Narendra Modi-Naveen Patnaik-Y. S. Jagan Mohan Reddy

এক ফোনেই মত বদলে মোদীর পাশে নবীন-জগন, অধ্যাদেশ বিলে সমর্থন

বিজু জনতা দল এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস দু’সপ্তাহ আগে আম আদমি পার্টিকে কথা দিয়েছিল, তারা রাজ্যসভায় দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিলে বিরোধীদের পাশে থাকবে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১২
Share:

(বাঁ দিক থেকে ডান দিক) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি। —ফাইল চিত্র।

এক ফোনেই অবস্থান বদল!

Advertisement

বিজু জনতা দল এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস দু’সপ্তাহ আগেও আম আদমি পার্টিকে কথা দিয়েছিল, তারা রাজ্যসভায় দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিলে বিরোধীদের পাশে থাকবে। সরাসরি বিরোধীদের পক্ষে ভোট না দিলেও কেউ ভোটাভুটিতে অংশ না নিয়ে, কেউ ওয়াক-আউট করে বিরোধীদের সুবিধা করে দেবে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মোদী সরকারের এক শীর্ষব্যক্তি নিজে বিজু জনতা দল এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দল, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে সরাসরি দিল্লি অধ্যাদেশে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কেন দিল্লির অধ্যাদেশ সংক্রান্ত বিলে সমর্থন জোগাড় করতে মোদী সরকারের শীর্ষস্তর থেকে বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধানদের কাছে ফোন গিয়েছিল? রাজনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, অরবিন্দ কেজরীওয়াল চেয়েছিলেন, সব বিরোধী জোটকে এককাট্টা করে রাজ্যসভায় মোদী সরকারের দিল্লি অধ্যাদেশ সংক্রান্ত বিলকে আটকে দিতে। সত্যি সত্যিই রাজ্যসভায় মোদী সরকারের বিল আটকে গেলে ‘ইন্ডিয়া’ জোট একে নিজেদের রাজনৈতিক জয় বলে দাবি করত। কেজরীওয়াল রাজ্যসভায় এই বিল আটকানোর লড়াইকে লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল আখ্যা দিয়েছিলেন। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সব দলের সমর্থন চাইতে রাজ্যে রাজ্যে ঘুরেছিলেন। সব আঞ্চলিক দলের পাশাপাশি কংগ্রেসও শত্রুতা সরিয়ে রেখে কেজরীওয়ালের অনুরোধে বিলের বিরোধিতার আশ্বাস দেয়। ‘ইন্ডিয়া’ জোটে না থাকলেও তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল বিআরএস অধ্যাদেশ বিলে আম আদমি পার্টির আহ্বানে সাড়া দেয়। এর ফলে রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে হারের আশঙ্কা ছিল মোদী সরকারের। তা হলে লোকসভা ভোটের আগে কিছুটা হলেও ধাক্কা খেত বিজেপি।

Advertisement

সূত্রের খবর, পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই মোদী সরকারের এক শীর্ষব্যক্তি নিজে ফোন করে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতানেত্রীদের সমর্থন চান। তার পরেই নবীন পট্টনায়ক, জগন্মোহনেরা বিলে মোদী সরকারকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন। অথচ তার আগে পর্যন্ত বিজু জনতা দল আম আদমি পার্টিকে জানিয়েছিল, তাঁরা বিল পাশের সময় ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন না। ওয়াইএসআর কংগ্রেস ওয়াক-আউট করবে বলে জানিয়েছিল। ওই ফোনের সুবাদে চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশমও বিলে মোদী সরকারকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে।

দিল্লির সরকারের আমলাদের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, কেন্দ্র না কেজরীওয়ালের সরকার, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেজরীওয়াল সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছিল। শীর্ষ আদালতের সেই রায়কে নাকচ করে মোদী সরকার নিজের হাতে আমলাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে অধ্যাদেশ জারি করে। সেই অধ্যাদেশকে পাকাপাকি আইন করতেই সংসদে বিল এনেছে কেন্দ্র। লোকসভায় বিজেপির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে বিলটি আগেই পাশ হয়ে গিয়েছে। সোমবার তা রাজ্যসভায় আসবে। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “হারি, জিতি বা ড্র হোক, আমরা রাজ্যসভায় ভোটাভুটি চাইব। গোটা দেশ দেখুক, কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে? কে সংবিধানের পক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে, আর কে বিজেপির সঙ্গে আপস করছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

রাজ্যসভায় এখন ২৩৮ জন সাংসদ রয়েছেন। তার মধ্যে দু’জন সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন। কংগ্রেসের রজনী পাটিল ও আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংহ। রজনীর সাসপেনশন সোমবার প্রত্যাহার হতে পারে। ২৩৭ জন ভোট দিলে বিল পাশ করাতে ১১৯ জনের ভোট দরকার। বিজু জনতা দলের ৯ জন, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ৯ জনের সমর্থন নিয়ে এনডিএ ১২৯টি ভোট পেতে পারে। উল্টো দিকে ইন্ডিয়া জোট, বিআরএস মিলে বিলের বিরুদ্ধে ১১৩টি ভোট পড়তে পারে। নবীন, জগন্মোহনরা বিরোধীদের হয়ে ভোট দিলে খেলা ঘুরে যেত।

বিরোধীরা বলছেন, দিল্লির অধ্যাদেশ সংক্রান্ত বিলে বলা হয়েছে, আমলাদের নিয়োগ, বদলি করবে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল সিভিল সার্ভিস অথরিটি। সেখানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব থাকবেন। যে দু’জনকে নিয়োগ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। দু’জন চাইলে সংখ্যার জোরে মুখ্যমন্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর মত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হলে কেন্দ্রের নিযুক্ত উপরাজ্যপাল তা খারিজ করে দিতে পারেন। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, “যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর থেকে আমলাদের মত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিলে কী ভাবে ওড়িশা, অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীরা সমর্থন করতে পারেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন