ফেরালেন মমতার দূতকে

নোট বাতিলের পক্ষেই অনড় নীতীশ

নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিরোধী আন্দোলনের পাশে তিনি যে নেই তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন নীতীশ কুমার। আগামী সোমবার বিরোধী দলগুলি বিভিন্ন ভাবে দেশ জুড়ে মোদী-বিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করে তুলতে চাইছে।

Advertisement

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৬
Share:

নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিরোধী আন্দোলনের পাশে তিনি যে নেই তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন নীতীশ কুমার। আগামী সোমবার বিরোধী দলগুলি বিভিন্ন ভাবে দেশ জুড়ে মোদী-বিরোধী আন্দোলনকে তীব্র করে তুলতে চাইছে। কিন্তু আজ পটনার এক অনুষ্ঠানে জেডিইউয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানিয়ে দিলেন, নীতির প্রশ্নেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন।

Advertisement

পরিস্থিতি এমনই যে মোদী-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূতের সঙ্গে নীতীশ কুমার দেখাই করলেন না। আগামী ৩০ নভেম্বর পটনায় মমতার ধর্না কর্মসূচি হওয়ার কথা। মমতার সঙ্গে নীতীশের সম্পর্কও যথেষ্ট ভাল। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল নেত্রী পটনার কর্মসূচিতে নীতীশকে পাশে চান। সম্প্রতি মমতার বার্তা নিয়ে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা পটনায় নীতীশের সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু নীতীশ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি। নীতীশ পাশে না থাকায় মমতার পটনা কর্মসূচি ঘিরেই সংশয় তৈরি হচ্ছে।

আজ নীতীশ বলেন, ‘‘কালো টাকার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপের সঙ্গে আমি আছি নীতির কারণে। আমি বিশ্বাস করি দেশের কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকর।’’ আজ তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বেনামি সম্পত্তির বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে অনুরোধ করেছেন।

Advertisement

আজ পটনার ১ অ্যানে মার্গে, মুখ্যমন্ত্রী আবাসে দলের রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ-সহ প্রবীণ নেতারা ঘণ্টা দুয়েক নীতীশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন। দলীয় নেতাদের নীতীশ বোঝান, কেন তিনি কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। কেন তার প্রয়োজন। নীতীশের সঙ্গে কথা বলার পরে বশিষ্ঠনারায়ণ বলেন, ‘‘দল হিসেবে আমরা কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি।’’ তিনি জানান, সে কারণেই এর বিরুদ্ধে কোনও আন্দোলন বা হরতালকে জেডিইউ সমর্থন করবে না। আগামী ২৮ নভেম্বর বাম দলগুলি পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও ত্রিপুরায় হরতালের ডাক দিয়েছে। কংগ্রেস পালন করবে আক্রোশ দিবস। আর মমতা জন-বিদ্রোহ দিবস। সতর্ক জেডিইউ নেতৃত্ব অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে দূরত্বই বজায় রাখতে চাইছেন।

সূত্রের খবর, দলীয় বৈঠকে নীতীশ জানিয়েছেন নোট বাতিলের বিপক্ষে কোনও আন্দোলন সাধারণ মানুষ ভাল চোখে নিচ্ছে না। তাতে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হতে পারে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ভাল কাজ সমর্থন করলে মানুষ পাশেই থাকবে। তাতে জেডিইউ লাভবান হবে। আর যদি কোনও ভাবে কেন্দ্র ব্যর্থ হয় তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালে তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে। নীতীশের এই যুক্তি মেনে নিয়েছেন দলের প্রায় সমস্ত নেতাই।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী শিবিরে নীতীশ খানিকটা এক ঘরে হয়ে পড়ছেন বলে দলের নেতাদের একাংশ তাঁকে সতর্ক করেছেন। নীতীশ অবশ্য তাঁদের উদ্দেশে আজ প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘নীতির প্রশ্নে আমি একা হতেও রাজি।’’ উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছেন রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রার্থীপদকে সমর্থন করার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘সে সময়ে তো আমি এনডিএ-রই শরিক ছিলাম। কিন্তু এনডিএ-র বিরুদ্ধে গিয়ে প্রণববাবুকে সমর্থন করেছিলাম। তখন তো কেউ এই প্রশ্ন তোলেননি!’’

নীতীশের এই মনোভাব দেখে হতাশ তাঁর জোটসঙ্গী লালু প্রসাদ। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘‘উও গ্যয়া।’’ কোথায়, তার ব্যাখ্যা অবশ্য লালু দেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement