দুরত্ব কমলো কংগ্রেস-মমতার

জট কাটাতে মোদীর সঙ্গে কথা প্রণবের

নোট বাতিল ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বললেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। গত পরশু রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২৭
Share:

রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

নোট বাতিল ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বললেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

গত পরশু রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রকে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন তিনি। এ দিকে সংসদ অচল হচ্ছে বারবার। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের খবর, প্রণববাবু মমতাকে বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতি কোনও নির্দেশ দিতে পারেন না ঠিকই। তবে প্রণববাবু এ ক্ষেত্রে ঘরোয়া ভাবে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছেন। সূত্রের বক্তব্য, সংসদে অচলাবস্থা ও রাজনৈতিক জট কাটাতে পদক্ষেপ করতে মোদীকে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রপতি। মোদী জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে দলে ও সরকারে কথা বলবেন। তবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে অনড়ই থাকছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন তাঁর কৌশল, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে বিরোধীদের আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়া।

বিরোধী শিবির অবশ্য এ দিন আরও এককাট্টা হয়েছে। সংসদের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া নিয়ে বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরেছিল। মমতার রাষ্ট্রপতির কাছে দরবারের প্রস্তাবে রাজি হয়নি কংগ্রেস-সহ প্রায় কোনও বিরোধী দলই। তবে সেই দূরত্ব কমিয়ে আজ খানিকটা কাছাকাছি এসেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। আজ সংসদ অচলে কংগ্রেস ও তৃণমূলই প্রধান ভূমিকা নিয়েছে। আগামী সপ্তাহে সংসদের রণকৌশল ঠিক করতে সোমবার কংগ্রেস নেতৃত্ব সব বিরোধী দলকে বৈঠকে ডেকেছে। মমতা নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বৈঠকে যোগ দেবেন। তৃণমূলের যুক্তি— লোকসভার দলনেতা সুদীপকে বৈঠকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট, নেত্রী বিরোধী ঐক্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

Advertisement

বিধানসভা ভোটে সিপিএমের সঙ্গে জোটের পর থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মমতার দিল্লি-সফর এবং সংসদে গত তিন দিনের অধিবেশনে অনেক দিন পরে ফের সেই যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। শিবসেনা ও ন্যাশনাল কনফারেন্সকে সঙ্গে নিয়ে মমতার রাষ্ট্রপতি ভবন অভিযানের সমালোচনা করছে না কংগ্রেস। আহমেদ পটেল, দিগ্বিজয় সিংহ বা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো নেতাদের সঙ্গে গত কয়েক দিনে তৃণমূল নেতাদের যোগাযোগ হয়েছে।

সূত্রের বক্তব্য, বিভিন্ন স্তরের কংগ্রেস নেতাদের মাধ্যমে মমতা বার্তা পাঠিয়েছিলেন খোদ সনিয়া গাঁধীকে। সেই বার্তায় সাড়া দিয়ে সক্রিয় হন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁরই নির্দেশে বিরোধীদের সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে নোট বাতিলের ‘তথ্য ফাঁসের’ তদন্তে কংগ্রেস যে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র দাবি তুলেছে, তৃণমূল তাকে সমর্থন করছে না। মমতা আজও বলেন, ‘‘এর আগে সাত বার জেপিসি হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। জেপিসি-র রিপোর্ট ঠান্ডা ঘরে চলে যায়।’’ দলীয় সূত্রের

খবর, মোদী নরম না হলে সোমবার ফের দিল্লি চলে আসতে পারেন তৃণমূল নেত্রী।

সিপিএমের মতো কংগ্রেসেরও যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার শেষ অস্ত্র হতে পারে। তার আগে সংসদেই সরকারকে চেপে ধরা দরকার। কিন্তু অধিবেশনের প্রথম দিন, বুধবারই নোট বাতিল নিয়ে আলোচনায় সরকার রাজি হয়ে যায়। গোটা দিন আলোচনাও হয়। এর পরেই বিরোধী শিবির বুঝতে পারে, আন্দোলনের ধার কমেছে। তাই বৃহস্পতিবার দাবি তোলা হয় প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনায় হাজির থেকে জবাব দিতে হবে। সেই দাবিতে আজও অনড় থেকেছে বিরোধীরা।

কংগ্রেসকে তৃণমূলের পরামর্শ— সোমবার মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনি বা কর্ণ সিংহর মতো প্রবীণ নেতারা রাজ্যসভার বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীর হাজিরার দাবি জানাক। কংগ্রেসও এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। লোকসভায় আলোচনা হলে রাহুল গাঁধী নিজে বলবেন। উল্টো দিকে সরকার মনে করছে, দেরিতে আলোচনা হলেও সমস্যা নেই। আগামী সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে, মানুষের ভোগান্তি নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের ঝাঁঝ থাকবে না। বিরোধীদের আক্রমণ আরও ভোঁতা করতে প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে পারেন বলেও সরকারি সূত্রের খবর।

আজ লোকসভায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ফের মুলতুবি প্রস্তাব এনেছেন। কংগ্রেস গলা মিলিয়ে বলেছে, হাজির থাকতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন মুলতুবি প্রস্তাব না-মানায় দুই দলের সাংসদরা ওয়েলে নেমে এসে সংসদ অচল করে দেন। অধিবেশন শুরুর আগে গাঁধী মূর্তির সামনে খালি স্টিলের থালা, হাঁড়ি নিয়ে বিক্ষোভও দেখান তৃণমূল সাংসদরা। স্লোগান তোলেন, ‘মানুষ কী খাবে, এটিএম কার্ড!’

রাজ্যসভায়ও বিরোধীদের দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রী হাজির হলে তবেই আলোচনা ফের শুরু হবে। গত কাল উরিতে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহতের সংখ্যার সঙ্গে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর তুলনা টেনেছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। কংগ্রেসকে পাল্টা চাপে ফেলতে আজ বিজেপি সংসদে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা দাবি করেছে। কংগ্রেস উল্টে দাবি তুলেছে, মোদী ক্ষমা চান। সংসদের বাইরে মানুষের হেনস্থার অভিযোগ তুলে যুব কংগ্রেস সংসদ অভিযান করেছে। মহিলা কংগ্রেস আবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অভিযান করেছে। উল্টো দিকে আজাদের মন্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপি এআইসিসি দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন