Farmer’s Suicide NCRB Report

দেশে এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক ও কৃষিশ্রমিক! বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট, সবচেয়ে বেশি কোন কোন রাজ্যে?

এনসিআরবির রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে দেশে কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত মোট ১০,৭৮৬ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে ৪,৬৯০ জন কৃষক এবং ৬,০৯৬ জন কৃষিশ্রমিক। যা দেশের মোট আত্মহত্যার সংখ্যা (১,৭১,৪১৮)-র ৬.৩ শতাংশ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:১২
Share:

দেশে এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক ও কৃষিশ্রমিক। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

মাত্র এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন দেশের ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক ও কৃষিশ্রমিক— যা দেশের মোট আত্মহত্যার ৬ শতাংশ! এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। পিছিয়ে নেই কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশও। কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যার নিরিখে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে এই দুই রাজ্য। অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’ (এনসিআরবি)-র ২০২৩ সালের অপরাধমূলক বার্ষিক পরিসংখ্যান সংক্রান্ত রিপোর্টে এ বার এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

এনসিআরবির রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে দেশে কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত মোট ১০,৭৮৬ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে ৪,৬৯০ জন কৃষক এবং ৬,০৯৬ জন কৃষিশ্রমিক। যা দেশের মোট আত্মহত্যার সংখ্যা (১,৭১,৪১৮)-র ৬.৩ শতাংশ। এই ৪,৬৯০ জন কৃষকের মধ্যে ৪,৫৫৩ জন পুরুষ, ১৩৭ জন মহিলা। আর নিহত ৬,০৯৬ জন কৃষিশ্রমিকের মধ্যে ৫,৪৩৩ জন পুরুষ এবং ৬৬৩ জন মহিলা আত্মহত্যা করেছেন। তবে, সামান্য আশার বিষয় এই যে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এই ধরনের আত্মহত্যার সংখ্যা অন্তত ৪ শতাংশ কমেছে। ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন মোট ১১,২৯০ জন কৃষক। সেই তুলনায় ২০২৩ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা খানিক কমেছে।

দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে (৪,১৫১), যা কৃষিক্ষেত্রে মোট আত্মহত্যার ৩৮ শতাংশেরও বেশি। এর পরেই রয়েছে কর্নাটক (২,৪২৩), অন্ধ্রপ্রদেশ (৯২৫), মধ্যপ্রদেশ (৭৭৭) এবং তামিলনাড়ু (৬৩১)। মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকে কৃষিশ্রমিকদের তুলনায় কৃষকদের আত্মহত্যার হার বেশি। অন্য দিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে আত্মহত্যায় এগিয়ে রয়েছেন কৃষিশ্রমিকেরা।

Advertisement

সাধারণত, কৃষিক্ষেত্রে আত্মহত্যাকে দু’টি পৃথক শ্রেণিতে ভাগ করে থাকে এনসিআরবি। এর মধ্যে একটি হল কৃষক আত্মহত্যা, যাঁরা কৃষিশ্রমিকদের সাহায্যে কিংবা তাঁদের সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব জমিতে চাষ করেন। দ্বিতীয়টি হল, কৃষিশ্রমিক আত্মহত্যা, অর্থাৎ যাঁরা মূলত অন্যের জমিতে কাজ করেন এবং যাঁদের আয়ের প্রধান উৎস কৃষিশ্রম। এই দুই মিলিয়েই ২০২৩ সালের তালিকায় শীর্ষ দু’টি স্থান দখল করেছে মহারাষ্ট্র ও কর্নাটক। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালেও দেশে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের আত্মহত্যার নিরিখে এগিয়ে ছিল এই দুই রাজ্য। ফলে পর পর দু’বছর একই পরিসংখ্যানকে বেশ উদ্বেগজনক বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কৃষকদের দুর্দশার অন্যতম কারণ তুলো কিংবা আখের মতো অর্থকরী ফসলের উপর নির্ভরশীলতা। কারণ, এই ধরনের ফসল চাষের জন্য প্রথমেই মোটা অঙ্কের বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। ফলে এলাকার মহাজনদের উপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের। মাথায় চাপে ঋণের বোঝা, সঙ্গে চড়া সুদের হার। এত করেও শেষমেশ ফলন আশানুরূপ না হলে প্রায়শই চরম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হন কৃষকেরা। সুলভে শস্যঋণ, কৃষক আয় সহায়তা (পিএম-কিসান) প্রকল্প এবং সাশ্রয়ী মূল্যের শস্য বিমায় কৃষকদের কিঞ্চিৎ সাহায্য হলেও তাতে চিত্রটা যে বিশেষ বদলায়নি, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। সঙ্গে রয়েছে উচ্চ উৎপাদন ব্যয় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো নানা প্রতিকূলতা। তবে দেশের কিছু কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যেমন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, মণিপুর, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, চণ্ডীগড়, দিল্লি এবং লাক্ষাদ্বীপে ২০২৩ সালে কৃষিক্ষেত্রে কোনও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে এনসিআরবি-র রিপোর্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement