প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে মিথ্যাবাদী বললেন রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।
হ্যাঁ বা না?
রাহুল গাঁধী তাঁর প্রশ্নের সরাসরি জবাব চেয়েছিলেন। আড়াই ঘণ্টা ধরে রাফাল নিয়ে নানা কথা বললেও সেই জবাব কিন্তু এড়িয়েই গেলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
ফলে নিজে সংসদে না থেকেও দু’দিন ধরে ফৌজ নামিয়ে রাফাল বিতর্কে ইতি টানতে যে চেষ্টা করে গেলেন নরেন্দ্র মোদী, তা বৃথাই গেল। উল্টে ভোটের আগে রাহুলের রাফাল-অস্ত্র আরও ধারালো হয়ে উঠল।
নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠীর সফর বাতিল করে রাহুল আজ ঠায় বসে ছিলেন লোকসভায়। মোদী থাকবেন না জেনেও সকালেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে চারটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন। যার অন্যতম হল, আট বছর ধরে রাফাল নিয়ে বায়ুসেনা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের যে কর্তারা দর কষাকষি করছিলেন, তাঁরা কি মোদীর দু’মিনিটে বদলে ফেলা নতুন চুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন? লোকসভাতেও এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’তে চেয়েছিলেন রাহুল।
আরও পড়ুন: দেশছাড়া হতে হবে না, নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্ত অমুসলিমদের আশ্বাস মোদীর
রাফাল-বিতর্কে এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর সঙ্গে একাধিক প্রশ্ন জড়িত। হ্যালের বদলে অনিল অম্বানীকে বরাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কে? মোদী না বায়ুসেনা? রাফালের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কে? প্রতিবেশী দেশ যদি এতই বিপজ্জনক হয়, তা হলে ১২৬টির বদলে ৩৬টি বিমান কেনা হল কেন? সকালেই রাফালের ফাইলের অংশ ‘ফাঁস’ করে কংগ্রেসের দাবি, নতুন চুক্তি নিয়ে মোদীর একতরফা সিদ্ধান্তে আপত্তি তুলেছিলেন সেনা কর্তারা। রাহুল সকালেই বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তাকে দুর্বল করেছেন মোদী। ভোটে ক্ষমতায় এলে এর ফৌজদারি তদন্ত হবে। দোষীদের শাস্তি হবে।’’
আরও পড়ুন: বিল পাশ, আধার ছাড়ার পথ নেই
রাফাল-ঝাঁঝের মোকাবিলা করতে কাল অরুণ জেটলি আসরে নেমেছিলেন। আজ প্রথমে অনুরাগ ঠাকুর, নিশিকান্ত দুবেদের দিয়ে বফর্স, অগুস্তা, হেরাল্ডের মতো বিষয় তুলে গাঁধী পরিবারকে আক্রমণে যায় বিজেপি। নিশানা করা হয় রবার্ট বঢরাকেও। তার পর নামেন নির্মলা। তিনি তোপ দাগলেন, মোদীকে আড়ালেরও চেষ্টা করলেন। বললেন, ‘‘বফর্স ছিল দুর্নীতি, কংগ্রেসকে ডুবিয়েছে। রাফাল দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। রাফাল ফেরাবে মোদীকে। কংগ্রেস রাফাল চুক্তি পুরো করেনি, কারণ টাকা পায়নি।’’
নির্মলা বলেন, ইউপিএ আমলে মূল বিমানের দাম রাহুলের দাবি মতো ৫২৬ কোটি টাকা নয়, আসলে ছিল ৭৩৭ কোটি টাকা। মোদী জমানায় ৯ শতাংশ সস্তা করে তা হয়েছে ৬৭০ কোটি টাকা। কংগ্রেস জমানায় অনেক চুক্তিতেই সার্বভৌম স্বীকৃতি আসেনি। কংগ্রেস ১৮টি বিমান ফ্রান্স থেকে আনছিল, মোদী আনছেন ৩৬টি। হ্যাল এত ভাল হলে কেন অগুস্তার বরাত দিল না কংগ্রেস? যে যুগ্ম-সচিব আপত্তি তুলেছিলেন, তিনিই মন্ত্রিসভায় স্বাক্ষর করে পাঠান।
রাহুল যখন অনিল অম্বানীকে অফসেট দেওয়া-সহ ‘হ্যাঁ’-‘না’-তে মোক্ষম প্রশ্ন ছুড়লেন, নির্মলা আশ্রয় নিলেন আবেগের! ২০১৬ সালে রাফাল চুক্তি সইয়ের দিনই অফসেট চুক্তি হওয়ার কথা বললেও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, এখনও তিনি জানেন না কাকে অফসেট দেওয়া হয়েছে। আর অন্য সব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টে বললেন, তাঁকে মিথ্যেবাদী বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে ‘চোর’ বলা হয়। বিজেপিতে কেউ বড় পরিবার থেকে আসেননি, রাহুল তাঁদের অসম্মান করতে পারেন না।
লোকসভা থেকে বেরিয়ে রাহুল বললেন, ‘‘আসল প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নাটক করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। অথচ অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল মোদীর বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী আগেই পালিয়েছেন। মনোহর পর্রীকর রাফাল ফাইল হাতে মোদীকে ‘সোজা’ করার হুমকি দিচ্ছেন। এ বারে পালালেন নির্মলা সীতারামনও।’’
অরুণ জেটলি, অমিত শাহ নির্মলার তারিফ করলেও বিজেপি নেতারা মানছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর যে রাফাল অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল, নতুন করে তাতে শান দেওয়ার সুযোগ পেলেন রাহুলা। বিরোধী দলের পাশাপাশি এখন শিবসেনা, বিজেডি, টিআরএস-এর মতো দলও রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি তুলছে। এডিএমকে-ও প্রশ্ন তুলছে।