তেজস্বী নিয়ে কথা রাহুল-নীতীশের

বিহারে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে এমন পরিস্থিতিতে আজ দিল্লি আসেন নীতীশ কুমার। আজ বিকেলে রাহুলের তুঘলক লেনের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন নীতীশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাদাতা

নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৪:৫৯
Share:

পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

বিকেলে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে চা, রাতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নৈশভোজ। বৃষ্টি ভেজা দিল্লিতে পা দিয়ে ভারসাম্যের রাজনীতিতেই ব্যস্ত থাকলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।

Advertisement

বিহারে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে এমন পরিস্থিতিতে আজ দিল্লি আসেন নীতীশ কুমার। আজ বিকেলে রাহুলের তুঘলক লেনের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন নীতীশ। সেখানে দুই নেতার মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক হয়। জেডিইউ সূত্রে ওই বৈঠকে সৌজন্য সাক্ষাৎকার বলা হলেও, সূত্রের খবর, লালু-পুত্র তথা রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে কথা হয় দু’জনের। বিহারে তেজস্বীকে সমর্থনের প্রশ্নে কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে যে অস্পষ্টতা রয়েছে তাও দূর করার দাবিতে সরব হন নীতীশ। জেডিইউ সূত্র বলছে নীতীশ আজ রাহুলকে বলেন যে তাঁর পক্ষে দুর্নীতির সঙ্গে কোনও ভাবেই আপস করা সম্ভব নয়। রাহুলের প্রতি তাঁর পরামর্শ, যাতে কংগ্রেস সভাপতিও এই প্রশ্নে কোনও আপস না করেন। কারণ ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে লালু প্রসাদের সাংসদ পদ হারাবার পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁকে বাঁচাতে অর্ডিন্যান্স এনেছিলেন মনমোহন সরকার। কিন্তু এই রাহুল গাঁধীই তখন প্রকাশ্যে তা ছিঁড়ে ফেলে ওই অর্ডিন্যান্সকে ননসেন্স অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে মনমোহনকে সেই অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার করে নিতে হয়।

দুর্নীতি প্রশ্নে সে সময়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া রাহুল যাতে তেজস্বী প্রশ্নে কোনও আপস না করেন তার জন্যও আজ সওয়াল করেন নীতীশ। তিনি রাহুলকে বলেন, তেজস্বীর মতো এক জন অভিযুক্তকে তাঁর পক্ষেও মন্ত্রিসভায় রাখাটা সমস্যার। তার চেয়ে তেজস্বী বরং আদালতে লড়ে প্রমাণ করুন যে তিনি নিরপরাধ। যদিও এখন পর্যন্ত তেজস্বী প্রশ্নে কোনও ভাবেই পিছু হটার ইঙ্গিত দেননি লালুপ্রসাদ। এই পরিস্থিতিতে নীতীশের অনড় অবস্থান ধরে রাখলে জোট ভেঙে যাওয়ার যে সম্ভবনা রয়েছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন রাহুলও। যা তিনি চাননা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনার এত কম গোলাবারুদ? ক্যাগ রিপোর্ট ঘিরে উদ্বেগ

কংগ্রেস সূত্র বলেছে, যে কোনও মূল্যে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিহারে মহাজোট ধরে রাখতে মরিয়া সনিয়া-রাহুল। ক’দিন আগেই সনিয়াও নীতীশ-লালু ফোন করে জোট যাতে না ভাঙে তার জন্য সওয়াল করেন। রাহুল চায় ২০১৯ সালে ওই মহাজোটকে সামনে রেখে গোটা দেশ জুড়ে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী অক্ষ গড়ে তুলতে। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নীতীশ বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করার ঘোষণার পর গুলাম নবি আজাদের মতো কংগ্রেস নেতারা বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করলে তাঁদের আটকান রাহুলই। তিনি চান আপাতত নীতীশ ও লালুপ্রসাদ দুই নেতাকেই পাশে নিয়ে চলতে। তাই তেজস্বী প্রশ্নে নীতীশের অবস্থানের সমর্থন করলেও, মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের বিষয়ে সরাসরি নিজের মতামত এড়িয়ে গিয়েছেন কংগ্রেস সহসভাপতি।

বিকেলে রাহুলের পর রাতে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী যে নৈশভোজে দিয়েছেন তাতে ছিলেন নীতীশ। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের পাশে থাকার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে বিজেপির জন্য দরজা খোলা রেখে দিলেন কৌশলী নীতীশ।
ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানেও আসবেন তিনি। নীতীশের এই সৌজন্য বার্তায় বিহারে জোটের ছবি পাল্টানোর ইঙ্গিত দেখছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।

তবে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য নীতীশের উপর থেকে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। আগামী ২৮ অগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভার অধিবেশন। বিজেপি নেতা সুশীল মোদীর দাবি, ‘‘২৭ অগস্টের মধ্যে তেজস্বীকে বরখাস্ত না করলে বিধানসভা অচল করে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন