দাদরি বার্ষিকীতেই মুসলিম মহল্লায় ড্যামেজ কন্ট্রোল

দাদরির ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় এ বারে সংখ্যালঘুদের মন জয়ের অভিযানে নামল কেন্দ্র। কাল থেকে দেশের সংখ্যালঘুবহুল এলাকায় ৫০০টি ‘উন্নতি পঞ্চায়েত’ করতে নামছে মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:৫২
Share:

কোঝিকোড়ের সম্মেলনেই প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের কাছে টানার ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।—ফাইল চিত্র।

দাদরির ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় এ বারে সংখ্যালঘুদের মন জয়ের অভিযানে নামল কেন্দ্র। কাল থেকে দেশের সংখ্যালঘুবহুল এলাকায় ৫০০টি ‘উন্নতি পঞ্চায়েত’ করতে নামছে মোদী সরকার।

Advertisement

ঠিক এক বছর আগে এই ২৮ সেপ্টেম্বরেই বাড়িতে গোমাংস রাখার গুজবের ভিত্তিতে ৫০ বছরের মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে খুন করা হয় উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও দোষীদের এখনও কোনও সাজা হয়নি। সামনে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন, দু’বছরের মাথায় লোকসভায় মোদীর ফের অগ্নিপরীক্ষা। সংখ্যালঘুরা যাতে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে না যায়, সে জন্যই গত রবিবার কোঝিকোড়ে দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আকস্মিক ভাবেই টেনে আনেন সংখ্যালঘুদের কাছে টানার প্রসঙ্গ। আর তার পরেই কেন্দ্রের সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি আজ ঘোষণা করেন, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের নানা প্রান্তে শুরু হচ্ছে ‘উন্নতি পঞ্চায়েত।’ ওই দিনই প্রথম পঞ্চায়েতটি বসছে বিজেপিশাসিত হরিয়ানার মেওয়াটে। তার পরেরটি হবে আগামী ৬ অক্টোবর রাজস্থানের আলওয়াড়ে।

এই ‘উন্নতি পঞ্চায়েত’ হবে কী ভাবে?

Advertisement

কেন্দ্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের মতে, দেশের ৯০টি জেলা ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেখা হচ্ছে, কোন কোন এলাকায় সংখ্যালঘুদের জনবসতি ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি। সেই সব এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে দফায় দফায় পঞ্চায়েত বসানো হবে। খোদ মন্ত্রী নিজে তো থাকবেনই, অন্য মন্ত্রীরাও সেখানে যোগ দেবেন প্রয়োজন অনুসারে। একে বারে নিচুতলায় পঞ্চায়েত বসিয়ে যেমন শোনা হবে তাঁদের সমস্যার কথা, তেমনই সংখ্যালঘুদের জন্য মোদী সরকারের নানান প্রকল্প থাকলেও তা কেন ঠিক মতো পৌঁছচ্ছে না, সেটিও বোঝার চেষ্টা করবে কেন্দ্র। সেই মোতাবেক দূর করা হবে প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে বাধা।

আরও পড়ুন: পুজো স্পেশ্যাল বাঙালি ফিউশন রেসিপি: আনন্দ উৎসবে

কিন্তু, উন্নয়নের মোড়কে সরকারের আড়াই বছরের মাথায় এ ভাবে সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পিছনে রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই দেখছে না বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা মিম আফজল বলেন, ‘‘মোদী সরকারের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন নিয়ে এখন টনক নড়ছে। এর অর্থই হল, সরকার কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছে, গত আড়াই বছরে তারা সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। এখন ভোটের কথা মাথায় রেখে তারা উঠেপড়ে নামতে চাইছে।’’ কিন্তু নকভি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুরা আদৌ আমাদের কাছে ভোটব্যাঙ্ক নন। বিরোধী দলগুলোই এত দিন সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। উন্নয়নের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ। কেন্দ্রের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল সংখ্যালঘুরা কী করে পেতে পারেন, তা বোঝানো হবে।’’

কোঝিকোড়ের সম্মেলনেই প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের কাছে টানার ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের না পুরস্কৃত করা উচিত, না তিরস্কৃত করা উচিত। তাঁদের ক্ষমতায়ন করা দরকার। তাঁরা ভোট বাজারের সামগ্রী নন, ঘৃণার পাত্রও নন। তাঁদের নিজেদের লোক বোঝা উচিত।’’ বিজেপির আশঙ্কা, দাদরির ঘটনা থেকে যে ভাবে দেশের নানা প্রান্তে দলিত-সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা বেড়েছে, তাতে দলের ভাবমূর্তিতে আঁচ ফেলেছে। তার উপর সম্প্রতি পাকিস্তান নিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের মহলে যাতে সংখ্যালঘুরা ‘দলছুট’ মনে না করেন, সে জন্য তাঁদের আরও কাছে পৌঁছনো প্রয়োজন। সংখ্যালঘুদের ভোট বিজেপি না পাক, অন্তত তাঁরা যাতে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট না হয়, সেটাই চেষ্টা শাসক দলের। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন তাঁদের কাছেই সরাসরি পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন