Cops in Dhoti-Kurta

কাশীর মন্দিরে উর্দি ছেড়ে পুলিশ পরছে ধুতি-কুর্তা!

পুজো সেরে বেরিয়ে মন্দির চত্বরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীকে সোমবার সকালে প্রশ্নটা করেই ফেলেছিলেন হৃদয়বাবু। জানতে পারেন, এখন থেকে গর্ভগৃহের দায়িত্ব সামলাবেন সাদা পোশাকের ওই পুলিশকর্মীরাই। এটাই নয়া ফরমান।

Advertisement

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ১৭:২৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অনেক ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে শেষমেশ গর্ভগৃহে ঢুকতেই চোখটা আটকে গিয়েছিল হৃদয়নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা ধুতি পরে সেখানে ভিড় সামলাছেন দু’-তিন জন।

Advertisement

বহু বছরের অভ্যাস, প্রতি দিন সকালে কাশী বিশ্বনাথের দর্শন। কিন্তু, কখনও এমনটা তো দেখেননি কেদারঘাটের কাছে সোনাপুরা রোডের বাসিন্দা বছর ষাটের হৃদয়বাবু! খাঁকি উর্দিধারীরা গোটা মন্দিরের মতো গর্ভগৃহেও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু, সেই পুলিশকর্মীরা গেলেন কোথায়? এঁরাই বা কারা?

পুজো সেরে বেরিয়ে মন্দির চত্বরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীকে সোমবার সকালে প্রশ্নটা করেই ফেলেছিলেন হৃদয়বাবু। জানতে পারেন, এখন থেকে গর্ভগৃহের দায়িত্ব সামলাবেন সাদা পোশাকের ওই পুলিশকর্মীরাই। এটাই নয়া ফরমান।

Advertisement

আরও পড়ুন
আধার তথ্য কি সত্যিই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে?

ফরমানটা ঠিক কী? উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বারাণসী রেঞ্জের আইজি দীপক রতন বুধবার বলেন, ‘‘দেখুন গর্ভগৃহ-সহ গোটা মন্দির চত্বরই পুলিশের পরিভাষায় ‘রেড জোন’। সবটার দায়িত্বেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। পরিস্থিতি বিশেষে আমাদের উর্দি ছাড়া সাদা পোশাকেও ডিউটি করতে হয়। গর্ভগৃহের ভিতরে তেমন সাদা পোশাকের কর্মী নিয়োগেরই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

কিন্তু কেন?

দীপকের দাবি, সারা দিনই বিশ্বনাথ মন্দিরে ভীষণ ভিড় হয়। গর্ভগৃহে যে হেতু জায়গা খুবই কম, তাই সেখানে বাইরের ভিড় যখন আছড়ে পড়ে, সামলানো খুবই মুশকিলের হয়ে যায়। ভক্তদের বেশির ভাগই জল, মিষ্টি, দুধ, প্রসাদ ইত্যাদি নিয়ে গর্ভগৃহে ঢোকেন। শিবলিঙ্গে সে সব ঢালার ফলে গর্ভগৃহের চাতাল সব সময়েই ভিজে থাকে। ফলে উর্দি পরে থাকা পুলিশকর্মীদের প্যান্ট-জামা গুটিয়ে রাখতে হয়। অনেক সময় ধাক্কাধাক্কিতে তাঁদের গায়েও সে সব পড়ে যায়। ফলে, উর্দি পরে সেখানে কাজ করাটা খুবই সমস্যার। বরং সাদা পোশাকে কাজ করলে সুবিধাই হয়। তাঁর কথায়, ‘‘মন্দিরের ভিতরে তো আর জুতো, মোজা, বেল্ট পরে কাজ করা যায় না। উর্দি পরেও ওখানে কাজ করার অনেক অসুবিধা। তাই সাদা পোশাকের ব্যবস্থা।’’

আরও পড়ুন
বাঙালির হাত ধরে সার্ভাইক্যাল ক্যানসারে জোরালো ওষুধ?

পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরোহিতদের একাংশ। দীর্ঘ দিন ধরেই মন্দিরে পুজোর কাজ করেন কাশী মিশ্র। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেক দিন ধরেই পুলিশকর্তাদের বলছিলাম, গর্ভগৃহে পুলিশকর্মীরা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে কাজ করলে ভাল হয়। ভক্তরাও তাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। ওঁরা সেটা মেনেছেন। সোমবার থেকেই গর্ভগৃহে সাদা ধুতি আর হলুদ পাঞ্জাবি পরে কাজ করছেন পুলিশকর্মীরা।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বারাণসীরই সাংসদ। আবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গোরক্ষনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। মোদী-যোগী জমানায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এমন রূপান্তরকে অনেকেই দু’হাত তুলে স্বাগত জানাচ্ছেন। কেউ বা আবার মুচকি হাসছেনও। যেমন রেলকর্মী পার্থ চক্রবর্তী। গোধূলিয়ার ওই বাসিন্দা অবসর সময়ে পুজোআচ্চার কাজ করেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি বাইরে থেকে মন্দির দর্শন করি। গর্ভগৃহে দেবদর্শন করি না। তার কারণ, ওই পুলিশ। আকাচা জামাকাপড় পরে আমার গায়ে হাত দিয়ে বলবে, এগিয়ে যান...কোথাও একটা অশুদ্ধ মনে হত নিজেকে। এ বার থেকে যাব।’’

দশাশ্বমেধ ঘাটের কাছে প্রায় পঞ্চাশ বছরের বাস সেন পরিবারের। ওই পরিবারের রতনবাবু পুলিশের এই ধুতি-পাঞ্জাবি পরার কথা শুনে শুধুই হাসলেন। বললেন, ‘‘কী বলি বলুন তো! মন্দির কমিটির চাপে প্রশাসন মাথা নোয়াল বলেই মনে হচ্ছে। আর বাকিটা তো নিরাপত্তার ব্যাপার। তা নিয়ে আমার মতো সাধারণ মানুষের মন্তব্য না করাই ভাল।’’ ফোন রাখার আগে আবারও হাসলেন তিনি।

তবে এই মন্দির কমিটির চাপের বিষয়টা মানতে নারাজ দীপক। তিনি বলেন, ‘‘অসুবিধাটা যাঁদের হত, সেই পুলিশকর্মীদের কথা ভেবেই এটা করা হয়েছে। এর সঙ্গে চাপের কোনও সম্পর্ক নেই। ভিভিআইপি ডিউটিতেও তো আমরা সাদা পোশাক পরি। ওটাও দস্তুর। যেমন কাজ, তেমন পোশাক। এতে সমস্যার তো কিছু নেই। আর গর্ভগৃহ বাদে বাকি মন্দিরের সবখানেই খাঁকি পোশাকের পুলিশ থাকছে তো।’’

এ দিন হৃদয়বাবু সঙ্গে কথা বলার সময়, তিনি হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘পুলিশকেও কেমন ওই গর্ভগৃহের মধ্যে পাণ্ডা পাণ্ডা লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন