শ্মশান কালীমন্দিরে নয়া কমিটি নীহারেন্দ্রর

এ বার বিতর্ক দেখা দিল শিলচরের শ্মশান কালীমন্দির পরিচালন সমিতি গঠন ঘিরে। বিতর্ক দানা বেঁধেছে কালীপূজা নিয়েও। পুরসভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরের অভিযোগ, বার বার বলার পরও পুরনো কমিটি হিসেব দেয়নি। গত কাল তাই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share:

এ বার বিতর্ক দেখা দিল শিলচরের শ্মশান কালীমন্দির পরিচালন সমিতি গঠন ঘিরে। বিতর্ক দানা বেঁধেছে কালীপূজা নিয়েও।

Advertisement

পুরসভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরের অভিযোগ, বার বার বলার পরও পুরনো কমিটি হিসেব দেয়নি। গত কাল তাই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে বিদায়ী কর্মকর্তাদের বক্তব্য, শহরের নাগরিকদের না ডেকে নীহারবাবু নিজের ইচ্ছামতো তিন বছরের জন্য কমিটি গড়েছেন। রেওয়াজ ভেঙে স্থায়ী কমিটির হাতেই কালীপূজার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন।

নীহারবাবু জানান, শিলচরের শ্মশানঘাট ও তার ভিতরে থাকা কালীমন্দিরটি পুরসভা পরিচালিত। পুরসভাই কালীমন্দির দেখভালের জন্য তিন বছরের স্থায়ী কমিটি তৈরি করে। কালীপূজার জন্য তৈরি করা হয় পৃথক কমিটি। পদাধিকারবলে পুরসভাপতি দুই কমিটিরই সভাপতি। তাঁর বক্তব্য— তিন বছর আগে যখন কমিটি তৈরি হয়, তখন সভাপতি ছিলেন সুস্মিতা দেব। তিনি পুরপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সভাপতির দায়িত্বও লাভ করেন। কিন্তু পুরনো কর্মকর্তাদের কাছে হিসেব চাইলে তাঁরা টালবাহানা শুরু করেন। পরে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেওয়ায় গত কাল একটি অডিট রিপোর্ট জমা দেন। তাতে ১২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫৬৫ টাকার ঘাটতি দেখানো হয়েছে।

Advertisement

গত কাল এ নিয়েই পুরসভার বর্ধিত বৈঠক ডাকা হয়। বিজেপি সদস্যরা নতুন কমিটি গঠনের জন্য সভাপতি নীহারবাবুকে দায়িত্ব প্রদান করেন। কংগ্রেস সদস্যরা অবশ্য এই প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানান। তাঁদের উপ-নেতা সজল বণিক পত্রপত্রিকার মাধ্যমে শহরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন। একই বক্তব্য ছিল নির্দল সদস্য অসিত সরকারের। সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে নীহারবাবুই পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। তাতে কার্যবাহী সভাপতি করা হয়েছে পুরসদস্য মিত্রা রায়কে। সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ যথাক্রমে সন্দীপ পাল ও সুদীপ্ত সাহা।

এই কমিটির হাতে তিনি কালীপূজার দায়িত্বও তুলে দেন। নীহারবাবু ১৩ লক্ষ টাকার ঘাটতি হিসেবকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন।

এ দিকে, পুরনো কমিটির সম্পাদক দেবব্রত পাল আজই কমিটি পুনর্গঠনের জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে নাগরিক সভা আহ্বান করেছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টা আগে নীহারবাবু নতুন পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশের জেরে সেই সভা হয়নি। দেবব্রতবাবু এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তবে সদ্য-প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ রমাপদ ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের সময়কালে আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। কারণ তিনি ২০১২ সালে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার সময় পুজো কমিটির ২৩৪ টাকা উদ্বৃত্ত বলে কাগজেপত্রে জেনেছিলেন। সে বছর তাঁদের উদ্বৃত্ত হয় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বছর তা ক্রমে বেড়ে গিয়েছে। ২ লক্ষ ৫ হাজার, আড়াই লক্ষের পর গত বছর উদ্বৃত্ত হয়েছে ৭ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। এর পরও ঘাটতি হিসেব কেন? রমাপদবাবু জানান, এটি মোটেও পূজার হিসেব নয়। শ্মশানঘাট পরিচালন সমিতির হিসেব। গত বছর মন্দির আধুনিকীকরণ করা হয়। তৈরি করা হয় নতুন দালানবাড়ি। পুরনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তিও স্থাপন করেছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে ৩৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তারই ১৩ লক্ষ টাকা বকেয়া ছিল। পূজার উদ্বৃত্ত বাদ দিয়ে এখন এর পরিমাণ ৬ লক্ষেরও কম বলে জানিয়েছেন রমাপদবাবু।

কংগ্রেসের অবশ্য হিসেব নিয়ে কোনও মন্তব্য নেই। তাদের ক্ষোভ পুরবোর্ডের বর্ধিত সভা ডেকে কমিটি গঠন করায়। পুরসভায় বিরোধী দলের উপ-নেতা সজল বণিক বলেন, ‘‘এটি ন্যায়সঙ্গত নয়। বৃহৎ পরিসরে সভা ডাকা উচিত ছিল।’’ নতুন কমিটিতে তাঁকেও উপ-সভাপতি করা হয়েছে। তিনি আজ পত্রিকা পড়ে সে কথা জানতে পেরেছেন।

পুরনো কমিটির উপদেষ্টা সজল আচার্যও নীহারবাবুর কাজকর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৩ মার্চ। তিন বছরের হিসেবে আগামী বছরের মার্চে সেটি ভাঙার কথা। কিন্তু নীহারবাবু বিজেপি পুরসদস্যা মিত্রা রায়ের পরামর্শে তাঁদের নাগরিক সভা ডাকারও সুযোগ দেননি। হিসেব পেশের সময়টুকু পর্যন্ত মেলেনি। কংগ্রেস নেতা, প্রাক্তন পুর সদস্য সজলবাবু নতুন কমিটিকে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া বলেই মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সব সময়ই কালীপূজার জন্য পৃথক সভা হয়, কমিটি তৈরি করা হয়। এ বার স্থায়ী কমিটিকে দায়িত্বপ্রদান শিলচর শ্মাশানঘাটের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’’

সজলবাবু ও তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা আচার্য অনেক দিন পুরসভার সদস্য ছিলেন। দু’জনই শ্মশানঘাট সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু গত কালের বৈঠকে আমন্ত্রণ পাননি। সজলবাবু বলেন, ‘‘একে শ্মশানঘাট, তার উপর কালীমন্দির। বিজেপি সেখানেও রাজনীতি করছে। গণতন্ত্র ভুলে নিজের মর্জিমাফিক চলছে।’’

নীহারবাবুর বক্তব্য, ‘‘শ্মশানঘাট ও সে চত্বরে থাকা কালীমন্দির পুরসভা নিয়ন্ত্রিত। পুরসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সভাপতিকে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছে। সে অনুসারেই কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এতে দোষের কিছু নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন