বাধা প্রকৃতিও, শবরীমালায় ঢোকা হল না মঞ্জুর

যাবতীয় বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজই শবরীমালার ইতিহাস পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন আটত্রিশ বছরের মঞ্জু।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শবরীমালা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২০
Share:

মন্দির চত্বরে মহিলা পুলিশ। এপি

যাবতীয় বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজই শবরীমালার ইতিহাস পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন আটত্রিশ বছরের মঞ্জু। কিন্তু আয়াপ্পা ভক্তদের বিক্ষোভের মুখে পড়ার আগেই বাধা হয়ে দাঁড়াল প্রকৃতি। কেরলের বাসিন্দা, ‘কেরল দলিত মহিলা ফেডারেশন’-এর সভাপতি মঞ্জু আজ পাম্বা বেস ক্যাম্প থেকে হাঁটা শুরু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল, পাহাড়ের উপর আয়াপ্পার মূল বিগ্রহ দর্শন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে আজ বিকেলের দিকেই পাহাড়ে ওঠা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পরে প্রথা মতো গত বুধবারই পাঁচ দিনের জন্য খুলেছে শবরীমালার মন্দির। কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায় মেনে এখনও পর্যন্ত কোনও ঋতুমতী মহিলা ভক্ত মন্দিরের মূল ফটক পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। কখনও আয়াপ্পা ভক্তদের বিরোধিতায় মূল মন্দিরের ৫০০ মিটার দূর থেকে দুই মহিলাকে ফিরে আসতে হয়েছে। কখনও মার খেয়েছেন মহিলা সাংবাদিকেরা। এর মধ্যেই গত কাল মন্দিরের প্রধান পুরোহিত কন্দ্রারু রাজীভারু জানিয়েছেন, ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি কোনও মহিলা আয়াপ্পার বিগ্রহ দর্শন করতে পারবেন না। এর অন্যথা হলে মন্দির বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন তিনি। আবার কিছু মহিলা ভক্ত দাবি করেছেন, পুলিশই নিরাপত্তা দিতে পারবে না জানিয়ে তাঁদের মন্দিরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

যদিও কেরলের আই জি এস শ্রীজিৎ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যে মহিলা ভক্তেরা পাহাড়ে ট্রেক করে মূল মন্দির পর্যন্ত পৌঁছতে চাইছেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশেরই। তবে সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘দর্শনের বিষয়টা পুরোপুরি মন্দিরের পুরোহিতের উপর নির্ভর করছে।’’ একই ভাবে শবরীমালা মন্দিরের ঐতিহ্যের পাশে আজ দাঁড়িয়েছেন দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্ত। সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে আজ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। যার জবাবে রজনীকান্ত বলেছেন, ‘‘সব মন্দিরেরই নিজস্ব কিছু রীতি, ঐতিহ্য রয়েছে। এত বছর ধরে চলা সেই ঐতিহ্যে অন্য কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, দেশের শীর্ষ আদালতের রায়কে অমর্যাদা করাটাও উচিত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি যখন মন্দির, তখন আরও অনেক বেশি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন।’’

Advertisement

আজও শবরীমালায় জারি ছিল ১৪৪ ধারা। তার মধ্যে এক মহিলা ভক্তের মন্দিরে ঢোকা নিয়ে বিস্তর গোলমাল বাধে সকালে। পঞ্চাশ পেরোনো প্রৌঢ়া লতা ত্রিচি থেকে এসেছিলেন আয়াপ্পা দর্শনে। কিন্তু তাঁর বয়স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মন্দিরের মূল ফটকের অদূরে দাঁড়ানো কিছু বিক্ষোভকারী। শেষমেশ বয়সের প্রমাণপত্র দেখিয়ে মন্দিরে ঢুকতে পান লতা। আয়াপ্পা দর্শন সেরে বেরিয়ে চোখে জল লতার। বললেন, ‘‘গত বছরও আমি আয়াপ্পাকে দর্শন করে গিয়েছি। এ বার ঢুকতে না পারলে খুবই খারাপ লাগত।’’ লতার সঙ্গেই আজ সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছে ন’বছরের এক বালিকা। তামিলনাড়ুর মাদুরাই থেকে পরিবারের সঙ্গে মন্দির দর্শন করতে এসেছিল জননী নামে ওই বালিকা। তার হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, তার বয়স পঞ্চাশ পেরেলো তবেই ফের এই মন্দির দর্শনে আসবে সে। জননীর বাবা আর সতীশ কুমার বললেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের কী নির্দেশ তা জানি না। এটুকু বলতে পারি, আমার মেয়ের বয়স দশ পেরোলে তার আর এই মন্দিরে না ঢোকাই ভাল, যত ক্ষণ না পর্যন্ত সে পঞ্চাশ পেরোচ্ছে। আমরা আমাদের আয়াপ্পাকে খুব ভালবাসি।’’

মহিলা ভক্তদের হেনস্থায় ধৃত আন্দোলনকারী রাহুল ঈশ্বরকে আজ জামিন দিতে অস্বীকার করেছে স্থানীয় এক আদালত। গত বুধবার নীলাক্কল বেস ক্যাম্পে কিছু মহিলার উপর আক্রমণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। যদিও রাহুলের দাবি, সব অভিযোগ মিথ্যে।

গত কাল মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন বছর ছেচল্লিশের মডেল তথা সমাজকর্মী রেহানা ফতিমা। বিক্ষোভকারীদের প্রবল বাধায় আয়াপ্পা দর্শন করতে পারেননি তিনি। পুলিশ আজ জানিয়েছে, কাল তিনি যখন পাহাড় বেয়ে মন্দিরে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন, ঠিক সেই সময় হামলা চলে তাঁর বাড়িতে। কয়েক জন দুষ্কৃতী বাড়ি ঢুকে সব তছনছ করে দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন