নেহরু জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিংহ। ছবি: পি টি আই।
নেহরু তুমি কার?
এক দিন আগেই তাঁর জন্মদিন পালনে সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে ঝাঁপিয়েছে টিম কংগ্রেস। আর আজ সরকারিতন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালনে নেমে পড়ল মোদী সরকার। যা চলবে আগামী এক বছর।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে অস্ট্রেলিয়ায়। বিদেশ তো কী! জন্মদিন পালনে দূরত্ব কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি মোদীর কাছে। উল্টে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই চাচা নেহরুর জন্মদিন পালনে মেতে উঠেছেন তিনি। দিল্লিতে মোদীর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব সামলেছেন মন্ত্রিসভার ঘোষিত নম্বর দুই রাজনাথ সিংহ। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ছোটদের চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা করেছেন। পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর সময় কাটিয়েছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে।
সরকারের পক্ষ থেকে আজ থেকে নেহরুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের যে সূচনা হল, তাতে পাঁচ দফা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সরকারিতন্ত্রের সঙ্গে লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় কংগ্রেসও। ১৭-১৮ নভেম্বর দিল্লিতে নেহরুর উপর আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে তারা। যেখানে দেশের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দল ছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। বাদ পড়েছেন মোদী ও বিজেপি এবং তাদের শরিক দলগুলি।
লোকসভার প্রচারে নেহরু-গাঁধী পরিবারকে তুলোধোনা করেছিলেন মোদী। এমনকী প্রায়শই সর্দার বল্লভভাই পটেলকে তুলে ধরে তুলনাই শুধু নয়, নেহরুকে রীতিমতো খাটো করা হয়েছে বলে মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীরা অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই মোদী বুঝিয়ে দিয়েছেন নেহরুকে ছাড়তে রাজি নন তিনি। বরং মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী বা নেহরু যে কংগ্রেস বা গাঁধী পরিবারের একার সম্পদ নন, সেই বক্তব্যকে তুলে ধরতে প্রথম থেকেই রণকৌশল নেন মোদী। নেহরুর মতো ব্যক্তিত্বরা যে কোনও পরিবারের কুক্ষিগত সম্পদ নন, এই বার্তা আজ জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে দিয়েছেন রাজনাথ সিংহও। নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে রাজনাথ বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ে নেহরুর সঙ্গে নীতিগত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। আজ এই গণতন্ত্রের জন্যই এক চা-বিক্রেতা প্রধানমন্ত্রীর পদে।” অবশ্য এ নিয়ে কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের কটাক্ষ, “নেহরু গোটা দেশের মানুষের। কিন্তু এটাও দেখতে হবে কারা তাঁর দর্শনকে আত্মস্থ করতে পেরেছে।”
শুধু কী অনুষ্ঠান! সেখানকার উপস্থিতি-অনুপস্থিতি ঘিরেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কংগ্রেস আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যেমন প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানায়নি, তেমনি আজ সংস্কৃতি মন্ত্রকের আয়োজিত নেহরু মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন গাঁধী পরিবারের সদস্যরা। যদিও সংস্কৃতি মন্ত্রক দাবি করেছে, গাঁধী পরিবারকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন মল্লিকার্জ্জুন খার্গে। তবে সংসদ ভবনে নেহরুর প্রতিকৃতিতে মালা দেওয়ার সময়ে রাজনাথ সিংহ ও অরুণ জেটলির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-ও।
প্রশ্ন হচ্ছে, লোকসভার প্রচারে নেমে নেহরুকে আক্রমণ, সরকারে এসে তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত যোজনা কমিশনকে কার্যত ভেঙে দিয়েছেন মোদী। বদলে ফেলা হয়েছে নেহরুর নামে থাকা সরকারি প্রকল্পের নামও। তার পরেও জন্মবার্ষিকী পালনে সরকারের এত আগ্রহ কেন? অনেকেই মনে করছেন, ঘোর দুর্দিনে কংগ্রেস যখন নেহরুর আদর্শকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া, তখন সনিয়া-রাহুলকে সেই পরিসরটুকুও দিতে চাইছেন না মোদী। বরং তিনি চাইছেন নেহরু ও গাঁধীর ছবিকে সামনে রেখে গোটা দেশে উদারমনস্ক মানুষদের সামনে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে। তাঁর কৌশল কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে।