ভোটে জিতলে মদ বন্ধ, ঘোষণা নীতীশের

গুজরাতের পথে এগোচ্ছেন নীতীশ কুমার! বিধানসভা নির্বাচনের মাস দু’য়েক আগে প্রকাশ্য সভায় তিনি ঘোষণা করলেন— ক্ষমতায় ফিরলে বিহারে মদ বিক্রি বন্ধ করবেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটনা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৬
Share:

গুজরাতের পথে এগোচ্ছেন নীতীশ কুমার!

Advertisement

বিধানসভা নির্বাচনের মাস দু’য়েক আগে প্রকাশ্য সভায় তিনি ঘোষণা করলেন— ক্ষমতায় ফিরলে বিহারে মদ বিক্রি বন্ধ করবেন।

মুখ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণায় সকলে হতচকিত। বাকরুদ্ধ শাসক দলের বিধায়ক-মন্ত্রীরাও। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন ঘোষণা করলেন নীতীশ?

Advertisement

আজ গাঁধী ময়দান লাগোয়া শ্রীকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হলে বিহারের সমাজকল্যাণ দফতরের কর্মশালার উদ্বোধনে হাজির ছিলেন নীতীশ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহিলারা সেই কর্মশালায় যোগ দেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা জানাতে শুরু করেন। বেশির ভাগেরই দাবি ছিল— মদের জন্য সংসারে শান্তি নেই। আয়ের বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে মদের পিছনে। সরকার কিছু করছে না। নীতীশ বলেন, ‘‘প্রতি বছর দেশি মদ খেয়ে কয়েক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য দেওয়ার জন্য মদ বন্ধ করার সময় এসেছে। আমাদের নতুন সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’

২০০৭ সালে রাজ্য সরকার আবগারি নীতি তৈরি করেছিল। অভিযোগ, সেই নীতির জেরেই রাজ্যে মদের বিক্রি বেড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের মধ্যে মদ্যপান বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। মহিলাদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ।

শাসক জোটের আরজেডি-র জগদীশপুরের বিধায়ক দীনেশকুমার সিংহ দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপান বিরোধী আন্দোলন করছেন। তৈরি করেছেন ‘শরাব মুক্তি সেনা’। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ১৫ দিন ধরে ভোজপুর ও আরা জেলার গ্রামে গ্রামে সচেতনতা অভিযান চালিয়েছেন দীনেশ। সে সময়ে ১৩৪টি গ্রামে সভাও করেন। এ নিয়ে দীনেশ বলেন, ‘‘ভোটে জেতার পর নয়, এখনই মদ বন্ধ করা উচিত। রাজ্যের যুব সমাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে মদ নিয়ে সরকারের ভুলনীতির জন্যই।’’ তিনি জানান, বিহারে বিক্রি হওয়া মদের ৬৮ শতাংশ পান করেন ১৮ থেকে ৩৫ বছরের যুবকরা। একটি বেসরকারি সংস্থা সম্প্রতি বিহারের মাদক প্রভাব নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রায় ৫৮ শতাংশ বাসিন্দা মদ পান করেন।

রাজ্য সরকারের আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে মদ বিক্রি থেকে আয় হত প্রায় ৩১৯ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ সালে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪৩১ কোটি এবং ২০১৩-১৪ সালে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছরে আয় ছাড়িয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা উপরে।

এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে রাজ্য সরকার মদ বিক্রি বন্ধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় কিছুটা হলেও সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভাবে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তাঁদের এক জন হেতুকর ঝা বলেন, ‘‘বিহারের গ্রামে মদ তৈরি হয়। তা বন্ধ করা নিয়ে সরকারের উদ্যোগ নেই। আসলে সরকারের নীতিতে অসঙ্গতি রয়েছে। এক দিকে, সরকার কোনও ভাবেই মদ থেকে আয় কমাতে চায় না। অন্য দিকে, সাধারণের সামনে নিজের মানবিক মুখ তুলে ধরতে তৎপর হয়।’’

সরকারের দ্বিমুখী নীতি নিয়ে বিরোধীরাও সরব হয়েছেন। বিজেপির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ময়ূখ বলেন, ‘‘মদ বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত। কিন্তু নীতীশ কুমারের হাতে তো সময় আর নেই। নির্বাচনের সময়ে সরকারের এ কথা মনে পড়়ল! মদ মাফিয়ারা গ্রামে গ্রামে যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তা বন্ধ করে মানুষকে শান্তি দিক সরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন