Interim Budget 2024-25

ভোটার-মন পেতে ভরসা কি এ বার ‘রামরাজ্যের’ স্বপ্নই? কিছু ক্ষণের মধ্যেই অন্তবর্তী বাজেট নির্মলার

অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ আর্থিক অসাম্য, বেকারত্ব, মানব উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়া ও বাজেটে সেই সমস্যা সমাধানের দিশা দেখানো।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫০
Share:

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।

অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘রামরাজ্য’-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশের ২৪ ঘণ্টা আগে ইঙ্গিত মিলল, এই বাজেটেও ‘রামরাজ্য’-এর আখ্যানই থাকতে চলেছে। বাজেট-বক্তৃতার শব্দের ফাঁকে ফাঁকে অনুচ্চারিত বার্তা থাকবে, লোকসভা ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারই ফের ক্ষমতায় আসবে। এবং ক্ষমতায় এসে ‘বিকশিত ভারত’ থেকে ‘রামরাজ্য’ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করবে। বিরোধীদের অবশ্য প্রশ্ন, ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পেরেই কি এ বার ‘রামরাজ্য’-এর স্বপ্ন ফেরি?

Advertisement

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে অন্তর্বর্তী বাজেট বা ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করবেন। লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে তাতে মহিলা, তরুণ, গরিব, কৃষক—মোদীর অগ্রাধিকারে থাকা চারটি ‘ভোটব্যাঙ্কের’ জন্য কিছু না কিছু ‘উপহার’ থাকবে। মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের জন্য আয়করে কিছুটা সুরাহাও থাকতে পারে। তার সঙ্গে থাকবে ‘সুদূর’ ভবিষ্যতে ‘বিকশিত ভারত’ থেকে ‘রামরাজ্য’-এর স্বপ্ন। সেখানে লোকসভা ভোটকেই কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।

আজ বাজেট অধিবেশনের শুরুতে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী সেই বার্তাই দিয়েছেন। মোদী বলেন, ‘‘আমরা প্রথা মেনেই নতুন সরকার গঠনের পরে আপনাদের সামনে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করব।’’ অন্তর্বর্তী বাজেট হলেও বৃহস্পতিবারের বাজেট বক্তৃতায় যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানো হবে, তার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার এক দিশা-নির্দেশক বার্তা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আগামিকাল বাজেট পেশ করতে চলেছেন।’’

Advertisement

প্রতি বছরই ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ হয়। তবে লোকসভা ভোটের বছরে নির্বাচনের আগে সংসদে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট বা অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ হয়। যাতে নতুন আর্থিক বছরে ভোটের পরে নতুন সরকার গঠন করে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা পর্যন্ত সরকারি কাজে বাধা না আসে। বিরোধীরা বলছেন, ভোটের আগের বাজেটকে রাজনৈতিক ভাবে সব দলই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ভোটের আগের শেষ বাজেটে তাঁর সরকারের অর্থনীতি পরিচালনায় সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান দিতেই চাইছেন না। তিনি বছরে ২ কোটি চাকরি থেকে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার মতো কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কতখানি পূরণ হয়েছে, তার মধ্যেই যেতে চাইছেন না। তার বদলে ২৫ বছর পরে কী হবে, সেই বহু দূর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে চাইছেন। লোকসভা ভোটকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে ভোটে জিতেই গিয়েছেন এমন ভাব করছেন।

অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ আর্থিক অসাম্য, বেকারত্ব, মানব উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়া ও বাজেটে সেই সমস্যা সমাধানের দিশা দেখানো। বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেও মোদী তা পূরণ করতে পারেননি। সরকার নানা পরিসংখ্যান দেখিয়ে দাবি করছে, বেকারত্ব আগের থেকে কমেছে। কিন্তু এসবিআই রিসার্চের মতো নানা পরিসংখ্যান বলছে, শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি। চাকরি তৈরি হলেও কী ধরনের চাকরি তৈরি হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, ‘ডেলিভারি বয়’ বা ‘ক্যাব চালক’-এর মতো অস্থায়ী কাজের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা-সহ স্থায়ী চাকরির হার কমেছে।

এ দেশের আর্থিক অসাম্য নিয়ে অক্সফ্যামের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশে তৈরি ৪০ শতাংশের বেশি সম্পদ ধনীতম এক শতাংশ মানুষের হাতেই কুক্ষিগত হয়েছে। দরিদ্রতম ৫০% মানুষের ভাগে জুটেছে সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ। অপুষ্টি, শিশুদের উচ্চতার তুলনায় কম ওজন বা ‘ওয়েস্টিং’, বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা বা ‘স্টান্টিং’, শিশুদের মৃত্যুর হার—চার মাপকাঠির ভিত্তিতে তৈরি আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচক বা ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স’-এ ভারত এখন ১২১টি দেশের মধ্যে ১১১-তম স্থানে নেমে এসেছে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলছেন, এর কারণ হল, মোদী সরকারের শেষ পাঁচ বছরে শিক্ষা-স্বাস্থ্যে খরচ ক্রমশ কমেছে। সরকারি পরিসংখ্যানও বলছে, ২০১৯-এ দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম দু’বছরে মোদী সরকার মোট খরচের মাত্র ২.৪ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচ করেছিল। শেষ তিন বছরে তা ২ শতাংশেরও কমে নেমে এসেছে। একই ভাবে শিক্ষা খাতে প্রথম বছরে ৩.৩ শতাংশ খরচ হলেও, এখন তা ২.৫ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। সরকারের মোট খরচের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে পুরনো ঋণে সুদের খরচ মেটাতে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, সুদের পিছনে খরচের পাশাপাশি খাদ্য, সার, জ্বালানির পিছনে ভর্তুকির খরচ ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে যেতে চলেছে। তা সত্ত্বেও আর্থিক শৃঙ্খলার পথে হেঁটে রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানা হবে। ভোটের বছর বলে বিলগ্নিকরণ থেকে লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হবে। তবে আর্থিক বৃদ্ধির জন্য পরিকাঠামোয় খরচের গতি কমানো হবে না।

প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদের অধিবেশনের শুরুতে সাংবাদিকদের সামনে ‘আপনাদের সবাইকে আমার রাম-রাম’ বলে বক্তব্য শেষ করার আগে বলেছেন, ‘‘দেশ নিত্যদিন উন্নতির নতুন নতুন শৃঙ্গ পেরিয়ে এগোচ্ছে। সকলের জন্য, সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন হচ্ছে। জনতা-জনার্দনের আশীর্বাদে এই যাত্রা নিরন্তর চলতে থাকবে।’’ কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, মোদীর ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি, তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির স্বপ্ন, ৭ শতাংশ বৃদ্ধির অর্থনীতির সুফল গরিবের কাছে পৌঁছচ্ছে না। তাই মোদীসরকার গত দশ বছরের ‘রিপোর্ট কার্ড’ নিয়ে ভোটে যাওয়ার বদলে ২৫ বছর পরে ‘বিকশিত ভারত’ হবে, হাজার বছর পরে ‘রামরাজ্য’ হবে, এ সব বলে ভোটে যেতে চাইছে।বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ বলেছেন, “গত দশ বছরে আমরা অমৃত কালের ভিত তৈরি করেছি। স্বাধীনতার ৭৫-তম বর্ষ থেকে স্বাধীনতার শতবর্ষের মাঝে ২৫ বছরের অমৃত কালে এ বারই প্রথম লোকসভা নির্বাচন। ফলে এই লোকসভা ভোট আগামী ২৫ বছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন