রাজনীতির দুই বিপরীত মেরুকে এক বিন্দুতে নিয়ে এল মসলিন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিশ্ব বাংলা’-র মসলিনে মজলেন নরেন্দ্র মোদী।
গুজরাতের গাঁধীনগরে বস্ত্রশিল্পের প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন ‘টেক্সটাইল ইন্ডিয়া ২০১৭’ শুরু হয়েছে। আয়োজনে স্মৃতি ইরানির বস্ত্র মন্ত্রক। কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপোড়েন থাকলেও বিশ্বের বাজারের সামনে বাংলার বস্ত্র শিল্পকে তুলে ধরার সুযোগ ছাড়েনি পশ্চিমবঙ্গ। নিজস্ব সম্ভার সাজিয়ে বসেছে ‘বিশ্ব বাংলা’।
শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধনের পর প্রদর্শনীতে ঘুরতে ঘুরতেই নরেন্দ্র মোদী বিশ্ব বাংলা-র প্যাভিলিয়নে ঢুকে পড়েন। তাঁর সঙ্গে স্মৃতি ছাড়াও ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি, বস্ত্র মন্ত্রকের সচিব অনন্ত সিংহ। কালো মসলিনের উপর সিল্কের এমব্রয়ডারি করা কাঁথার সামনে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে জানতে চাইলেন এর ইতিহাস।
ইতিহাস বলছে, মসলিন কাঁথা হল মুঘল আমলের শিল্পকলার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মসলিনের উপর তসর সিল্কের কাজ করা এই কাঁথা তৈরি হতো মূলত হুগলি জেলায়। পর্তুগিজরা হুগলির দখল নেওয়ায় পরে তাদের হাত ধরেই এই মসলিন কাঁথা বিদেশে রফতানি হতে শুরু করে। কাঁথার নকশায় সেই প্রভাবও পড়ে। বিশ্ব বাংলা মার্কেটিং কর্পোরেশনের ম্যানেজার ময়ূখী বসাক বলেন, “এই শিল্প প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। বিশ্ব বাংলার উদ্যোগে নতুন করে এর কাজ শুরু হয়েছে।” এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শিল্পীদের একেকটি কাঁথা তৈরি করতে প্রায় ছ’মাস লেগে যায়।
আরও পড়ুন:হোঁচট দিয়েই দিন শুরু জিএসটি-র
গুজরাতের গাঁধীনগরে ‘বিশ্ব বাংলা’র স্টল।
এর পরেই মোদী হাতে নিয়ে পরখ করলেন মুর্শিদাবাদের আতরগন্ধী বালাপোশ। এরও অবলুপ্তি আটকানোর চেষ্টা করছে বিশ্ব বাংলা। হালতা আতরের গন্ধ মেশানো সুতোর চাদরের উপর সিল্কের আবরণ— মুর্শিদাবাদের নবাবদের জন্য এই ভাবেই বালাপোশ তৈরি করতেন আতির খান। এখন ভারতে তাঁর নাতির ছেলে শেখাওয়াত হুসেন খানই একমাত্র এই বালাপোশ তৈরির গোপন মন্ত্র জানেন। একে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁর সঙ্গেই হাত মিলিয়েছে বিশ্ব বাংলা কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, যে নকশা খোদাই করা শঙ্খ দেখে মোদী চোখ ফেরাতে পারছিলেন না, সেই কাজটিও এখন বাঁকুড়ার হাতে গোনা কয়েক জন শিল্পীই জানেন। একেকটি শঙ্খ তৈরি করতে তাঁদের লেগে যায় দুই থেকে তিন মাস।
মোদী দেখে প্রশংসা করে যাওয়ার পরে শনিবারও দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা মসলিন কাঁথা দেখতে বিশ্ব বাংলার স্টলে এসেছেন। কোরিয়া-জাপানের প্রতিনিধিরা বাংলার সব প্রাচীন শিল্প দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “দেশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা এই সব পণ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্যই টেক্সটাইল ইন্ডিয়ার মতো সম্মেলনের আয়োজন। যাতে শুধু বড় মাপের সংস্থা নয়, একেবারে গরিব শিল্পীরাও লাভবান হন।”