টানা নোট ভোগান্তি কাঁটা হবে উত্তরপ্রদেশে, আশঙ্কায় বিজেপি

মানুষ এখনও সয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু নোট ভোগান্তি অচিরে বন্ধ না-হলে জন-বিক্ষোভে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছে বিজেপি। বিজেপি নেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৭
Share:

মানুষ এখনও সয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু নোট ভোগান্তি অচিরে বন্ধ না-হলে জন-বিক্ষোভে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছে বিজেপি।

Advertisement

বিজেপি নেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষ নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। এর পক্ষে-বিপক্ষে জনমত সমীক্ষার জন্য মোবাইল অ্যাপের সাহায্য নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ এই সমীক্ষায় সাড়া দিয়েছেন, এবং তার মধ্যে ৯৩ শতাংশই মোদীর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বলে দাবি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের। সিদ্ধান্তটিকে ‘ভীষণ খারাপ’ বলে রেটিং দিয়েছেন মাত্র ২ শতাংশ মানুষ। এই তথ্য নিশ্চিত ভাবেই বিজেপি নেতাদের মুখের হাসি আরও চওড়া করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেও অ্যাপ-সমীক্ষার রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, ‘‘বিরোধীরা যা-ই বলুন, এটাই দেশের জনমত।’’ অথচ দলের সমীক্ষা বলছে— নোট বাতিল নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে স্বাভাবিক না-হলে ডিসেম্বরের গোড়াতেই মানুষের বিরক্তি ক্ষোভে পরিণত হতে পারে। কারণ নানা প্রয়োজনে মানুষকে মাস পয়লায় একলপ্তে অনেক টাকা তুলতে হয়। সেটা না-পেলেই বদলে যেতে পারে আম জনতার সুর। আর উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে তার ফল ভুগতে হতে পারে বিজেপিকে।

দলের রিপোর্টে এই আশঙ্কা উঠে আসায় চিন্তা বেড়েছে অমিত শাহের। জরুরি ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তার পর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বেশি বৈঠক করেন বিজেপি সভাপতি। সেখানেও অমিত শাহ আর্জি জানান, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হলে দল বিপদে পড়বে। ঘনিষ্ঠ মহলে অমিত শাহ বলছেন, এখনও পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে পরিস্থিতি জটিল হলেও বিজেপির অনুকূলেই রয়েছে। নোট ভোগান্তি যাতে দীর্ঘস্থায়ী না-হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের ভোট নিয়ে বিজেপির সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ছোট শহর, গ্রাম-গঞ্জ, এমনকী বড় শহরের গরিবরা ক্রমে ক্রমে বিরক্ত হয়ে উঠছেন। প্রত্যেকের হাতে যে পরিমাণ টাকা সাধারণত থাকে, তার সঙ্গে ব্যাঙ্ক থেকে অল্পবিস্তর টাকা তুলে ১০-১৫ দিন অনায়াসে চলে গিয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় দোকানদারেরা ধার-বাকিতেও জিনিস দিয়ে থাকেন। কিন্তু ডিসেম্বরের মাস পয়লায় তাঁদেরও টাকা প্রয়োজন হবে। মেটাতে হবে ধার-বাকিও। আসল সঙ্কট তখনই শুরু হবে। ফলে এখনও পর্যন্ত যে আম-জনতা কষ্ট সয়েও সরকারের সদিচ্ছাকে সমর্থন জানাচ্ছেন, তাঁরাই তখন ত্রাহি-ত্রাহি রব তুলবে।

বিজেপির এক নেতার কথায়, নোট বাতিলের ঘোষণার পর দু’সপ্তাহ পার হতে চলল। এখনও পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলি বাড়তি ঝক্কি পুইয়েও বড়জোর দশ শতাংশ নোট বদল করতে পেরেছে। এই গতিতে চললে শুধু নোট বদলাতেই ডিসেম্বর পেরিয়ে যাবে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমার মধ্যে পরিস্থিতি যে পুরোদস্তুর স্বাভাবিক হবে না, তা স্পষ্ট। ডিসেম্বরের পর টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হলে আরও চাপ বাড়বে ব্যাঙ্কের উপর। তখন আবার নতুন সঙ্কট তৈরি হবে।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের হিসেবে, বাজারে ১৫৭০ কোটি পুরনো ৫০০ টাকার নোট রয়েছে। ১০০০ টাকার নোটের পরিমাণ অন্তত ৫৩০ কোটি। সব মিলিয়ে ২১০০ কোটি নোট। আর দেশের টাঁকশালগুলিতে প্রতি মাসে নোট ছাপানোর ক্ষমতা সাকুল্যে ৩০০ কোটি। ফলে পুরো নোট বদল করতে লেগে যাবে কম করে ৭ মাস। আর সে কারণেই মোদী এই সময় কম করতে হাজারের বদলে ২০০০ টাকার নোট ছাপাচ্ছেন। কিন্তু বাজারে পর্যাপ্ত ছোট নোট না থাকায় সেই ২০০০ টাকাও কার্যত ‘অচল’ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিয়েও বিপদে পড়ছেন। ফলে সরকারের সিদ্ধান্ত একটি বড়সড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে বলেই মনে করছেন চিদম্বরম।

ঘরোয়া স্তরে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, ‘‘অর্থক্রান্তি সংস্থার চেয়ারম্যান অনিল ভকিল বিজেপির কিছু বাছাই করা নেতাকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন গত বছর। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব তখন সেই প্রস্তাব বাতিল করে দেন। কারণ, ‘ক্যাশ-লেস’ হওয়ার জন্য অন্য উন্নত দেশের মতো ভারতে এখনও পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। ওই নেতার কথায়— ‘‘ভকিল পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে এই প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন। আর প্রধানমন্ত্রী গোটা বিষয়টি গোপন রেখে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ ভকিল অবশ্য বলছেন, সরকার তাঁদের প্রস্তাব আংশিক গ্রহণ করেছে। সুষ্ঠু রূপান্তরের মাধ্যমে ৫০০-১০০০-এর নোট বাতিল করার প্রস্তাব তাঁরা দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তার বদলে আরও বড় নোট আনার কথা বলা হয়নি। কারণ নোট বদলালেই কালো টাকা মিটবে না।

বিজেপির মতে, সরকার যদি পর্যাপ্ত নগদের জোগান সুনিশ্চিত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে, তা হলে উত্তরপ্রদেশে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়েও দল সরকারে আসতে পারে। আর সেটা করা না-গেলে সব আশা মাটি। কারণ যে গরিবের ‘মসিহা’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁরাই মোদীর দলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই দ্রুত নগদের জোগান বাড়ানোর বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে বলছেন প্রধানমন্ত্রী। রোজ বৈঠক করছেন। অর্থমন্ত্রীও প্রতিদিন আশ্বাস দিচ্ছেন, বাজারে জোগানের কোনও অভাব নেই।

আর এই আশঙ্কা থেকেই মঙ্গলবার দলের সব সাংসদকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন— মানুষকে এর সুফল বোঝাতে নামুন। বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে প্রচার করতে হবে, মানুষের দুর্ভোগ সাময়িক।

কিন্তু মানুষ যখন নোটের অভাবে চরম ভোগান্তিতে, তখন নেতাদের প্রচারে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন