সরব মোদী বললেন, তাঁর পরীক্ষা উনিশে

পরিস্থিতি সামলা দেওয়া যাচ্ছে না। ঘুম উড়ে যাওয়ার দশা প্রধানমন্ত্রীর। এই চাপ মোকাবিলার রাস্তা কী? প্রধানমন্ত্রীর জবাব ‘‘যোগনিন্দ্রা।’’ যা তিনি নিয়মিত করেন। প্রশ্নটি এক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ সামলানো নিয়ে হলেও, জীবনের অভিজ্ঞতা ছেঁচে উত্তর দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৯
Share:

ছাত্রবন্ধু: ‘পরীক্ষা পর চর্চা’ শীর্ষক আলোচনাচক্রে পড়ুয়াদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শ। শুক্রবার দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে। ছবি: পিটিআই।

তিনি নিজেও কী কম চাপে!

Advertisement

জনসমর্থনে ধস নামছে। ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছেন রাহুল গাঁধী। নীরব মোদী কেলেঙ্কারিতে কার্যত এই প্রথম দুর্নীতির আঙুল উঠেছে নরেন্দ্র মোদী প্রশাসনের দিকে। অভিযোগ মোকাবিলায় দলীয় নেতাদের নামিয়েও পরিস্থিতি সামলা দেওয়া যাচ্ছে না। ঘুম উড়ে যাওয়ার দশা প্রধানমন্ত্রীর। এই চাপ মোকাবিলার রাস্তা কী? প্রধানমন্ত্রীর জবাব ‘‘যোগনিন্দ্রা।’’ যা তিনি নিয়মিত করেন। প্রশ্নটি এক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ সামলানো নিয়ে হলেও, জীবনের অভিজ্ঞতা ছেঁচে উত্তর দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

চাপে তিনি সর্বক্ষণ। পান থেকে চুন খসলে তাঁর দিকে যে আঙুল ওঠে, তা আজ পড়ুয়াদের বোঝাতে চেয়েছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘তোমরা তো বছরে এক বার পরীক্ষা দাও। আর আমার পরীক্ষা ২৪ ঘণ্টা।’’ বলেন, ভারতের কোনও প্রান্তে পুরসভায় দল হেরে গেলে তার দায়ও তাঁর ঘাড়ে এসে পড়ে। ফলে পরীক্ষার্থীদের মতো তিনিও সর্বক্ষণ চাপে রয়েছেন। অভিভাবকদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, একটি পরীক্ষায় তাঁর সন্তান অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়া মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়।

Advertisement

ঘিয়ে রঙের জওহর কোট। কানে ছোট্ট মাইক্রোফোন। ‘ম্যানেজমেন্ট গুরু’র মতোই তালকাটোরা স্টেডিয়ামের মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, তিনি আজ পরীক্ষার্থী। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। ‘‘তোমরাই বলবে, দশে আমি কত পেলাম,’’ বলেন মোদী।

ছাত্র-ছাত্রীদের আস্থা অর্জনে শুরু থেকেই কৌশলী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের প্রতিটি পড়ুয়া জন্ম থেকেই রাজনীতিক। কী ভাবে বাবা-মা বা শিক্ষকদের সামলাতে হয়, তা তারা খুব ভাল করেই জানে।’’ আর একেবারে শেষে দিল্লির মুঙ্গেশপুরের জওহর বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র গিরীশ সিংহ জানতে চান, ‘‘আগামী বছর আমার উচ্চমাধ্যমিক। আপনারও তো পরীক্ষা রয়েছে ২০১৯ সালে, লোকসভা নির্বাচন। কেমন প্রস্তুতি হয়েছে? আপনি কি নার্ভাস?

হেসে ফেললেন মোদী। বললেন, ‘‘যে ভাবে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করেছে, তাতে এ ছেলের সাংবাদিক হওয়া উচিত।’’ এরপর তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি পড়াশুনোর আসল উদ্দেশ্য হল— শেখা। পরীক্ষা, ফলাফল বা নম্বর এগুলো হল ‘বাই প্রোডাক্ট’। তেমনই নির্বাচন আসবে-যাবে, কিন্তু আমি যে ১২৫ কোটি মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি সেটিই বড় ব্যাপার।’’

ক’দিন আগেই পরীক্ষা-ভীতি দূর করতে ‘এক্‌জ্যাম ওয়ারিয়র’ নামে বই লেখেন মোদী। বইটি মূলত লেখা হয়েছে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই। আজও উপস্থিত অধিকাংশ পড়ুয়াই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী। যাদের কাছে দশে দশ নম্বর পেয়ে ‘নতুন বন্ধু’ বলে আজ ব্যাখ্যা করেছেন মোদী। বিজেপি শিবিরের একাংশ বলছে, এদের একটি বড় অংশ ২০১৯ সালে প্রথম ভোট দেবে। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে লোকসভার আগে নতুন দেড় থেকে দু’কোটি ভোটার যোগ হয়। ২০১৪ সালেও তরুণ ভোটারদের ভোট পেয়েছিলেন মোদী। পাঁচ বছর পরে সেই ভোট ধরতেই মোদীর ওই কৌশলী চাল বলেই মনে করেছে দল। যা নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ, জনভিত্তি নড়ে যাওয়ায় নতুন ভোটার ধরতেই এই পদক্ষেপ!

দেশের অধিকাংশ সিবিএসই মাধ্যমের স্কুলগুলিতে আজ সরাসরি শোনাল হয়েছে মোদী ও পড়ুয়াদের এই কথোপকথন। স্কুলগুলি ছাড়াও বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের কলেজেও ওই অনুষ্ঠানটি দেখানো হয়। একাধিক কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আইআইটি (ভুবনেশ্বর) ক্লাস বন্ধ করে ওই অনুষ্ঠানটি দেখানো হয়েছে। টুইটারে আড়াইশো কোটি বার #পরীক্ষাপরচর্চা আলোচিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন