পীযূষ গয়াল। —নিজস্ব চিত্র।
একের পর এক দুর্ঘটনায় সমালোচনায় জেরবার ভারতীয় রেল। নতুন রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতায় এসে রেলকর্তাদের তাই যাত্রী সুরক্ষাকেই ‘পাখির চোখ’ করতে বললেন পীযূষ গয়াল। শনিবার পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল ও মেট্রোর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে রেলমন্ত্রীর একটাই বার্তা, ‘‘যাত্রীদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা চলবে না।’’ দুর্ঘটনা ঠেকাতে একগুচ্ছ দাওয়াইও দেন তিনি। যদিও রেল কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এ সব চেনা দাওয়াই। আর সব রেলমন্ত্রীই গোড়ায় এ সব বলেন!
যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করার সঙ্গে নিয়মানুবর্তিতার উপরেও এ দিন জোর দেন রেলমন্ত্রী। অফিসারদের বলেছেন, ‘‘সময়ে ট্রেন চালাতে হবে। সেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে গেলে যদি নয়া ‘টাইম টেবিল’ তৈরির প্রয়োজন হয়, তাতেও আপত্তি নেই।’’ কী ভাবে সেই নিয়মানুবর্তিতা আরোপ করতে হবে, তার দিশাও দিয়েছেন পীযূষ। বলেছেন, ‘‘যাত্রিবাহী ট্রেনের সময়ে পৌঁছনো নিশ্চিত করতে মালগাড়ির সময়সূচি পরিবর্তন করা যেতে পারে।’’ শুক্রবার দিল্লিতে রেল বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে একই বার্তা দিয়েছিলেন মন্ত্রী।
রেলকর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রীর বার্তা, ‘‘অফিসে বসে হবে না। ময়দানে নামতে হবে। সুরক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি ও ফাঁকফোকরগুলো খুঁজে বার করে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে।’’
রেলে দু’ধরনের পরিকাঠামো হয়। একটি সিগন্যাল, লাইন, লেভেল ক্রসিংয়ের মতো স্থাবর পরিকাঠামো। অন্যটি, ট্রেনের কামরা ও ইঞ্জিনের মতো চলমান পরিকাঠামো। গত ছ’মাসে যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা কাটাছেঁড়া করে রেলকর্তারা দেখেছেন, অধিকাংশ দুর্ঘটনার পিছনে দুর্বল পরিকাঠামোই মূল কারণ। তাই এ দিনের বৈঠকে পরিকাঠামো উন্নয়নের উপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন পীযূষ।
রেল সূত্রের খবর, বৈঠকে পরিকাঠামো উন্নয়নে পাঁচটি পথ বাতলেছেন মন্ত্রী। তার প্রথম তিনটি হল— দেশ জুড়ে রেললাইনের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ, লজঝড়ে কামরা বাতিল করা এবং সমস্ত লেভেল ক্রসিংয়ে রক্ষী মোতায়েন। যদি সম্ভব হয় লেভেল ক্রসিং তুলে রেল ওভারব্রিজ (আরওবি)-এর মতো বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি লাইন বদলের জন্য যে ‘পয়েন্ট’ থাকে, সেগুলি যথাযথ রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। কুয়াশায় যাতে ট্রেন দেরিতে না চলে, তার জন্য সমস্ত ইঞ্জিনে শক্তিশালী ‘ফগ লাইট’ লাগানোর নির্দেশও দিয়েছেন গয়াল।