—ফাইল চিত্র।
আমন্ত্রণের কূটনীতি!
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেননি নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বিদেশনীতির প্রশ্নে কাজ শুরু করে দিলেন শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর মাধ্যমে। গত কাল সরকারের পক্ষ থেকে অতিথি রাষ্ট্রগুলির নাম ঘোষণার পর এমনটাই মনে করছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞেরা। গত বারের মতো সার্কভুক্ত দেশগুলিকে আমন্ত্রণ না-করে, ডাকা হয়েছে বিমস্টেক-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলিতে। এটিতে পাকিস্তান নেই। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এই আমন্ত্রণ কূটনীতির পিছনে একাধিক কারণ কাজ করছে।
‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কো-অপারেশন’ তথা বিমস্টেক— প্রযুক্তি ও আর্থিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলির জোট। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও তাইল্যান্ড মিলে এটি তৈরি করে। পরে ধাপে ধাপে যোগ দেয় মায়ানমার, নেপাল ও ভুটান। নামে একটা জোট থাকলেও কাজে খুব একটা সক্রিয় ছিল না বিমস্টেক। ২০১৬ সালে উরি হামলার পরই প্রায় ঘুমিয়ে থাকা আঞ্চলিক সংগঠনটিকে জাগিয়ে তুলেছিল নয়াদিল্লিই। তার নিজের প্রয়োজনে।
সে বারে সার্ক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ইসলামাবাদে। ভারত ওই সম্মেলন বাতিল করার ডাক দিলে তাতে সাড়া দিয়েছিল বিমস্টেক-ভুক্ত সার্ক রাষ্ট্রগুলি। দক্ষিণ এশিয়ার সহযোগিতা গোষ্ঠী সার্কের কোমর ভেঙে যায় তখনই। সে বছরই গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে বিমস্টেক নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে ডাকেন মোদী। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মঞ্চ বিমস্টেক-এর গুরুত্ব বাড়ানো শুরু হয়।
মোদীর দ্বিতীয় ইনিংসে এই বিমস্টক-কে যে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে তা স্পষ্ট হয়ে গেল এই আমন্ত্রণের মাধ্যমে। এই অগ্রাধিকারের পিছনে এখন আর শুধু পাকিস্তান-বিরোধিতা নেই। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকার এই গোষ্ঠীর রাষ্ট্রগুলি বিশ্বের ২২ শতাংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে। এই দেশগুলির সম্মিলিত জিডিপি ২.৭ ট্রিলিয়ন (২.৭ লক্ষ কোটি) ডলার। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত রাষ্ট্রগুলির বার্ষিক বৃদ্ধির গড় থেকেছে ৩.৪ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশের মধ্যে। বঙ্গোপসাগর এলাকা একটি বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের আকরও বটে, যা এখনও ঠিক মতো কাজে লাগানো হয়নি। বিশ্বের এক চতুর্থাংশ পণ্য পরিবহন হয় এই এলাকা দিয়ে।
মোদী ২০১৭-তেই জানিয়েছিলেন, এই অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত শুধু পূর্ব এশিয়া নয়, বিমস্টেক-এর সঙ্গে নিজেদের আরও বেশি করে জুড়তে চায়। কূটনীতিকেরা বলছেন, শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই লক্ষ্য নয়। কৌশলগত ভাবেও বিমস্টেক-কে কাজে লাগাতে চাইছে ভারত। এই এলাকায় চিন তার প্রভাব বাড়াচ্ছে পরিকাঠামো নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে আর্থিক সাহায্য করে। সাবমেরিনের যাতায়াত বাড়ছে। মহাসড়ক প্রকল্প ওবর রূপায়ণে তৎপর বেজিংয়ের প্রবল দাপট এখন ভারত মহাসাগর পর্যন্ত। এর পাল্টা একটি কূটনৈতিক অক্ষ তৈরি করা যে ভারতের জন্য জরুরি, তা এর আগেই ঘরোয়া ভাবে জানায় বিদেশ মন্ত্রক। তাদের মতে, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতিভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেই মোদীর বিদেশনীতির দৌত্যের কাজটি শুরু হয়ে যাবে।
মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ জগন্নাথকে ডাকার পিছনেও নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। চলতি বছরের প্রবাসী ভারতীয় দিবসে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে জগন্নাথ অন্যতম। ২০১৪ থেকেই প্রবাসী ও অনাবাসী ভারতীয়দের বাড়তি কূটনৈতিক গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন মোদী। তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের সূচনায় এই নিমন্ত্রণ অনিবার্য ছিল। কিরঘিজস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানকেও ডেকে এসসিও-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির কাছে একটি বার্তা দিলেন মোদী।