দাম নয়! মোদীর ভাল কাজ দেখুন, দাওয়াই তেলমন্ত্রীর

তাঁর সরকারের তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের বক্তব্য, তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনা করা ঠিক নয়! সাংবাদিকরা বরং সরকারের ভাল কাজে নজর দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪৩
Share:

তখনও তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা ভোটের প্রচারে বেরিয়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে প্রতিদিন মনমোহন সিংহের সরকারকে তুলোধনা করতেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে অবশ্য সে সব বেমালুম ভুলে গিয়েছেন তিনি। তাঁর সরকারের মন্ত্রীরাও! এখন পেট্রল-ডিজেলের দামবৃদ্ধি নিয়ে টুঁ শব্দটিও করেন না নরেন্দ্র মোদী। আর তাঁর সরকারের তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের বক্তব্য, তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনা করা ঠিক নয়! সাংবাদিকরা বরং সরকারের ভাল কাজে নজর দিন।

Advertisement

মোদী জমানায় পেট্রল-ডিজেলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে ফেলেছে! আগামিকাল, মঙ্গলবার কলকাতার ক্রেতাদের ডিজেলের জন্য দিতে হবে লিটারপিছু ৬৭ টাকা ৫১ পয়সা, এবং পেট্রলের জন্য দিতে হবে লিটারপিছু ৭৬ টাকা ৬৬ পয়সা। এ নিয়ে বিরোধীদের তুমুল সমালোচনার মুখে দামবৃদ্ধির বিষয়টি থেকে কার্যত হাত তুলে নিয়ে তেলমন্ত্রীর যুক্তি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। তাই এ দেশেও তেলের দাম বাড়বেই। সাধারণ মানুষকে সুরাহা দিতে সরকার উৎপাদন শুল্ক কমাবে কি না, সেই প্রশ্নে রাজ্যের কোর্টে বল ঠেলে তেলমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যগুলিও ভ্যাট কমাতে পারে।

কিন্তু তেলমন্ত্রীর এই দাওয়াইয়েও সমস্যা। এখন সিংহভাগ রাজ্যেই বিজেপির সরকার। ফলে আগের মতো রাজ্যগুলির ঘাড়ে দোষ চাপানো মুশকিল। তাই তেলমন্ত্রী অবস্থান বদলে বলেছেন, পেট্রোপণ্যকে জিএসটি-র আওতায় আনা হোক। তাতে সারা দেশেই মানুষ ন্যায্য দরে তেল কিনতে পারবেন। ঘটনা হল, মনমোহন সিংহের জমানায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ছিল এখনকার তুলনায় অনেক বেশি। অথচ দাম ছিল এখনকার তুলনায় কিছুটা কম। এই পরিসংখ্যান তুলেই মোদীকে বিঁধছেন বিরোধীরা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ বলেন, ‘‘২০১৪-র মে মাসে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেলপিছু ১০৯ ডলার। অথচ চলতি এপ্রিলে সেই দাম কমে হয়েছে ব্যারেলপিছু ৭৭ ডলার। তা হলে তখনকার চেয়েও এখন কেন দাম বেশি?’’ বিরোধীদের অভিযোগ, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল, কেন্দ্র তখনও দাম কমায়নি। উল্টে উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে লাভের টাকায় মোদীর বিজ্ঞাপন দিয়েছে! কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সূরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মানুষের উপর বোঝা চাপিয়ে সরকার নিজের সিন্দুক ভরছে!’’ মানুষকে সুরাহা দিতে কি পেট্রল-ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক কমানো হবে? অর্থসচিব হাসমুখ আঢিয়ার জবাব, ‘‘এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পেট্রল, ডিজেলের দাম প্রায় রোজই রেকর্ড ভাঙছে কেন?

মোদী জমানায় ২০১৪-র মে থেকে ২০১৭-র সেপ্টেম্বর-এর মধ্যে ১২ বার উৎপাদন শুল্ক বেড়েছে। এই সময়ে পেট্রলে করের বোঝা বেড়েছে ৫৪ শতাংশ! ডিজেলে বেড়েছে ১৫৪ শতাংশ! গত অক্টোবরে লিটারপিছু ২ টাকা শুল্ক কমানো হয়। ফেব্রুয়ারির বাজেটে পেট্রল-ডিজেলে লিটার প্রতি ৮ টাকা হারে উৎপাদন শুল্ক কমিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু একই পরিমাণ সেস বাড়িয়ে দেওয়ায় আমজনতার কোনও লাভ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন