মন্দির-তর্ক রেখেই লোকসভা ভোটে যেতে চান মোদী

সুপ্রিম কোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে রামমন্দির প্রসঙ্গকে জিইয়ে রেখেই লোকসভা ভোটে যেতে চান নরেন্দ্র মোদী। সঙ্ঘ বলল, এই সরকারই মন্দির বানাক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৫
Share:

সুপ্রিম কোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে রামমন্দির প্রসঙ্গকে জিইয়ে রেখেই লোকসভা ভোটে যেতে চান নরেন্দ্র মোদী। সঙ্ঘ বলল, এই সরকারই মন্দির বানাক।

Advertisement

সঙ্ঘ পরিবার আগেও বলেছে, ভোটের আগেই অযোধ্যায় রামমন্দির চাই। তার জন্য আইন বা অধ্যাদেশ আনুক মোদী সরকার। সাধু-সন্তরাও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তেমনই ‘আদেশ’ দেন। কিন্তু আজ এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন, সুপ্রিম কোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার কোনও পদক্ষেপ করবে না। তিন তালাকের সময়েও সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পরেই সরকার এই বিষয়ে পদক্ষেপ করেছিল।

সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির দায় অবশ্য কংগ্রেসের ঘাড়েই ঠেলেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, তারা যেন আইনজীবীদের দিয়ে আদালতে বাধা সৃষ্টি না করে। শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে এটা জরুরি।’’ অনেক দিন ধরেই বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ অভিযোগ করে আসছে, কপিল সিব্বলদের মতো কংগ্রেসের আইনজীবী নেতারাই রামমন্দির মামলায় বাধা তৈরি করছেন। তিনিই এই মামলার শুনানি ২০১৯ সালের পরে করার কথা বলেছিলেন।

Advertisement

প্রশ্ন হল, আরএসএস বা সঙ্ঘ পরিবার এ বার কী অবস্থান নেবে? কারণ, সাধু-সন্তদের একটি অংশ মোদীর সুরে সুর মিলিয়েই বলে আসছিলেন, ‘‘মন্দিরও চাই, মোদীও চাই।’’ সম্প্রতি মন্দির নির্মাণের দাবিতে দিল্লির রামলীলা ময়দানে সন্তদের আন্দোলনের অধুনা পুরোধা রামানন্দচার্য হংসদেবাচার্য মহারাজ বলেন, ‘‘প্রতিজ্ঞা করুন, যত দিন না নরেন্দ্র মোদী মন্দির বানাচ্ছেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরতে দেব না।’’ যার অর্থ, লোকসভা ভোটের আগে মন্দির না বানিয়ে তার সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেই ফের ভোট চাওয়া।

কিন্তু একই সময়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সাক্ষী প্রবীণ সাধু পরমানন্দ মহারাজ বলে বসেন, ‘‘আমি চামচা নই। এমন হলে তো কুর্সিতে জমিয়ে বসে থাকার জন্য মন্দির তৈরিতে আরও দেরি করবেন মোদী!’’

মোদী আজ তেমনই ইঙ্গিত দিলেন। মোদীর সাক্ষাৎকারের পরই আরএসএস ভারসাম্য রেখে বলে, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মন্দির নির্মাণে ইতিবাচক দিশা রয়েছে। পালমপুর অধিবেশনেই বিজেপি মন্দির নির্মাণে পারস্পরিক আলোচনা ও আইনের চেষ্টার কথা বলেছে।’’

কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেই সঙ্ঘনেতা দত্তাত্রেয় হোসবোলে বিবৃতি দেন, ‘‘২০১৪ সালে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের জন্য সংবিধানের পরিধিতে থেকে সব রকম চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। মোদীর উপরে বিশ্বাস রেখেই ভারতবাসী বিজেপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। এই সরকারই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে বলে তারা আশা করে।’’ সঙ্ঘের দু’নম্বর নেতা ভাইয়াজি জোশীও বলেন, ‘‘আইন তৈরির দাবিতে অনড়ই থাকছি আমরা। কারণ প্রত্যেক দেশবাসী চান মন্দির হোক। এমনকি, যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন তাঁরাও।’’

বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়েও প্রায় পাঁচ বছরে কোনও পদক্ষেপ না করার জন্য সঙ্ঘ পরিবারের রোষের কথাও স্মরণ করাল আরএসএস। কাল বিশ্ব হিন্দু পরিষদও সাংবাদিক বৈঠক করবে। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে কয়েক মাস ধরেই মন্দির নির্মাণের দাবিতে সরব রয়েছেন। আজ শিবসেনা বলে, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট, রামমন্দির তাদের অগ্রাধিকারই নয়।’’ সিব্বল বলেন, ‘‘মোদী যে ভাবে কথা বললেন, তাতে তো সুপ্রিম কোর্টকেই বার্তা দিতে চাইছেন, দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হোক।’’ কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় সকলে মানবে। তার পর আর অধ্যাদেশের কী প্রয়োজন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন