পিপিএফে এত সুদ কেউ দেয় না: জেটলি

ইপিএফ-এ কর বসিয়ে চাপের মুখে পিছু হঠতে হয়েছিল। কিন্তু রাহুল গাঁধী যতই মধ্যবিত্তের ক্ষোভ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করুন, বা সঙ্ঘ পরিবার আপত্তি জানাক, পিপিএফ-সহ স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তে অনড়ই থাকতে চান অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৬
Share:

ইপিএফ-এ কর বসিয়ে চাপের মুখে পিছু হঠতে হয়েছিল। কিন্তু রাহুল গাঁধী যতই মধ্যবিত্তের ক্ষোভ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করুন, বা সঙ্ঘ পরিবার আপত্তি জানাক, পিপিএফ-সহ স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তে অনড়ই থাকতে চান অর্থমন্ত্রী। অরুণ জেটলির দাবি— অর্থনীতির যুক্তি মেনেই স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমানো হয়েছে। সর্বোপরি, বাজারের রিটার্নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার ঠিক করার বিষয়টি ইউপিএ জমানাতেও চালু ছিল।

Advertisement

কংগ্রেসের বিরোধিতার জবাবে মোদী সরকারের যুক্তি— পিপিএফ, বয়স্ক নাগরিক ও কন্যা সন্তানদের জন্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে বাজার দরের চেয়ে কিছুটা বেশি হারেই সুদ দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির পাল্টা প্রচারের সুর বেঁধে দিয়ে আজ জেটলি বলেছেন, কম হওয়ার পরেও পিপিএফ-এ ৮.১ শতাংশ সুদ এই মুহূর্তে বিশ্বে সর্বোচ্চ।

দু’দিন আগেই পিপিএফ-সহ সমস্ত স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। এর পরেই শনি ও রবিবার দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দলের অনেক নেতা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যুক্তি ছিল, এর ফলে সরাসরি মধ্যবিত্তের উপর কোপ পড়ছে। সেই ক্ষোভ কী ভাবে সামলানো হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা দরকার। আজ বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন অর্থমন্ত্রী জেটলি। যুক্তি দেন, অর্থনীতি ঢিমে তালে চলছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাতে গতি আসবে। কারণ সরকার নিজস্ব স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার কমানোয় এখন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও তাদের সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার কমাতে পারবে। এর ফলে শিল্পের জন্য বা বাড়ি-গাড়ির মতো দামি পণ্য কেনার জন্য ঋণেও সুদের হার কমবে। তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেই গতি আসবে।

Advertisement

জেটলি বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব নয় যেখানে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে গেলে কম সুদ দিতে হবে, অথচ ব্যাঙ্কে টাকা জমা রেখে বেশি হারে সুদ মিলবে। একটি অপরের সঙ্গে যুক্ত।’’ সরকারি ঋণপত্রের রিটার্নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই যে সুদের হার ঠিক হয়েছে, তা জানিয়ে জেটলি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই সরকারি ঋণপত্রে সুদের হার কমছে। সঞ্চয় ও ঋণ, দুই ক্ষেত্রেই কম হারের সুদের দিকে দেশের অর্থনীতিকে এগোতে হবে।’’

রাহুল বা কংগ্রেসের নাম অর্থমন্ত্রী না-করলেও তাঁদের সমালোচনার জবাবে রাহুল বলেন, বাজারের রিটার্নের ভিত্তিতে সুদের হার ঠিক করার এই সূত্র ইউপিএ জমানায় চালু থাকলেও সরকার কিছুটা ভর্তুকি দিত, যাতে আমজনতা বিশেষত বয়স্ক নাগরিকরা সামান্য বেশি হারে সুদ পান। কারণ তাঁরাই ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয়ে বেশি টাকা রাখেন। জেটলির দাবি, এখনও বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বাজার দরের থেকে ১০০ বেসিস পয়েন্ট, কন্যা সন্তানদের সুকন্যা সমৃদ্ধিতে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বেশি সুদ দেওয়া হচ্ছে। পিপিএফ-এও বাড়তি সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, মধ্যবিত্তরা জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখতে পারেন। সেখানে আরও বেশি সুদ মিলবে।

নতুন পরিবর্তন হল, এত দিন প্রতি বছর সুদের হার পর্যালোচনা হত। মোদী সরকার সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতি তিন মাস অন্তর সুদের হার ঠিক হবে। কারণ বাজারের পরিস্থিতি ওঠানামা করছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে ইউপিএ জমানায় এর থেকে বেশি হারে সুদ মিলত কী ভাবে? জেটলির জবাব, তখন অর্থনীতির গতি শ্লথ ছিল। ফলে সুদের হারও বেশি ছিল। জেটলির দাবি, এখন পিপিএফ-এ যে ৮.১ শতাংশ সুদ ঠিক হয়েছে, তা বিশ্বের সর্বোচ্চ। তা-ও পুরোপুরি করমুক্ত। কর ছাড় ধরলে আসলে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ মিলছে।

জাতীয় কর্মসমিতিতে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কংগ্রেসের তরফে যখন মোদী সরকারের গায়ে ‘স্যুট-বুট কি সরকার’-এর তকমা সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন এই অর্থনৈতিক যুক্তি কি আদৌ ধোপে টিকবে? বিজেপি নেতাদের যুক্তি, সে ক্ষেত্রে তিন মাস পরেই আবার সুদের হার কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়ার রাস্তা সরকারের সামনে খোলা থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন