Supreme Court

‘অনাগত শিশুর অধিকার নিয়ে কেউ ভাবছে না’

গত কাল কেন্দ্রের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্বিখণ্ডিত রায় দিয়েছিল বিচারপতি কোহলি ও বিচারপতি নাগরত্নের বেঞ্চ। তার পরে আজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মামলার শুনানি শুরু করেছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:২৫
Share:

সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

আবেদনকারী কি কোর্টের কাছে একটি শিশুকে হত্যা করার অনুমতি চাইছেন? আজ সুপ্রিম কোর্টে গর্ভপাত-মামলার শুনানি চলাকালীন এ কথাই বললেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

Advertisement

সম্প্রতি গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণী। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, এই সন্তানকে বড় করার মতো আর্থিক, শারীরিক বা মানসিক সামর্থ্য তাঁর নেই। মহিলার আবেদন ও এমসের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে গত সোমবার, ৯ অক্টোবর শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি বিভি নাগরত্নের বেঞ্চ ওই মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তার পরের দিনই একটি নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে পেশ করেন সরকারি প্রতিনিধি অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) ঐশ্বর্যা ভাটি। তিনি বলেন, এই ভ্রূণের জীবন পাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গর্ভপাতের নির্দেশ দেওয়া হলে সেটা ‘ভ্রূণ-হত্যা’ করা হবে। এ নিয়ে বিতর্ক বাধে। আজ মামলাটি ওঠে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে। আবেদনকারী মহিলার আইনজীবীর কাছে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, আপনারা কি একটি শিশুকে হত্যার জন্য আদালতের অনুমতি চাইছেন? আগামিকাল ফের এই মামলার শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্ট তার আগে এ বিষয়ে মহিলার সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছে তাঁর আইনজীবী ও সরকারি কৌঁসুলিকে।

গত কাল কেন্দ্রের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্বিখণ্ডিত রায় দিয়েছিল বিচারপতি কোহলি ও বিচারপতি নাগরত্নের বেঞ্চ। তার পরে আজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মামলার শুনানি শুরু করেছে। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘২৬ সপ্তাহ উনি কী করছিলেন? ওঁর আগেই দু’টি সন্তান রয়েছে। এখন কেন এলেন?’’ মহিলা কেন এত দেরি করে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘আমরা কি আদালতের রায়ে একটি শিশুর মৃত্যুর নির্দেশ দেব?’’

Advertisement

কেন্দ্রের প্রতিনিধি এএসজি ঐশ্বর্যা ভাটি আদালতের সামনে মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ করে বলেন, ‘‘শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার জন্য প্রস্তুত। এ অবস্থায় গর্ভপাত করা ঠিক হবে না। ভ্রূণের প্রাণের লক্ষণ রয়েছে।’’ আদালতে মহিলার আইনজীবী তাঁর যুক্তির সমর্থনে এক ধর্ষিতার মামলার রায় দেখিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এএসজি বলেন, ‘‘আবেদনকারীর ধর্ষণ হয়নি। তিনি নাবালিকাও নন। ২৬ সপ্তাহ উনি কী করছিলেন?’’ এ সময়ে প্রধান বিচারপতি জোর দিয়ে জানান, শিশুটির হয়ে কেউ কথা বলেনি। তিনি বলেন, ‘‘এখনও ভূমিষ্ঠ না হওয়া শিশুটির অধিকার সম্পর্কে আমাদের ভাবতে হবে।’’

শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, একটা কাজ করা যেতে পারে। তা হল, শিশুটিকে জন্মগ্রহণ করতে দেওয়া হোক। তার পর সরকার তার দায়িত্ব নিক। মহিলাকে আর কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করে স্বাভাবিক উপায়ে প্রসব করার কথা বলা হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও ভাবেই যেন তাড়াহুড়ো করা না হয়। তাড়াতাড়ি করে যদি প্রসব করানো হয়, সে ক্ষেত্রে শিশুটি বিকলাঙ্গ হতে পারে। প্রধান বিচারপতির কথায়, ‘‘যদি বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নেয়, তখন তো ওকে কেউ দত্তক নিতেও চাইবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন