বিলের ঝুড়ি মাথায় ঝড়ের মুখে মোদী

লোকসভায় ১২টি। রাজ্যসভায় ৫৩টি। দুই কক্ষ মিলিয়ে সংসদের সিলমোহরের অপেক্ষায় এখন ৬৫টি বিল ঝুলে রয়েছে। আসন্ন বাদল অধিবেশনে এগুলো পাশ করানোর প্রস্তুতি চলছে। এরই সঙ্গে সংস্কারের পথে এগোতে নতুন একগুচ্ছ বিল এই অধিবেশনেই আনতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। অথচ সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজেকে ঘিরে বিতর্কের ঝড়ে বিল পাশ বা পেশ দূরের কথা, বাদল অধিবেশনটাই না ভণ্ডুল হয়ে যায়, এমন আশঙ্কা এখন শাসক শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:২২
Share:

লোকসভায় ১২টি। রাজ্যসভায় ৫৩টি। দুই কক্ষ মিলিয়ে সংসদের সিলমোহরের অপেক্ষায় এখন ৬৫টি বিল ঝুলে রয়েছে। আসন্ন বাদল অধিবেশনে এগুলো পাশ করানোর প্রস্তুতি চলছে। এরই সঙ্গে সংস্কারের পথে এগোতে নতুন একগুচ্ছ বিল এই অধিবেশনেই আনতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। অথচ সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজেকে ঘিরে বিতর্কের ঝড়ে বিল পাশ বা পেশ দূরের কথা, বাদল অধিবেশনটাই না ভণ্ডুল হয়ে যায়, এমন আশঙ্কা এখন শাসক শিবিরে।

Advertisement

এই অবস্থায় সরকার তিনমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে।

কংগ্রেসকে উন্নয়ন-বিরোধী তকমা দিয়ে আক্রমণ শানিয়ে পাল্টা চাপে রাখা।

Advertisement

আগে থেকেই ঝেড়ে-বেছে বিলের তালিকা তৈরি করা, যেগুলি পাশ করাতে সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে।

সংসদের অধিবেশনে এমন এমন কোনও কৌশল নেওয়া, যাতে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি অন্তত পাশ করিয়ে নেওয়া যায়।

এমন আটঘাট বেঁধে এগোনোর কারণ, কংগ্রেস ইতিমধেই হুমকি দিয়ে রেখেছে, সুষমা-বসুন্ধরা ইস্তফা না দিলে অধিবেশন অচল করে দেওয়া হবে। চাপের মুখে মোদী সরকারের মন্ত্রী ও বিজেপির নেতারাও পাল্টা প্রচারে নেমে পড়েছেন কংগ্রেসকে উন্নয়ন-বিরোধী তকমা দিতে। আজ সকাল থেকেই বেঙ্কাইয়া নায়ডু, রবিশঙ্কর প্রসাদরা উন্নয়নের ঢাক পেটাতে মাঠে নেমে পড়েন। তাঁরা বোঝাতে চেষ্টা করেন, স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে কংগ্রেস।

কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, জানুয়ারি থেকেই স্মার্ট সিটি তৈরির প্রথম পর্বের কাজ শুরু হয়ে যাবে। এরই সঙ্গে বেঙ্কাইয়ার মন্তব্য, ‘‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য উন্নয়ন। কিন্তু কংগ্রেস উন্নয়নের কথা ভাবছে না। শুধু বিরোধিতা করে বাজার গরম করতে চাইছে।’’ এর পর দুপুরে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর ঘোষণা করেন, ১ জুলাই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের প্রচার শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যেখানে সাইরাস মিস্ত্রি, মুকেশ অম্বানী থেকে দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা করবেন।

মনমোহন সিংহের জমানায় সরকারের দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে বিজেপি সংসদ অচল করে রাখত। সে সময় কংগ্রেসও একই ভাবে বিজেপি-কে উন্নয়ন-বিরোধী তকমা দেওয়ার চেষ্টা করত। বিজেপি সেই একই রণকৌশল নিতে চাইছে। কিন্তু তাতে লাভ কতটা হবে, সেই প্রশ্ন থাকছেই। কারণ পাল্টা আক্রমণের মুখে কংগ্রেস যে মসৃণ ভাবে সংসদ চালাতে দেবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।

সরকার সবচেয়ে জোর দিচ্ছে জমি অধিগ্রহণ বিল ও পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল পাশের উপরে। এ ছাড়াও আবাসন নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন বিল এবং শ্রম আইন সংস্কারের একগুচ্ছ বিলও রয়েছে সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায়। মোদী সরকার যে একশোটি স্মার্ট সিটি বা শহুরে এলাকায় সকলের জন্য আবাসন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন, তার জন্য আবাসন নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন বিল জরুরি। একই ভাবে কারখানা-উৎপাদন বাড়াতে, নতুন লগ্নি টানতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের জন্য শ্রম আইনে বড়সড় সংস্কার ঘটাতে চাইছেন মোদী।

কিন্তু সমস্যা হল যে, সংসদই যদি না চলে এই সব বিল কী ভাবে পাশ হবে?

এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘লোকসভায় বিপুল গরিষ্ঠতা রয়েছে। হট্টগোলের মধ্যেও বিল পাশ করিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা নেই। সেখানে তা সম্ভব নয়।’’ যে কারণে বিল বেশি ঝুলে আছে রাজ্যসভাতেই। এই অবস্থায় গোড়া থেকেই ঝাড়াইবাছাই করে এগোতে চাইছে সরকার। কোন কোন বিলকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা জরুরি, তা ঠিক করার কাজ শুরু হয়েছে। সংসদীয় বিষয়ক সচিব আফজল আমানুল্লা গত সপ্তাহে সব মন্ত্রকের সচিবদের চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন, বকেয়া বিলগুলির মধ্যে কোন কোন বিলকে তারা অগ্রাধিকারের তালিকায় চান। নতুন কী বিল আসতে চলেছে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে মন্ত্রকগুলিকে।

সচিবের চিঠিতে বলা হয়েছে, ৬৫টি বিলের মধ্যে ৩৪টি বিলে সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট জমা পড়েছে। কিন্তু জমি বা জিএসটি-র মতো ১৮টি বিল নিয়ে এখনও সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা চলছে। সরকারের আশঙ্কা, কংগ্রেসের তরফে সংসদীয় কমিটিতেও ওই সব বিল নিয়ে টালবাহানা করে দেরি করানোর চেষ্টা চলবে। মন্ত্রকের আমলাদেরও সংসদীয় কমিটিতে নিয়মিত ডাক পড়ছে। তাই কোন বিলের রিপোর্ট কবে চূড়ান্ত হতে পারে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রকের আমলাদের।

আর একটি রণকৌশলও নিচ্ছে মোদী সরকার। বিরোধীদের হট্টগোল থামাতে অধিবেশনের শুরুতেই জনস্বার্থের কোনও বিষয় আলোচনায় বা বিতর্কে তুলে আনা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। মোদী সরকারের মন্ত্রীদের যুক্তি, জনস্বার্থের বিষয়ে আলোচনা হলে কংগ্রেসও তাতে অংশ নিতে পারে। সেই ফাঁকেও কিছু বিল পাশ করানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন