Nirmala Sitharaman

‘দৈবে’ দায় ঠেলে ফাঁপরে সীতারামন

নেট-দুনিয়ায় প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি নেতারা তো নরেন্দ্র মোদীকে বিষ্ণুর একাদশ অবতার বলতেন। নির্মলা কি ভগবানের দোষ বলে প্রধানমন্ত্রীকেই দুষছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫৮
Share:

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।—ফাইল চিত্র।

অর্থনীতির দুর্দশায় ‘দৈবদুর্বিপাক’-এর দোহাই দিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিজেই বিপাকে।

Advertisement

ঘরে-বাইরে নেট দুনিয়ায় প্রশ্ন, কোভিড যদি দৈবদুর্বিপাক বা ভগবানের মার হয়, তবে কোভিডের আগে অর্থনীতি কেন মুখ থুবড়ে পড়েছিল? বিরোধী শিবির, এমনকি বিজেপির অন্দরমহল থেকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর প্রশ্ন, গত পাঁচ বছরে বৃদ্ধির হার ৮% থেকে ৩.১%-এ নেমে আসার পিছনেও কি ভগবানের হাত?

নেট-দুনিয়ায় প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি নেতারা তো নরেন্দ্র মোদীকে বিষ্ণুর একাদশ অবতার বলতেন। নির্মলা কি ভগবানের দোষ বলে প্রধানমন্ত্রীকেই দুষছেন। কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, এ যাত্রায় অন্তত জওহরলাল নেহরু রেহাই পেলেন! নেহরুর বদলে মোদী সরকার অর্থনীতির দুর্দশার জন্য এখন ভগবানকে দুষছে।

Advertisement

নির্মলা বৃহস্পতিবার বলেছেন, কোভিডে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা দৈবদুর্বিপাক বা ভগবানের মার— যার ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কোচনও হতে পারে। চলতি বছরে যে দেশের অর্থনীতির সঙ্কোচন হবে বা জিডিপি কমবে, তা নিয়ে সমস্ত আর্থিক সংস্থাই একমত। কী হারে কমবে, তা নিয়ে অবশ্য ভিন্ন-ভিন্ন মত রয়েছে।

সোমবার, ৩১ অগস্ট অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসের আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রকাশিত হবে। তার আগেই বিজেপি আজ দাবি করেছে, “গোটা বিশ্বে আর্থিক রক্তক্ষরণ চলছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলিতে বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে (ঋণাত্মক) নামার ইঙ্গিত মিলছে। এরই মধ্যে ধনাত্মক বৃদ্ধির হার নিয়ে ভারত হবে এক উজ্জ্বল বিন্দু। সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা অর্থনীতির দেশ হিসেবেও আগের মর্যাদা ধরে রাখবে ভারত।”

নির্মলা কোভিডকে দৈবদুর্বিপাক আখ্যা দিয়েছেন, রাজ্যের জিএসটি ক্ষতি কেন্দ্রের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়— এটা বোঝাতে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা বলছেন, কোভিডের আগে থেকে যেমন অর্থনীতি ধুঁকতে শুরু করেছে, তেমনই জিএসটি ক্ষতি মেটানো নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে কোভিডের আগে থেকেই।

কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখিয়েছেন, ২০১৮-১৯-এ জুলাই-সেপ্টেম্বরেও বৃদ্ধির হার ছিল ৭.১%। পরে তা ধাপে ধাপে কমে ২০১৯-২০-র জানুয়ারি-মার্চে নেমে এসেছে ৩.১%-এ। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, অর্থনীতির নাভিশ্বাস উঠেছে কোভিডের আগেই। গাঁধীর মন্তব্য, “তিনটি পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। নোটবন্দি, ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি ও ব্যর্থ লকডাউন। বাকি সব মিথ্যে।” সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিরও অভিযোগ, কোভিডের আগেই মানুষের রুটিরুজি নষ্ট করে এখন মোদী সরকার ভগবানকে দোষ দিচ্ছে।

জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী হাসিব দ্রাবুর মন্তব্য, “অর্থমন্ত্রী বিমা সংস্থার এজেন্টের মতো দৈবদুর্বিপাকের যুক্তি দিয়ে ক্ষতিপূরণ এড়িয়ে যেতে পারেন না।” পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত্র মিত্রের প্রশ্ন, রাজ্যে আমফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। তাকে কি আমি দৈবদুর্বিপাক বলে দায় এড়িয়ে যেতে পারি? নেট-নাগরিকদেরও প্রশ্ন, ভগবানের দোহাই দিয়ে এ বছর কি আয়কর না-মেটালে চলবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন