ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা

ঘোষণাই সার, কাজ হয়নি বরাকে

এক বিধানসভা ভোট ঘুরে অন্য নির্বাচনের সময় এগিয়ে এল। বরাকের উন্নয়নে ৫ বছর আগে ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্পের কাজ এগোল না একেবারেই। উপত্যকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অর্ধেকের বেশি প্রকল্পের অনুমোদনই মেলেনি। যে সবের কাজ শুরু হয়েছে, তার খরচের হিসেব পর্যন্ত অসম সরকারের কাছে নেই!

Advertisement

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

এক বিধানসভা ভোট ঘুরে অন্য নির্বাচনের সময় এগিয়ে এল। বরাকের উন্নয়নে ৫ বছর আগে ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্পের কাজ এগোল না একেবারেই। উপত্যকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অর্ধেকের বেশি প্রকল্পের অনুমোদনই মেলেনি। যে সবের কাজ শুরু হয়েছে, তার খরচের হিসেব পর্যন্ত অসম সরকারের কাছে নেই!

Advertisement

গত বারের বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের ওই আশ্বাস নিয়ে তাই ক্ষুব্ধ বরাকবাসী।

২০১১ সালের নির্বাচনের আগে বরাক উপত্যকার উন্নয়নে এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কথা বলেছিলেন গগৈ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওই ঘোষণার জেরে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোটের হাওয়া নিজের পালে টেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। বরাকের তিনটি জেলার ১৫ বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৩টিই জেতে কংগ্রেস। গগৈ ফের মুখ্যমন্ত্রী হন। অভিযোগ, এর পর ওই এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কথা তিনি আর কখনও মুখে তোলেননি।

Advertisement

এতে বিপাকে পড়েন বরাকের শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা। সাধারণ মানুষ, প্রচারমাধ্যম ও বিরোধীদের সমালোচনা ঘিরে ফেলে তাঁদের। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বরাকের মন্ত্রী, বিধায়করা কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বাজেট ঘোষণায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, বরাক উপত্যকায় এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্পের কাজ চলছে।

কিন্তু কতটা কাজ হয়েছে? শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল বিধানসভায় এ কথা জানতে চাইলে সমস্যায় পড়ে রাজ্য সরকার। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, তাঁকে অসম্পূর্ণ হিসেব দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয়েছে, সে তথ্য জানানো হয়নি। রাজ্যের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী অজন্তা নেওগের কথাতেই স্পষ্ট, গগৈয়ের আশ্বাসমতো তাঁর দফতর সমস্ত প্রকল্পে অনুমোদন দিলেও তা এক হাজার কোটিতে পৌঁছবে না। মন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে যে সব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, তার মোট খরচ ধরা হয়েছিল ৬২১ কোটি ৭৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। অনুমোদন মেলে ৩১৪ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে দু’দফায় আরও ৪৩৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু মন্ত্রী নেওগ জানাতে পারেননি, এখনও পর্যন্ত কত টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে, দ্বিতীয় দফার সমস্ত প্রকল্পে সরকারের সবুজ সঙ্কেত মিললেও খরচ সাড়ে সাতশো কোটি ছাড়াবে না।

এ নিয়ে বিজেপি ক্ষোভ জানিয়েছে। দিলীপবাবু বলেন, “দায়সারা জবাব দিয়েছে সরকার। হাজার কোটির হিসেব মেলাতে পারেনি। ঘোষিত প্রকল্পের একাংশের অনুমোদন মেলেনি। যে সব প্রকল্পের কাজ হচ্ছে, তার অধিকাংশ অন্য জেলাগুলিতেও হচ্ছে।”

কয়েক মাস আগে গগৈ মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ‘হাজার কোটির বিশেষ প্যাকেজ’ নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন গৌতম রায়ও। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৬৪ কোটি টাকা মিলেছে। এর কয়েক দিন পরই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর বরাক উপত্যকা উন্নয়ন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। তার মর্যাদা পূর্ণমন্ত্রীর সমতুল্য। গৌতমবাবু এখন বিশেষ প্রকল্পের টাকা না পাওয়ার কথা বলতে চান না। তিনি শুধু বলছেন,“এক হাজার কোটির টাকার কাজ এখানে হবে। আমি সব খোঁজ রাখছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement