পুরীর জগন্নাথ মন্দির
রথযাত্রার প্রাক্কালে পুরীর মন্দিরের কর্মকর্তাদের চাঙ্গা করতে এমন বৈঠক আগেও করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ বার সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি খানিক জটিল ছিল।
পুরীর গোপবন্ধু আয়ুর্বেদিক মহাবিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাখানেক জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েতদের অভিমান কাটাতেই কার্যত মনোযোগ দিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। সেবায়েতদের সঙ্গে সরকারি কর্তাদের খিটিমিটি চলছে কয়েক মাস ধরে। সেবায়েতদের একাংশের দক্ষিণার জুলুমে ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্টও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রথম সারির সচিব, মন্দিরের পোড়খাওয়া সেবায়েতদের কয়েক জনকে নিয়ে বসে শক্ত হাতে রথযাত্রার আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার কথা বললেন নবীন। সেবায়েতদের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, রথযাত্রার পর্ব সুশৃঙ্খল ভাবে শেষ করতে সকলের সহযোগিতা চাই! রথযাত্রা পরের ১৪ জুলাই।
সেবায়েতদের ক্ষোভ-দুঃখের কথাও শুনবেন, আশ্বাস দিয়েছেন নবীন। ঠিক হয়েছে, বিক্ষুব্ধ সেবায়েতদের সঙ্গে নিয়ে রথের পরেই ভুবনেশ্বরে গিয়ে নবীনের সঙ্গে দেখা করবেন দয়িতাপতিদের সমিতি বা নিজোগের সভাপতি রামকৃষ্ণ দাস মহাপাত্র ওরফে রাজেশ দয়িতাপতি।
সেবায়েতদের তরফে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। তাতে মন্দিরের সাবেক পরম্পরা নিয়ে শীর্ষ আদালতের কিছু সুপারিশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশাধিকারে নিষেধ, সেবায়েতের বংশপরম্পরা থেকে শুরু করে মন্দিরের ভিতরে নানা উপলক্ষে দক্ষিণা আদায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। পুরীর মন্দির নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই সব প্রশ্ন তোলে সর্বোচ্চ আদালত। সেবায়েতরা চান না, মন্দিরের সাবেক রীতিতে হাত পড়ুক। পুরীর মন্দিরের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘তিরুপতির মন্দিরের মতো বংশানুক্রমিক সেবায়েত প্রথা তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। ১০ হাজার সেবায়েত আর কী ভাবে মিলবে! রথের পাহুণ্ডিতে জগন্নাথ-বলভদ্র-সুভদ্রাকে কোলে করে রথে বসানো থেকে নানা আচার-অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক সেবায়েত দরকার। শুধু মাইনেয় অত লোক পাওয়া যাবে না।’’ মন্দিরের মুখ্য প্রশাসনিক কর্তা প্রদীপ্তকুমার মহপাত্র আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটি এবং পান্ডাদের ৩৬টি সমিতি বা নিজোগের কর্তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ খতিয়ে দেখবে। আপাতত রথযাত্রার পর্ব ঠিকঠাক তরিয়ে দেওয়াই লক্ষ্য।’’ সর্বোচ্চ আদালতের পরবর্তী শুনানি ৫ সেপ্টেম্বর।
রথযাত্রার পথে এবং গোটা পুরী শহরেই রথযাত্রা নির্বিঘ্ন ভাবে সুসম্পন্ন করতে প্রচুর বাড়তি সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছে প্রশাসন। এক সরকারি কর্তা বলেন, ‘‘গুণ্ডিচা মন্দির, দেবকীর মাসুমা মন্দির-সহ নানা জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসবে। জগন্নাথদেবের অনশর বা অসুস্থতার সময়ে প্রভুর ‘প্রাইভেসি’র জন্য জগমোহন ও গর্ভগৃহের মাঝখানে ভিতরকাঠে সিসি ক্যামেরা সরানো হয়েছে। তা-ও ফিরিয়ে আনা হবে।’’ এ ছাড়া রথের সময়ে বিগ্রহহীন মন্দিরে গর্ভগৃহ, নাটমণ্ডপ, জগমোহনের মতো কয়েকটি অংশ পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কর্তারা খতিয়ে দেখবেন বলে ঠিক হয়েছে। মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা প্রদীপ্তবাবু বলেন, ‘‘মন্দিরের ওই অংশে জনসমাগম হয় বলে নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সেগুলির সংস্কারে জোর দিচ্ছি।’’