা, এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের দীপক পারেখের মতো কর্পোরেট নক্ষত্ররা। এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে ভারতে খনন ও নির্মাণের ভারী যন্ত্র তৈরিতে লগ্নির আশ্বাস দিয়েছে জাপানি সংস্থা টয়োটা তুশো। প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি মিলেছে ওই দেশের গাড়ি যন্ত্রাংশ নির্মাতা সুমেদা-র তরফ থেকেও।

কোভিডে বিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত সেই গুটিকয় দেশের অন্যতম, যেখানে শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজারে রিটার্ন চড়া। সেই সঙ্গে সম্ভাবনা কম চট করে বড় মাপের রাজনৈতিক ডামাডোলের। ফলে ওই সমস্ত তহবিল যে আগামী দিনে আরও বেশি করে ভারতে টাকা ঢালতে আগ্রহী হতে পারে, তা জানে মোদী সরকার। আবার উল্টো দিকে কেন্দ্রের মতে, পরিকাঠামোয় বিপুল (১১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি) বিনিয়োগের হাত ধরেই ছন্দে ফিরবে ভারতীয় অর্থনীতি। তৈরি হবে কাজের সুযোগ। তাই দিল্লি চায়, দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণপত্র (বন্ড) মারফত টাকা ঢালুক ওই তহবিলগুলি। দু’তরফ থেকে এই আগ্রহের কথা বোঝাতে গিয়ে এ দিন প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই বলেছেন, “আমরা একে অপরকে ভাল করে বুঝলে, আপনাদের পরিকল্পনা এবং আমাদের লক্ষ্যকে এক জায়গায় আনতে সুবিধা হবে।” মোদীর দাবি, “(চড়া) রিটার্ন, বিশ্বাসযোগ্যতা, (বিপুল) চাহিদা, (মজবুত) গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা, আর্থিক বৃদ্ধি এবং পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা- সমস্ত কিছু এক জায়গায় চাইলে, ভারতই বিনিয়োগের সেরা গন্তব্য।” এই যুক্তির সমর্থনে নিজের জমানায় সংস্কারের লম্বা তালিকা লগ্নিকারীদের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মতে, নতুন কৃষি আইনের দৌলতে এ দেশের চাষিদের সঙ্গে সরাসরি গাঁটছড়া বাঁধতে পারবে সংস্থা। ব্যবসা করা সহজ হবে নতুন শ্রম বিধির কল্যাণে। মহাকাশ থেকে কয়লা- সম্প্রতি বিভিন্ন ক্ষেত্রের দরজা কী ভাবে বেসরকারি ও বিদেশি লগ্নির জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তুলেছেন জিএসটি চালু করা, বিলগ্নিকরণে জোর দেওয়ার প্রসঙ্গ।

Advertisement

বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, শিল্পপতিদের মন পেতে গিয়েই নতুন আইন তৈরির সময়ে চাষি ও শ্রমিকদের স্বার্থ বিসর্জন দিতে পিছপা হয়নি মোদী সরকার। ছাঁটাইয়ের রাস্তা সহজ করেও বন্দোবস্ত করেনি বেকারত্ব ভাতার। রাজকোষ ঘাটতিকে চাপা দিতে তার অস্ত্র শুধু বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণ। সঙ্গে কটাক্ষ, এত কিছু করেও ভারত মাথাপিছু জিডিপি-র অঙ্কে বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে পড়ার মতো অবস্থায়। আর চলতি আর্থিক বছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রধানমন্ত্রী যে রেকর্ড বিদেশি লগ্নি আসার কথা বলেছেন, তার বড় অংশ গিয়েছে গুটিকয় বড় সংস্থার শেয়ারে।

করোনার মোকাবিলা এ দেশের মানুষ যে ভাবে ‘বুক চিতিয়ে’ করেছেন, তার ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন মোদী। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, কোভিডের সময়ে এই সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধাই তো বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছিল সরকার। নইলে প্রাণ এবং কাজ খোয়াতে হত না এত জনকে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির টুইট, “পরিযায়ী শ্রমিক, দিনমজুরদের দুর্ভোগের শেষ নেই। করোনা-কালে ধার করে সংসার চালাতে হচ্ছে অর্ধেক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারকে। তবু ন্যূনতম নগদ জোগাতে নারাজ মোদী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন