বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের দৃশ্য। — ফাইল চিত্র।
দিল্লির লালকেল্লার অদূরে বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে হরিয়ানার আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর থেকে ধরা পড়েছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ডাক্তারি পড়ুয়া জাহান নিশার আলম। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে রবিবার তাঁদের চার জনকে মুক্তি দিল এনআইএ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে তাঁদের কোনও নির্দিষ্ট যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিশার ছাড়া মুক্তি পাওয়া তিন চিকিৎসকের নাম রেহান, মহম্মদ এবং মুস্তাকিম। লুধিয়ানার বাসিন্দা নিশার আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে উত্তর দিনাজপুরের পৈতৃক ভিটেয় এসেছিলেন। শুক্রবার ভোরে সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে এনআইএ। বাকিরা ধরা পড়েছিলেন হরিয়ানার নুহ্ থেকে। সেই থেকে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। অভিযুক্ত চিকিৎসক উমর উন-নবির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল কি না, তা-ও জানার চেষ্টা চলছিল। তবে এনআইএ-র কর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে দিল্লিকাণ্ডের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগসূত্র মেলেনি। দীর্ঘ দিন আগে উমরের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় থাকলেও সাম্প্রতিক অতীতে কোনও যোগাযোগ হয়েছিল বলেও জানা যায়নি। তাই তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ছাড়া পেয়েছেন সার বিক্রেতা দীনেশ সিংলাও। তবে, আপাতত কয়েক দিন তাঁদের নজরদারিতে রাখা হবে বলে জানিয়েছে এনআইএ।
নিশারের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সূর্যাপুরে বোনের বাগ্দান এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে এনআইয়ের হাতে ধরা পড়েছিলেন ওই ছাত্র। তদন্তকারীরা প্রথমে তাঁকে ইসলামপুরে নিয়ে যান। পরে নিশার বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাঁকে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিবারের দাবি, টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরেও নিশারের কাছ থেকে কোনও সন্দেহজনক তথ্য পাননি তদন্তকারীরা। অগত্যা শনিবার তাঁকে ‘ক্লিন চিট’ দিয়েই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ছেলের মুক্তির খবর পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে এলাকায়। তদন্তকারী এক কর্তার কথায়, ‘‘নিশারকে এনআইএ-র শিলিগুড়ি দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই ছাত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’ আর এক কর্তা জানিয়েছেন, ধরা পড়ার আগে এলাকার একটি স্টেশনের কাছে ‘সন্দেহজনক ভাবে’ ঘোরাঘুরি করছিলেন নিশার। তদন্তকারীদের দেখে পালানোরও চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি। এর পরেই তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে ওই কর্তার কথায়, ‘‘দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে নিশারের সরাসরি কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তাঁর মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পরে যদি তাঁকে ফের তলব করা হয়, তা হলে তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে বলেও জানানো হয়েছে।’’
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় লাল কেল্লার অদূরে একটি সাদা রঙের হুন্ডাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। মৃত্যু হয় ১৩ জনের। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন উমর নামে আল-ফালাহ্র এক চিকিৎসক। আগেই গ্রেফতার হওয়া মুজ়াম্মিল আহমেদ এবং শাহীন সিদ্দীকিও ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর পরেই সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে আল-ফালাহ্। একে একে একাধিক চিকিৎসক ও পড়ুয়াকে আটক করে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সারের কয়েক জন বিক্রেতাকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়। শেষমেশ তাঁদের মুক্তি দিল এনআইএ।