NITI Aayog Meet

খয়রাতি করার আগে ভাবুন, হুঁশিয়ারি মোদীর

বৈঠকের পরে নীতি আয়োগের সিইও বি আর সুব্রমণ্যম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট কোনও প্রকল্পের কথা বলেননি। তবে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি সার্বিক ভাবে নিজের মতামত জানিয়েছেন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ ০৭:৫৬
Share:

কর্নাটকে কংগ্রেসের পাঁচটি জনমোহিনী প্রতিশ্রুতির কাছে বিজেপির হারের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের খয়রাতির বিরুদ্ধে সরব হলেন। ফাইল চিত্র।

কর্নাটকে কংগ্রেসের পাঁচটি জনমোহিনী প্রতিশ্রুতির কাছে বিজেপির হারের পরে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের খয়রাতির বিরুদ্ধে সরব হলেন।

Advertisement

জনমোহিনী রাজনীতি করে মানুষের মন জয় করতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগারের যাতে দেউলিয়া দশা না হয়, তা নিয়ে আজ নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সতর্ক করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীদের তিনি বলেছেন, আর্থিক শৃঙ্খলা জরুরি। কেউই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপরে বোঝা চাপাতে চান না। এখন ধার করে খয়রাতি করা যেতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে তার ঠেলা সামলাতে হবে। তাই যে কোনও ঘোষণা করার আগে, কোনও পরিকল্পনার আগে বা কোনও কাজ করার আগে তা মাথায় রাখতে হবে।

কর্নাটকে কংগ্রেস বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে বিনামূল্যে দু’শো ইউনিট বিদ্যুৎ, মহিলাদের দু’হাজার টাকা ভাতা, দরিদ্র পরিবারের জন্য দশ কেজি খাদ্যশস্য, বেকারদের জন্য মাসিক ভাতা ও কর্নাটকের বাসে মহিলাদের নিখরচায় যাত্রার পাঁচ প্রতিশ্রুতি পূরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটের আগেই বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, এই প্রতিশ্রুতি পালন করতে গেলে রাজ্যের ঘাড়ে প্রতি বছর পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপবে। কিন্তু কর্নাটকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে চলতি বছরের শেষে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়েও একই রকম প্রতিশ্রুতির পরিকল্পনা নিচ্ছে কংগ্রেস। এর সঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের পুরনো পেনশন প্রকল্প ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও বিজেপিকেচিন্তায় ফেলেছে।

Advertisement

আজ বৈঠকের পরে নীতি আয়োগের সিইও বি আর সুব্রমণ্যম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট কোনও প্রকল্পের কথা বলেননি। তবে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি সার্বিক ভাবে নিজের মতামত জানিয়েছেন। বিদেশি রাষ্ট্রগুলিতে খয়রাতি করতে গিয়ে কী অবস্থা হয়েছে, তার উদাহরণ দিয়েছেন।’’ এর আগেও শ্রীলঙ্কার অশান্তির পরে মোদী সরকার একইভা বে রাজ্যগুলিকে সতর্ক করেছিল। মুখ্যসচিবদের বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধীরা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, বিজেপি নিজেও কর্নাটকে নিখরচায় তিনটি করে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার, প্রতি দিন আধ লিটার দুধ, গরিবদের জন্য মাসে পাঁচ কেজি করে মিলেট বিলির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে এ বার প্রধান বিষয় ছিল ‘২০৪৭-এ বিকশিত ভারত’ তথা স্বাধীনতার শতবর্ষে উন্নত দেশগুলির তালিকায় ভারতকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য। মোদী আগেভাগে ২৫ বছর পরের এই লক্ষ্য ঘোষণা করে দিলেও তা বাস্তব কি না, তা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, এ জন্য মাথা পিছু আয় পাঁচ গুণেরও বেশি বাড়াতে হবে। প্রতি বছর আর্থিক বৃদ্ধির হার অন্তত ৭ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, ‘‘এ কোনও ব্যক্তি বা কিছু লোকের আকাঙ্ক্ষা নয়। গোটা দেশের আকাঙ্ক্ষা। এ জন্য জাতীয় স্তরে পরিকল্পনার থেকেও রাজ্য ও জেলা স্তরে পরিকল্পনা তৈরি জরুরি বলে যুক্তি দিয়েছেন মোদী। প্রতিটি রাজ্যে এই পরিকল্পনা তৈরির জন্য একটি বিশেষ দল তৈরি করতে বলেছেন। জানিয়েছেন, নীতি আয়োগ এ বিষয়ে রাজ্যগুলিকে সাহায্য করবে। তাতে রাজ্যের ভার লাঘব হবে। রাজ্যের পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই জাতীয় স্তরে রূপরেখা তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যে প্রতিটি রাজ্যে নীতিআয়োগের ধাঁচের প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।

উন্নত ভারতের লক্ষ্যে ২৫ বছরে মাথা পিছু আয় কোথায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হবে, তা নিয়ে অবশ্য নীতি আয়োগের সিইও মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলেন, সে সময় ভারতের জনসংখ্যা ১৫০ কোটি হবে। সেই অনুযায়ী মাথা পিছু আয় হিসেব করে জাতীয় আয়ের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন, কেন্দ্রের বাজেট এখন আগেই পেশ হচ্ছে। ফলে রাজ্যগুলি কেন্দ্রের থেকে কত টাকা পাবে, তা আগেই বোঝা যায়। সেই অনুযায়ী রাজ্যগুলি নিজের বাজেট তৈরি করুক। অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসেই বরাদ্দ ও খরচে জোর দিক। তা হলে বাকি মাসগুলিতে এমনিতেই কাজ এগোতে থাকবে।

এ বার রাষ্ট্রপতি ভবনের বদলে জি-২০ সম্মেলনের জন্য নতুন তৈরি প্রগতি ময়দানের সম্মেলন কক্ষে নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠক বসেছিল। ১১টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যোগ দেননি। মণিপুর বাদে বাকি সকলেই বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। নীতি আয়োগের সিইও বলেন, অতীতের বৈঠকে এ রকমই উপস্থিতি ছিল। কেউ বৈঠকে যোগ না দিলে তিনি আলোচনা, ভাবনাচিন্তার উপাদান থেকে বঞ্চিত হন। এমন নয় যে সবাইকে বয়কট করা হবে। একসঙ্গেই কাজ হবে। যে রাজ্য যোগ দেয়নি, তারা সরকারি নীতি থেকে বাদ পড়বে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন