মহারাষ্ট্রের দলিত বিক্ষোভে কোণঠাসা মোদী

নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে দলিতদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বেড়েছে, এই অভিযোগ নতুন নয়। তারই মধ্যে পুণের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে দলিতদের অনুষ্ঠানের মধ্যেই হিন্দু সংগঠনগুলির হামলা হঠাৎই জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করে দিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

ঔরঙ্গাবাদে বিক্ষোভের আগুন। ছবি: পিটিআই।

জাতীয় রাজনীতিতে মোদী সরকারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠল মহারাষ্ট্রের দলিত বনাম মরাঠা জাতি-সংঘর্ষ।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে দলিতদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বেড়েছে, এই অভিযোগ নতুন নয়। তারই মধ্যে পুণের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে দলিতদের অনুষ্ঠানের মধ্যেই হিন্দু সংগঠনগুলির হামলা হঠাৎই জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করে দিল। দলিতদের উপর হামলার বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সহ সব বিরোধীরা একজোট হয়েছে। এমনকী এনডিএ-র শরিক শিবসেনা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান, রামদাস আঠাওয়ালের মতো দলিত নেতারাও সরকারের উল্টো সুর গাইছেন।

পুণের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে ১৮১৮-য় পেশোয়াদের বিরুদ্ধে দলিতদের যুদ্ধ জয় ফি বছরই পালন হয়। এ বার তার ২০০ বছর পূর্তি উদযাপনের পিছনে দলিতদের উত্থানও অন্যতম কারণ ছিল। গুজরাতে গোরক্ষক বাহিনীর হাতে দলিতদের মারধর জিগ্নেশ মেবাণীর নেতৃত্বে দলিত আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল।জিগ্নেশই ছিলেন ভীমা-কোরেগাঁওয়ের অনুষ্ঠানের প্রধান মুখ।

Advertisement

আরও পড়ুন: বন্‌ধে ভাঙচুর বিক্ষোভ, চড়া আঁচ মহারাষ্ট্রে

রাহুল গাঁধী দলিতদের উপর হামলার জন্য বিজেপি-আরএসএসের ‘ফ্যাসিস্ত দৃষ্টিভঙ্গি’-কে দায়ী করে কংগ্রেসের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই সুরেই আজ কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধীরা বার বার সংসদ অচল করেছে। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে প্রশ্ন তুলেছেন, মোদী নীরব কেন? দলিতদের উপর হামলা হলে কেন প্রধানমন্ত্রী মৌন থাকেন?

কংগ্রেস এ ক্ষেত্রে বাড়তি ঝুঁকি নিচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ দলিতদের পাশে দাঁড়ালে মহারাষ্ট্রের মরাঠা ভোটে ভাঙন ধরতে পারে। এত দিন বিজেপি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে ব্রাহ্মণ নেতাকে বসিয়েছে বলে কংগ্রেস মরাঠাদের মন জয়ের চেষ্টা করছিলেন। এখন দলিতদের পাশে দাঁড়ালে মরাঠা ভোটের হিসেবে গরমিল হতে পারে। পাল্টা যুক্তি, মহারাষ্ট্রেও ৪৮টির মধ্যে ১৮টি বিধানসভা আসনে দলিতরা নির্ণায়ক। দলিত ভোট গোটা দেশেই রয়েছে। কর্মচন্দ গাঁধী এক সময়ে হরিজনদের কথা বলে দলিতদের কংগ্রেসে টেনেছিলেন। কাঁসিরাম-মায়াবতীরা সেই ভোটে ভাগ বসিয়েছে। রাহুল এখন ফের দলিত ভোট কংগ্রেসে আনতে চান। এ দিনও মহারাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে বসেন রাহুল।

ঝুঁকির উল্টো পিঠে তাই দলিত প্রশ্নে এক ঢিলে অনেক পাখি মারার সুযোগ দেখছেন কংগ্রেস নেতারা। এক, বিরোধীদের একজোট করা। সরকারের শরিকদের টেনে নেওয়া। এবং তিন তালাক নিয়ে মোদী সরকারের কৌশল ভেস্তে দেওয়া। সরকার তিল তালাক বিলকে সামনে রেখে ‘মুসলিম মহিলাদের রক্ষাকর্তা’ হয়ে উঠতে চেয়েছিল। তার বদলে আজ মোদী সরকারের গায়েই ‘দলিত-বিরোধী’ তকমা লাগানো গেল।

মহারাষ্ট্রে বিজেপির সরকার। ফলে আইন-শৃঙ্খলা ব্যর্থতার দায়ও বিজেপির। কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের ভূমিকার তদন্ত চেয়েছে। বিজেপির দাবি, সংগঠিত ভাবেই পুণে থেকে গোটা মহারাষ্ট্রে হিংসা ছড়ানো হয়েছে। তাদের দাবি, জিগ্নেশ ও জেএনইউ-র ছাত্রনেতা উমর খালিদদের উস্কানিমূলক বক্তৃতার ফলেই পুণেয় হিংসা ছড়িয়েছে। অরুণ জেটলি আজ সংসদের ভিতরে-বাইরে কংগ্রেস নেতাদের বলেছেন, ‘‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরা উস্কানিমূলক বক্তৃতার দিকে নজর দিন।’’ কিন্তু কংগ্রেস, এনসিপি থেকে শুরু করে বিরোধীদের আঙুল বিজেপি-আরএসএসের প্রভাবিত হিন্দু সংগঠনের দিকে। অভিযুক্তদের তালিকায় মোদী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শম্ভাজি ভিডের মতো হিন্দু নেতার নাম ওঠায় সেই অভিযোগও
মজবুত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন