ভোটের আগে গুজরাতে তাস মোদী ও ‘উন্নয়ন’

এ দিন ফের গুজরাত সফরে গিয়ে ভাবনগর এবং বডোদরায় সারা দিন ধরে একের পর এক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করে উন্নয়নের স্বপ্ন ফিরি করে গেলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:০৪
Share:

আরম্ভ: ঘোঘা থেকে দহেজ পর্যন্ত ফেরি পরিষেবার সূচনায় প্রধানমন্ত্রী। রবিবার। পিটিআই 

রাহুল গাঁধী পেরেছিলেন। পারলেন না চিদম্বরম।

Advertisement

হিমাচলে ভোট ঘোষণা করলেও নরেন্দ্র মোদীকে প্রকল্প ঘোষণার সুযোগ দিতেই গুজরাতে ভোটের দিন জানায়নি নির্বাচন কমিশন, এমনটাই অভিযোগ ছিল কংগ্রেসের। তাই ১৬ অক্টোবর মোদীর গুজরাত সফরে যাওয়ার দিন টুইটারে রাহুল লিখেছিলেন, ‘‘আজ মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বৃষ্টি হবে।’’ সে দিন মোদী গুজরাত গেলেও কোনও প্রকল্পের ঘোষণা করেননি। ‘পরিবারতন্ত্র’ নিয়ে রাহুলকে বিঁধেই ফিরেছিলেন দিল্লি।

চিদম্বরম কিন্তু পারলেন না মোদীকে ঠেকাতে! এ দিন ফের গুজরাত সফরে গিয়ে ভাবনগর এবং বডোদরায় সারা দিন ধরে একের পর এক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করে উন্নয়নের স্বপ্ন ফিরি করে গেলেন। অথচ মাত্র দু’দিন আগে, গত শুক্রবারই গুজরাতে বিধানসভা ভোটের দিন ঘোষণা না হওয়াকে হাতিয়ার করে একাধারে মোদী এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে চিদম্বরম টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সভা শেষ হলে ভোটের দিন ধার্য করার অধিকার তাঁকেই দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গুজরাত সরকার যাবতীয় ছাড় ও জনপ্রিয় ঘোষণা করার পরেই ভোটের দিন স্থির হবে!’’ এমন খোঁচার পরেও কিন্তু প্রকল্প ঘোষণায় অবিচল মোদী। বরং উন্নয়নের তাস দেখিয়ে রীতি মতো চড়া সুরে বলেছেন, ‘‘নতুন ভারতের স্বপ্ন আমরাই পূর্ণ করব।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:বঙ্গ-নীতি নির্ধারণে শিলিগুড়ি আসছেন ভাইয়াজি

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে এ ছাড়া উপায়ও নেই মোদীর। টানা ২২ বছর ধরে গুজরাতে ক্ষমতা ধরে রাখার পরে বিজেপি বুঝতে পারছে, এ বারের পরিস্থিতি অন্য রকম। একে তো জিএসটি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসায়ীরাই বিজেপির দীর্ঘদিনের ভোটব্যাঙ্ক। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে জিএসটি-তে ছাড়-সহ কিছু সুবিধা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কিন্তু তাতেও অবস্থা বিশেষ বদলায়নি বলে বুঝতে পারছেন মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্ব। তার মধ্যেই মোদী-অমিত শাহদের রক্তচাপ বাড়িয়ে গতকাল পিছড়ে বর্গের জনপ্রিয় নেতা অল্পেশ ঠাকর কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সরাসরি কংগ্রেসে না গেলেও রাজ্যের সামাজিক আন্দোলনের আরও দুই প্রভাবশালী নেতা হার্দিক পটেল এবং জিগ্নেশ মেবানিও বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নামার কথা বলে চাপ বাড়িয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলের। তার উপর সাম্প্রতিক একাধিক ভোটে বিজেপির হার উৎসাহ জুগিয়েছে বিরোধীদের। এই পরিস্থিতিতে উন্নয়নের তাসেই বাজিমাত করতে মরিয়া বিজেপি। এবং এ কাজে তাদের প্রথম এবং শেষ টেক্কাটি সেই নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি নেতৃত্ব ভালই জানেন, কোনও ভাবে গুজরাতের ফল খারাপ হলে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা আরও অক্সিজেন পেয়ে যাবে। বিষয়টি বিলক্ষণ জানেন মোদী নিজেও। সে কারণেই দিল্লি ছেড়ে বারবার গুজরাত পাড়ি দিচ্ছেন তিনি।

গত মাসে নিজের জন্মদিনে সর্দার সরোবর বাঁধের উদ্বোধনে ‘নর্মদে সর্বদে’ রণহুঙ্কার দিয়ে গুজরাত ভোটের ঢাকে কাঠি দিয়েছিলেন মোদী। তার পর থেকে বারবার দিল্লির রাজ্যপাট ছেড়ে ছুটে গিয়েছেন নিজের রাজ্য সামলাতে।

এ দিন ৬৫০ কোটি টাকার দু’টি ফেরি পরিষেবা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মোদী। নিজে ফেরিতে ভারুচ পৌঁছে জনসভা করেছেন। পাশাপাশি শ্রীভাবনগর জেলায় সর্বোত্তম গবাদি পশু কেন্দ্র, দুগ্ধ সমবায়, বডোদরা সিটি কমান্ড কন্ট্রোল সেন্ট্রাল, আঞ্চলিক জলসরবরাহ প্রকল্প, ব্যাঙ্ক অব বরোদার নতুন সদর কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় উপকৃতদের বাড়ির চাবি তুলে দেওয়া, মুন্দ্রা-দিল্লি পেট্রোপণ্য সরবরাহের পাইপলাইনের ক্ষমতা বাড়ানো— ঠাসা ছিল তাঁর উদ্বোধনের তালিকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন