—ফাইল চিত্র।
ফেসবুক-টুইটারে নরেন্দ্র মোদীর কেমন কী সমালোচনা হচ্ছে, রাহুল গাঁধীর আক্রমণ কতটা সাড়া ফেলছে মানুষের মনে— এ সবের আঁচ পেতেই নেট-দুনিয়ায় নজরদারির জন্য ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’ তৈরির কাজ শুরু করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। জারি হয় বিজ্ঞপ্তিও। কিন্তু তৃণমূলের বিধায়ক মহুয়া মৈত্রের মামলার ধাক্কায়, বিপদের আঁচ পেয়ে পিছু হটল কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টে আজ কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল জানিয়ে দিলেন, মোদী সরকার ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’ তৈরির বিজ্ঞপ্তি বাতিল করছে। সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত নীতির পর্যালোচনা করবে সরকার। আদালতে এই অবস্থান জানানোর পরে বিকেলেই গত বিজ্ঞপ্তিটি প্রত্যাহার করে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক।
কেন্দ্র নিজেই লড়াই থেকে সরে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উল্লসিত সাংবিধানিক অধিকার ও ব্যক্তিপরিসরের অধিকারের পক্ষে সওয়ালকারীরা। তৃণমূল-সহ গোটা বিরোধী শিবিরও একে জয় হিসেবেই দেখছে। আর মহুয়া বলেন, ‘‘সত্যের সর্বদা জয় হয়।’’ তাঁর মতে, ‘‘এটা সাধারণ নাগরিকের জয় এবং সরকারের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ।’’
সরকারি সূত্রের খবর, বিপদের গন্ধ পেয়েই এই পিছু হটার সিদ্ধান্ত। সরকারের অন্দরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিতে পারে। তাতে সরকারের মুখ পুড়বে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চে মহুয়া অভিযোগ জানিয়েছিলেন, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপে নজর রাখতে গিয়ে মোদী সরকার আমজনতার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। যা শুনে গত ১৩ জুলাইয়ের শুনানির সময় বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘যদি সব টুইট, হোয়াটসঅ্যাপ দেখা হয়, তবে তো আমরা নজরদার রাষ্ট্র তৈরির দিকেই এগোচ্ছি!’ আজ তাই ঝুঁকি না নিয়ে শুনানির শুরুতেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে দেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এর আগে মোদী সরকারের দাবি ছিল, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে মানুষের মনে কী ধারণা, তা বুঝতেই সরকার ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’ গড়ছে। এর মাধ্যমে দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তিকে কালি ছেটানোর চেষ্টা করলে, তারও পাল্টা জবাব দেওয়া যাবে এতে। গত এপ্রিলের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্র এমন এক প্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরি করতে চায়, যা ডিজিটাল দুনিয়ায় ৩৬০ ডিগ্রি নজরদারি চালাবে। টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে কী নিয়ে আলোচনা চলছে সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার তথ্য জোগাড় করবে। এমনকি, ইমেল থেকেও তথ্য নেওয়া যাবে। প্রয়োজনে ফেসবুক বা টুইটার অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারিও চলবে। সরকারের ‘প্রতিদ্বন্দ্বীদের’ উপরেও নজর রাখা হবে।
মহুয়ার পিটিশনে যুক্তি ছিল, সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তিপরিসর নিয়ে রায়ে স্পষ্ট বলেছে, যদি দেশের স্বার্থে কারও ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড়ের প্রয়োজনও সরকারের হয়, তার জন্য আগে সেই তথ্য সুরক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্র এ বিষয়ে কোনও আইন তৈরি না করেই ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছে। আজ তিনি বলেন, ‘‘নীতিগত বা আইনি, কোনও দিক থেকেই ওই সিদ্ধান্তের পক্ষে বলার মতো কিছু ছিল না সরকারের কাছে।’’