নোট বাতিল নিয়ে আগাগোড়াই তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় চলে এলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সে রাজ্যের একটি গ্যাস উত্তোলনকারী সংস্থা দুর্নীতিতে জড়িয়েছিল। আর সেই দুর্নীতির ভাগীদার ছিলেন উর্জিত পটেলও। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত উর্জিত বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের পর থেকেই ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সরব মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ মানুষের হয়রানির অভিযোগ তুলে ভিন্ রাজ্যে সভাও করেছেন তিনি। এ দিনও ওড়িশার বালেশ্বরে সভা করেছেন শুভেন্দু অধিকারীরা। আর নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীকে তুলোধনা করেন মমতা।
কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের সীমাহীন হয়রানি দেখেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর চুপ করে রয়েছেন কেন, এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘কত নোট ছাপাচ্ছেন, কত নোট লাগে, কোন রাজ্যে কত নোট দিয়েছেন, নোট ছাপানোর কাজ কারা করছে, কাগজ কারা সরবরাহ করছে — সে সব আপনি বলছেন না কেন?’’ একটু থেমে নিজেই উত্তর দেন, ‘‘উনি আর বলবেন কী করে! উনি তো প্রধানমন্ত্রীকে ভয় পান। গুজরাতে জিএসপিসি-র দুর্নীতির সঙ্গে তো উনিও জড়িত।’’
কী অভিযোগ উর্জিতের বিরুদ্ধে?
গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেডে (জিএসপিসি) দীর্ঘদিন নন-এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন উর্জিত। ২০০৫ সালে ক্যাগের দেওয়া রিপোর্ট দেখিয়ে মমতা দাবি করেন, ওই বছর উর্জিতকে সঙ্গে নিয়ে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, জিএসপিসি কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিনে ২০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস তুলবে। যার বাজার দর দু’লক্ষ কোটি টাকা। এই প্রকল্প দেখিয়েই পনেরোটি ব্যাঙ্ক থেকে ১৯ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা দেনা করে জিএসপিসি। কিন্তু চার বছর পরে তারা সমীক্ষা করে জানায়, ওই বেসিন থেকে ঘোষণার মাত্র ৫% গ্যাস পাওয়া যাবে। এবং তা-ও উত্তোলন করা যাবে না। কারণ, তা ব্যয়সাপেক্ষ। মমতার দাবি, এখন সেই সংস্থা প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। ঋণের একটি টাকাও শোধ করেনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কিছু বলছি না। ক্যাগ-এর রিপোর্টেই ওই দুর্নীতির উল্লেখ রয়েছে। মনে রাখবেন, ক্যাগ-এর রিপোর্ট থেকেই কিন্তু টুজি, কয়লা দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে।’’
তবে ঋণ পাওয়াতে উর্জিতের ভূমিকা ছিল কি না— তা খোলসা করেননি মমতা। সে সব খুঁজে বের করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের উপরেই ছেড়ে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নন পারফর্মিং অ্যাসেট-এর নামে অনেক দুর্নীতি হচ্ছে। খোঁজ নিন। ওই সব সংস্থার ‘নন-পারফর্মিং অ্যাসেট’ লুকোতেই নোট বাতিল করা হয়েছে।’’