National News

সেই ‘নাবালক’ কি পেল খবর!

শুধু নির্ভয়ার পরিবার নয়, দেশের একটা বড় অংশের দাবি— মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৪:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘নির্ভয়া’ নয়। মা চেয়েছিলেন, তাঁর মেয়েকে আসল নামেই চিনুক গোটা দুনিয়া। মেয়ের লড়াইটা জানুক সবাই। ২০১৫-র ১৬ ডিসেম্বর। যন্তর-মন্তরের সভায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘মেয়ের নাম জানাতে আমার কুণ্ঠা নেই। এখনই বলে দিচ্ছি।’’ বলেওছিলেন মা। কিন্তু ধর্ষিতার নামপ্রকাশে আইনি অনুমতি নেই। ফলে, কিছু কাগজে দু’-এক দিন সেই নাম লেখা হলেও ‘নির্ভয়া’ হয়েই থেকে গিয়েছেন ‘নির্ভয়া’। ওই সভাতেই নির্ভয়ার মা দাবি তুলেছিলেন, ছ’নম্বর ধর্ষকের নামও প্রকাশ করুক কেন্দ্র। এতেও সায় ছিল না আইনের। কারণ ২০১২-র ১৬ ডিসেম্বর, গণধর্ষণের পরে নির্ভয়াকে যখন দিল্লির রাস্তায় বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, ওই ছ’নম্বরের বয়স তখন সবে ১৭ বছর ৬ মাস—‘নাবালক’।

Advertisement

তিন বছরের সাজা কাটিয়ে ২০১৫-র ডিসেম্বরেই ছাড়া পেয়ে যায় সে। কিন্তু কেন? জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডকে নিশানায় রেখে সামনে গোড়া থেকেই প্রশ্নটা তুলেছিলেন নির্ভয়ার মা। বারবার বলেছেন, ‘‘আইন বুঝি না। আমি জানি না ওর বয়স ১৬, না ১৮। শুধু জানি, ও নৃশংস অপরাধ করেছে। তবু মাত্র তিন বছর জেল খেটেই ও ছাড়া পেয়ে গেল?

শুধু নির্ভয়ার পরিবার নয়, দেশের একটা বড় অংশের দাবি— মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল। গোড়ায় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, ধর্ষণের পরে নির্ভয়াকে সে দিন সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছিল এই নাবালকই। জুভেনাইল বোর্ড কিন্তু ‘প্রমাণ মেলেনি’ বলে কাঠগড়ায় তুলেছে সংবাদ মাধ্যমকেই। পুলিশকে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছিল ছেলেটি। অক্ষয় যখন বলছিল, ‘চল দু’টোকে ফেলে দিই বাস থেকে।’ কেউ আপত্তি করেনি। তার পর ‘সব কাজ’ সেরে কী ভাবে বাস ধোয়ামোছা করে ছ’জন মিলে ‘লুটের মাল’ ভাগ করেছিল— ছেলেটির বয়ানে সব আছে পুলিশের খাতায়। সে দিনের ওই নাবালক অপরাধীর দাবি, সে নাকি ঘটনাচক্রেই সে দিন মুকেশ-অক্ষয়-পবনদের দলে ভিড়েছিল। দোষী সাব্যস্ত যে রাম সিংহ ২০১৩-র মার্চে তিহাড়ে আত্মঘাতী হয়, সে-ই নাকি নাবালককে বলেছিল, ‘চল, একটু মস্তি করে আসি।’

Advertisement

আরও পড়ুন: এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম: পবন

তার পর? ফাঁকা বাস বলে নির্ভয়া ও তাঁর বন্ধুর যাতে সন্দেহ না-হয়, সে জন্য ১০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সে দিন। এ কথাও পুলিশকে জানিয়েছিল ছেলেটি। বাকিদের সঙ্গে তার বহু বয়ানই মেলেনি। কিন্তু এক বারের জন্যও তাকে কিংবা তার আইনজীবীকে অপরাধ অস্বীকার করতে শোনা যায়নি।

পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের ইসলামনগরের কাছাকাছি একটি গ্রামে বাড়ি ছেলেটির। ২০১৩-র জানুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকারে তার মা জানিয়েছিলেন, অভাবের সংসারে ১১ বছর বয়সেই তাকে কাজ করতে দিল্লি পাঠানো হয়। ধাবায় থালা-বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে দুধের দোকানে কাজ, বাস ধোওয়া— রোজ রোজগার ৫০ টাকা। পুলিশকে সে জানিয়েছে, ওই বাস ধোওয়ার কাজ করতে গিয়েই রাম সিংহের সঙ্গে আলাপ। ১৬ ডিসেম্বরের রাতে ‘সব কাজ’ সারা হলে এই রামই তাকে লুটের মোবাইল, ১১০০ টাকা আর এটিএম কার্ড দিয়ে বলেছিল, ‘পরে সুযোগ মতো টাকা তুলে নেব।’

সে ‘সুযোগ’ আর আসেনি কারও। কিন্তু এখন সেই ‘নাবালক’ কোথায়? সাজা কাটানোর পরে যে এনজিও তার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে, তার এক কর্তার দাবি, ‘‘এখন সে অন্য মানুষ। নতুন নাম, পরিচয়ে হোটেলে রাঁধুনির কাজ করছে।’’ ওই কর্তা বলেন, ‘‘গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে বারবার জায়গা বদলাতে হয়েছে ওর।’’ শেষ পাওয়া খবর, সে দক্ষিণের কোনও রাজ্যের উপকূলকর্তী শহরে। এখন সে পঁচিশের যুবক। কে জানে আজ টিভিতে ফাঁসির খবর দেখল কি না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন