Nirmala Sitharaman

নির্মলার আশঙ্কা

অর্থমন্ত্রী আজ মুম্বইয়ে ‘এশিয়া ইকনমিক ডায়লগ ২০২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মেনে নিয়েছেন, ভারত বা অন্য কোনও দেশই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা আঁচ করতে পারেনি। তাঁর বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পৃথিবীর সামনে এত বড় মাপের বিপত্তি আসেনি। খুব শীঘ্রই শান্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করে নির্মলা বলেন, "সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির চাঙ্গা হয়ে ওঠা অব্যাহত থাকতে পারে।"

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:০৯
Share:

ফাইল চিত্র।

অর্থনীতির আকাশে যে ফের কালো মেঘ ঘনাচ্ছে, তা খোলাখুলিই স্বীকার করে নিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

Advertisement

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরে আজ প্রথম মুখ খুলেই মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, "ভারতের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের মুখে। ভারত-সহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতির অতিমারির গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য শান্তি প্রয়োজন। এখন সেই শান্তিই ভঙ্গ হচ্ছে। যার ফলে ভারতের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া জোর ধাক্কা খাবে। মানবকল্যাণের স্বার্থে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ অবাধ হওয়া প্রয়োজন।"

অর্থমন্ত্রীর আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা বুঝিয়ে আজ আর্থিক বিশ্লেষক সংস্থা নোমুরা জানিয়েছে, ইউক্রেন-সঙ্কট এশিয়ার যে সব দেশের অর্থনীতিতে সব থেকে বেশি ধাক্কা দেবে, ভারত তার অন্যতম। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পরেই এক ঝটকায় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়ে ব্যারেল প্রতি ১০৫ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। অশোধিত তেলের দাম বাড়লে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়বে। অর্থনীতিবিদদের মতে, উত্তরপ্রদেশের ভোট মিটলেই পেট্রল-ডিজ়েলের দাম লিটার প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়ে যাবে। তার জেরে খাদ্যপণ্য থেকে সমস্ত জিনিসপত্রের দামই বাড়বে। নোমুরার-র মতে, তেল, খাদ্যপণ্যের দাম টানা বাড়তে থাকলে ভারত, তাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসের মতো এশিয়ার দেশগুলি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আজ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-ও তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রভাব সমস্ত পণ্যের দামের উপরেই পড়বে। স্টেট ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ সৌম্যকান্তি ঘোষের মতে, অশোধিত তেলের দাম ইতিমধ্যেই ১০০ ডলার ছাপিয়ে গিয়েছে। সোনা, প্ল্যাটিনামের মতো অন্যান্য দামি ধাতুর দামও বাড়ছে। ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য রফতানিকারী দেশ। কৃষ্ণসাগরে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে বাধা এলে গম, ভুট্টার দাম বাড়বে। দেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম তো বাড়বেই, বেড়ে যাবে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ঘাটতিও। রাশিয়ার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ফলে এ দেশ থেকে চা রফতানিতে ধাক্কা লাগতে পারে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করার পরেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকে ‘ত্রাহি, ত্রাহি’ রব উঠেছিল। কারণ, গত ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করেছেন, তার হিসেবের তিনটি অনুমান ভুল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এক, আগামী অর্থ বছরে অশোধিত তেলের দাম ৭০ থেকে ৭৫ জলার থাকবে ধরে নিয়েছে আর্থিক সমীক্ষা। দুই, অর্থমন্ত্রী নিজে লোকসভায় বলেছিলেন, তিনি মূল্যবৃদ্ধির হার ৩.৫% থাকবে বলে আশা করছেন। তিন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান ছিল, মূল্যবৃদ্ধির হার গড়ে ৪.৫% থাকবে। নোমুরা-র মতে, অশোধিত তেলের দাম ১০% বাড়লে আর্থিক বৃদ্ধির হার ০.২% অঙ্ক কমে যেতে পারে। সৌম্যকান্তির মতে, অশোধিত তেলের দাম গড়ে ৯০ ডলারে থাকলে মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.৫%-এ চলে যেতে পারে। এই গড় দাম ১০০ ডলার হলে মূল্যবৃদ্ধির মাত্রাও বাড়বে।

অর্থমন্ত্রী আজ মুম্বইয়ে ‘এশিয়া ইকনমিক ডায়লগ ২০২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মেনে নিয়েছেন, ভারত বা অন্য কোনও দেশই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা আঁচ করতে পারেনি। তাঁর বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পৃথিবীর সামনে এত বড় মাপের বিপত্তি আসেনি। খুব শীঘ্রই শান্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করে নির্মলা বলেন, "সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির চাঙ্গা হয়ে ওঠা অব্যাহত থাকতে পারে।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন