গতি..গতি..গতি...আরও গতি। গতির মন্ত্রেই আজ আবাহন হল গতিমান এক্সপ্রেসের। গতির প্রশ্নে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল ভারতীয় রেল।
ঠিক সকাল ১০ টায় দিল্লির নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে গতিমান এক্সপ্রেসের ফ্ল্যাগ অফ করেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। গন্তব্য আগরা। রেলের দাবি, সময় লাগবে ১০০ মিনিট।
প্রাথমিক জড়তাটুকু কেবল কাটার অপেক্ষা। ওখলা স্টেশন পার হতেই হাল্কা ধাক্কা। গতি নিল ট্রেন। স্পিডোমিটার জানাচ্ছে ৯০..১০০..১১০... মুহূর্তে মুহূর্তে গতি বাড়াচ্ছে গতিমান। তুঘলকাবাদ স্টেশন পার হতেই জানা গেল ট্রেন রাজধানীর সর্ব্বোচ্চ সীমাকে পেরিয়ে গিয়েছে। সামনে কেবল শতাব্দী। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলাম তা-ও। ট্রেনের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে মুহুর্মুহু ঘোষণা জানিয়ে দিচ্ছে, নতুন ট্রেন কখন, কোথায়, ভেঙে-নতুন করে গড়ছে গতির রেকর্ড। বুলেট ট্রেন দূরের স্বপ্ন। সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সেমি হাইস্পিড আজ থেকে দেশবাসীর কাছে ঘোর বাস্তব।
ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দেশবাসীকে বুলেট ট্রেন চড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কাজও এগিয়েছে অনেকটা। আমদাবাদ থেকে মুম্বইয়ের রুটের ফিজিবল স্টাডির কাজও শেষ। কিন্তু বিপুল খরচের ধাক্কা। তাই হাত গুটিয়ে এ মুহূর্তে বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন পূরণে বেসরকারি বিনিয়োগের উপর ভরসা রাখছে রেলমন্ত্রক।
বুলেট ট্রেন সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সেমি হাইস্পিড তা কি সম্ভব? জানতে চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। রেলমন্ত্রকের অফিসারেরা জানান, বর্তমান ভারতীয় রেলের যা পরিকাঠামো তাতে আধুনিক ইঞ্জিনগুলি প্রায় ১৮০ কিলোমিটার গতি তুলতে সক্ষম। এলএইচবি কোচগুলিও সেই গতির সঙ্গে যাতে পাল্লা দিয়ে ছুটতে পারে সেই ভেবেই তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিক করা হয়েছে সিগন্যালিং ব্যবস্থাও। রেলের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে সেমি হাইস্পিড ট্রেন চালানোর উপর জোর দেয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। তারপরেই চলতি বাজেটেই গতিমান ট্রেন চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। আর্থিক বছরের শুরুর প্রথম সপ্তাহেই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করল তাঁর মন্ত্রক।
যদিও সলতে পাকানোর কাজ শুরু চলছিল বেশ কিছু সময় ধরেই। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, গতিময় এক্সপ্রেস চালানো হবে ১৬০কিলোমিটার গতিতে। তারপর ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে ১৮০ কিমি ও পরে দুশো কিলোমিটার গতিতে তা চালানো হবে। প্রাথমিক প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয় আগ্রা-দিল্লি রুটকে। কিন্তু রেলের ইচ্ছায় বাদ সাধে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি। তারা জানায়, রেললাইনের দুধারে বেড়া না দেওয়া পর্যন্ত ওই গতিতে ট্রেন চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়। রেলওয়ে সেফটির আশঙ্কা ছিল, বেড়া না থাকায় গরু-মোষের মতো প্রাণী চলে এলে বেলাইন হতে পারে দ্রুতগতিতে ছোটা গতিমান। হতে পারে বড় মাপের দুর্ঘটনা। তারপরেই দিল্লি থেকে মথুরার মধ্যে লাইনে বেড়া দেওয়ার কাজে হাত দেয় রেল।
সেই কাজ শেষ হতেই শুরু হয় পরীক্ষামূলক দৌড়। গোটা সাতেক ট্র্যায়াল রানের পর আজ ওই ট্রেন খুলে দেওয়া হয় যাত্রীদের জন্য। শতাব্দী এক্সপ্রেসের মডেলে স্বল্প দূরত্বের দু-তিনটি শহরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতেই ব্যবহার হবে গতিমান। শতাব্দীর মতোই বসার ব্যবস্থা চেয়ার কারে। এছাড়া প্রথমবার এই ট্রেনেই রেলের পক্ষ থেকে ট্রেন হোস্টেসের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়ার শুরু করল রেল। তবে সাধারণ ট্রেনের এসি চেয়ার কার বা শতাব্দীর থেকে এই ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি। ট্রেন যাত্রীদের জন্য রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট পরিষেবা। যা ওয়াই ফাই ব্যবস্থার মাধ্যমে নিখরচায় দিতে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রেল।
হঠাত্ ঘোষণা ভেসে এল মাইকে-বল্লবগঢ়-কোশীর মাঝে গতিমান এক্সপ্রসে ১৬০ কিলোমিটার গতি ছুঁতে সক্ষম হয়েছে। মুহূর্তে হইচই করে উঠল গোটা কামরা। যা সংক্রমিত হল কার্যত গোটা ট্রেনেই। ঠিক এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিটের মাথায় মথুরা পেরিয়ে গেল গতিমান। আর বাকি কুড়ি মিনিট। শুরু হল নামার প্রস্তুতি। গতিমানে গতিময় এক যাত্রার অনুভূতি নিয়ে যখন আগরা নামলাম, তখন ঘড়ির কাঁটা বলছে, ঠিক ৯৯ মিনিট আগে দিল্লি ছেড়েছিলাম আমরা।