কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। —ফাইল ছবি।
‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। অভিযানের পর যাঁরা সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে ভারতীয় সেনার কৃতিত্ব তুলে ধরছিলেন জনসমক্ষে, তাঁদের মধ্যেও অন্যতম। ভারতীয় সেনার সেই কর্নেল সোফিয়া কুরেশির উদ্দেশে বিতর্কিত মন্তব্য করে বিপাকে বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ। তাঁর সেই ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করল জাতীয় মহিলা কমিশন।
কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রহাটকর অবশ্য কারও নাম করেননি। কিন্তু এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখে অনেকেই মনে করছেন, তা মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই লেখা। রহাটকর এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে লিখেছেন, ‘‘এটা অত্যন্তই দুর্ভাগ্যজনক যে, কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি নারীদের প্রতি এমন অবমাননাকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এটি শুধু নারীদের মর্যাদাকেই আঘাত করে না, দেশের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সেই সব কন্যারও অপমান।’’
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের সংযোজন, ‘‘কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে গোটা দেশ গর্বিত। উনি সফল ভারতীয় বোন, যিনি সাহস এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন। ওঁর মতো সাহসী মহিলার জন্য গোটা দেশ গর্বিত এবং ওঁর বিরুদ্ধে এ রকম অবমাননাকর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করা উচিত।’’
প্রসঙ্গত, বিজেপির মন্ত্রী বিজয় বলেছেন, ‘‘যারা আমাদের মা-মেয়ের সিঁদুর মুছে দিয়েছে, তাদের বোনকেই ব্যবহার করে হামলাকারীদের শায়েস্তা করেছি। ওরা (জঙ্গিরা) পোশাক খুলিয়ে বেছে বেছে হিন্দুদের মেরেছে। আর মোদীজি ওদের বোনকে দিয়েই উচিত শিক্ষা দিয়ে দিয়েছেন। মোদীজি তো আর ওদের মতো ব্যবহার করতে পারেন না। তাই ওদের সম্প্রদায়ের বোনকে দিয়েই ওদের বারোটা বাজিয়েছেন।’’
বিজয়ের ওই মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস। বিতর্কের মুখে বিজয় বলেন, ‘‘আমার কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তা হলে ১০ বার ক্ষমা চাইতেও রাজি আমি।’’
ভারতীয় সেনার সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স অভিযান সহায়ক শাখা সিগন্যাল কর্পসের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক সোফিয়া। ৩৫ বছরের এই অফিসার সেনাবাহিনীর একাধিক যুগান্তকারী সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৬ সালে তিনি প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। ওই বছর ১৮টি দেশের সামনে ভারতের সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। প্রথম মহিলা হিসাবে এই কৃতিত্ব তিনি অর্জন করেন। সে সময়ে সোফিয়া ছিলেন লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল। পুণের ওই সামরিক মহড়া ছিল ভারতে আয়োজিত সবচেয়ে বড় বিদেশি সামরিক মহড়া। ২ থেকে ৮ মার্চের মহড়ায় যোগ দিয়েছিল জাপান, চিন, আমেরিকা, রাশিয়ার মতো দেশ। আর কোনও দেশের মহড়ার নেতৃত্বে মহিলা ছিলেন না।
৪০ সদস্যের ভারতীয় সেনাদলকে মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। মহড়ার লক্ষ্য ছিল শান্তিরক্ষার অভিযান। এই মহড়ায় নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনি নেতৃত্ব অর্জন করেছিলেন। শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত কাজে সোফিয়ার অভিজ্ঞতাও অনেক। ২০০৬ সালে কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা অভিযানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। সোফিয়ার পরিবারেও সেনাবাহিনীর ইতিহাস রয়েছে। তাঁর ঠাকুরদা ভারতীয় সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেনার পরিবারেই তাঁর বিয়ে হয়েছে।