সওয়ারি: সি-প্লেনেই যাতায়াত। অম্বাজি মন্দির থেকে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার অমদাবাদে সাবরমতীতে। ছবি: পিটিআই।
গুজরাতে ভোটের প্রচারের শেষ দিনে ‘সি-প্লেন’-এ চেপে চমক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তার পরেই রাহুল গাঁধী প্রশ্ন তুললেন, প্রচার তো শেষ হল, তবে চমকের বাইরে মানুষের মূল সমস্যা নিয়ে কোনও জবাবই দিলেন না মোদী।
প্রচারের শেষ বাজারের হাওয়া তুলতে আজ অমদাবাদের পথে রোড-শো করতে চেয়েছিলেন মোদী। তাঁকে টক্কর দিতে রাহুলও রোড-শো করতে চান। বেগতিক দেখে দু’জনের আবেদনই খারিজ করে পুলিশ। এমন অবস্থায় অমদাবাদে সাবরমতীর জলে ‘সি-প্লেন’ এনে ‘সেরা’ চমকটি দেন মোদী। জল থেকেই ছোট্ট বিমানে চেপে তিনি উড়ে যান ধারোই বাঁধে। সেখান থেকে সড়কপথে অম্বাজির মন্দিরে। শক্তিপীঠের অন্যতম এই মন্দির থেকে সে ভাবেই ফিরে আসেন তিনি। জলে বিমান নামতেই প্রায় ঝুলে হাত নাড়িয়ে ছবিও তোলেন মোদী। গোটা বিজেপি সমস্বরে বলতে শুরু করে, ‘‘এটাই তো উন্নয়ন।’’
যে গুজরাত মডেলকে দেশের সামনে তুলে ধরে এত দিন জোরালো প্রচার চালিয়েছেন মোদী, নিজের রাজ্যে ভোট প্রচারে তা নিয়ে ছিলেন একেবারেই নীরব। আর নোট বাতিল নিয়ে, জিএসটি নিয়ে রাহুল যে নির্দিষ্ট প্রশ্ন করেছেন, তারও জবাব দেননি তিনি। বরং পাল্টা অভিযোগ এনে গাঁধী পরিবারকে নিশানা করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রচারে শুরু থেকেই ছিল একটার পর একটা চমক। বুলেট ট্রেন থেকে প্রচার শুরু করেছিলেন, শেষ করলেন ‘সি-প্লেন’-এ। বাকি সময় তিনি কাটিয়েছেন মন্দির-মসজিদ, পাকিস্তান, মেরুকরণ নিয়েই। আজও বিমানে চেপে মন্দিরেই গিয়েছেন।
প্রচারের শেষ দিনে মোদীর রাজ্যেই ছিলেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘সি-প্লেন খুব ভাল ইভেন্ট। কিন্তু এ সব তো আসল বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘোরানো। বিমানে চেপে কী অনুন্নয়ন, বেকারি, দুর্দশা ঘুচবে? প্রধানমন্ত্রী তো একটি প্রশ্নেরও জবাব দিলেন না।’’ রাহুলের দাবি, ‘‘অপেক্ষা করুন। গুজরাতে এ বার জবরদস্ত ফল হবে।’’ কংগ্রেসের নির্বাচিত সভাপতি যখন জয়ের দাবি করছেন, তাঁর গলা থেকে উঁকি মারছে রুদ্রাক্ষের মালা। ঠিক যেমন থাকতো ইন্দিরা গাঁধীর গলায়। স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলকে প্রশ্ন করা হয়, মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে আপনি কি ‘নরম হিন্দুত্ব’ করছেন? কংগ্রেস নেতার জবাব, গুজরাতে যে মন্দিরেই গিয়েছি, রাজ্যের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা করেছি। খুব ভাল লেগেছে।’’
অম্বাজি মন্দিরে মোদীর যাওয়া নিয়ে কোনও কথা না বললেও কংগ্রেস নেতারা অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ‘সি-প্লেন’ চড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ভোটের প্রচারে চমক দিতে গিয়ে আসলে দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, দেশের প্রধানমন্ত্রী এক ইঞ্জিনের বিমান চড়তে পারেন না। আজ তা-ও চড়েছেন মোদী। বিদেশি পাইলট প্রধানমন্ত্রীর বিমান ওড়াতে পারেন না, তা-ও হল। বিদেশি পাইলট, বিদেশি বিমান— প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ তা হলে কোথায় গেল? আর ‘সি-প্লেন’ এসেছে ইউপিএ জমানায়। মোদী বেমালুম বলে গেলেন, এই প্রথম ভারতে এল। ফের মিথ্যাচার। এ তো সত্যিই ‘হাওয়া হাওয়াই’।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে খোদ মোদী সন্ধেয় একগুচ্ছ টুইট করে ‘সি-প্লেন’-এর গুণ গেয়েছেন। আর তাঁর মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘এটাই তো উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী ‘সি-প্লেন’-এ উড়ছেন। আর কংগ্রেস দশ বছরে ‘সি-প্ল্যান’ করে গেল। ‘কোরাপশন-প্ল্যান’। প্রধানমন্ত্রী সড়ক, জল, আকাশের উন্নয়ন করছেন। কংগ্রেস সড়ক, জল, আকাশে দুর্নীতি করেছে।’’
তবে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু ভোট টানতে মোদী যে ভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, তা দেখে বেজায় খুশি কংগ্রেস। দলের এক নেতার রসিক মন্তব্য, ‘‘নিজের রাজ্যের ভোট নিয়ে কত ভয়ে থাকলে প্রধানমন্ত্রী এমন হাস্যকর কাজ করতে পারেন। আমার তো ভাবছি এ বারে বলব, এ-তো হিন্দুদেরও অপমান! ‘সি-প্লেন’ না বলে প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত ছিল, তিনি পুষ্পকে চেপেছেন!’’