দেশের আর্থিক হাল নিয়ে আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতের হুঁশিয়ারির পরেই নড়েচড়ে বসেছে গোটা নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর আজ দিল্লিতে আর্থিক বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে সরসঙ্ঘচালক ভাগবতের বৈঠকের আগেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জানালেন, জনসঙ্ঘের ‘ভারতীয় মডেল’ই মোদীর উন্নয়নের পথ।
বিজয়া দশমীর বক্তৃতায় ভাগবত দেশের নিম্নমুখী অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আজ সন্ধেয় তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অধ্যাপক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানেও দেশের আর্থিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সরসঙ্ঘচালক। কী করে এটিকে পথে আনা যায়, সে ব্যাপারে মতামত চান তাঁদের।
বিজয়া দশমীর বক্তৃতায় ভাগবত নিজেও দেশের আর্থিক পরিস্থিতি শোধরানোর জায়গাগুলি দেখিয়ে দিয়েছেন চোখে আঙুল দিয়ে। এর পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অর্থনীতি নিয়ে সবিস্তার মুখ খুলতে হয়। আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে নতুন করে ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অমিত শাহ, অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠক করে নতুন আর্থিক দাওয়াইয়ের নকশাও তৈরি করেছেন মোদী। কারণ, গুজরাতে নির্বাচন সামনে। তার আগে দেশের আর্থিক হাল নিয়ে উদ্বেগ আছে মোদী-অমিতদেরও।
বিজেপি সভাপতি আজ সঙ্ঘ ও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে এক দীর্ঘ ব্লগ লিখে বোঝাতে চেয়েছেন, জনসঙ্ঘের পথেই উন্নয়ন করছেন নরেন্দ্র মোদী। পাশ্চাত্য মডেলের বিরোধিতা করে উন্নয়নের ‘ভারতীয় মডেল’-এর ভিত্তিতেই জন্ম হয়েছিল জনসঙ্ঘের। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকলেও বিজেপিও সেই পথই অনুসরণ করে এসেছে। বিশেষ করে আদিবাসী, দলিত এলাকায়। যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করা হলেও স্থানীয় মানুষদের উপেক্ষা করা হয়েছে এত দিন। মোদী জমানায় আইন সংশোধন করে তাদের সুরাহা দেওয়া হচ্ছে। ঠিক যে ভাবে সঙ্ঘের ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’ কাজ করে আসছে।
ইউপিএ জমানায় এই আদিবাসী এলাকায় বিশেষ জোর দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। মোদী জমানায় রাহুল গাঁধী এই এলাকাগুলিতে সফর করে বর্তমান সরকারের উপেক্ষা বারবার মেলে ধরেছেন। তাঁর অভিযোগ, স্যুট-বুটের সরকার এই প্রান্তিক মানুষদের জন্য কিছু করে না। অমিত শাহ আজ কংগ্রেসের বিরোধিতারও জবাব দিতে চাইলেন। একই সঙ্গে ভোটমুখী গুজরাতে আদিবাসী, দলিতদের উন্নয়নের প্রসঙ্গও তুললেন। তবে সঙ্ঘও যে ভাবে সরকারের বিরোধিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে, সেটিও নিরস্ত্র করতে চাইলেন।
সঙ্ঘ-প্রধান ভাগবত গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকজনের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে বৈঠক করে জনমত তৈরি করছেন। এতে সমাজের বিভিন্ন অংশের মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে অসন্তোষের চাপ কিছুটা কমিয়ে আনা এবং সরকারকে তার খামতিগুলি দূর করতে উদ্বুদ্ধ করা— এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব হচ্ছে।