দেশের জনপ্রিয় পর্যটনস্থলে মিলবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস

সম্প্রতি দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থায় বদল আনার জন্য পুণের আবহাওয়া দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন মৌসম ভবনের কর্তারা। সেখানেই পর্যটকদের জন্য বিশেষ পূর্বাভাসের প্রসঙ্গটি ওঠে। বৈঠকেই স্থির করা হয়েছে, এ বার থেকে দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া হবে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ২০:৪১
Share:

ভরা সেপ্টেম্বরে দার্জিলিং ঘুরতে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন বাসুদেব গঙ্গোপাধ্যায়। শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে পাহাড়ি পথ ধরতেই মুষলধারে বৃষ্টি নামল। ধসে রাস্তা আটকে যাওয়ায় ঘোরাটাই পণ্ড হওয়ার জোগাড়!

Advertisement

সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে গোয়ায় হনিমুনে গিয়েছিলেন সুপ্রিয় হালদার। ইচ্ছে ছিল, ওয়াটার স্কুটারে চেপে বলিউডি সিনেমার কায়দায় সাগরের জলে তুফান তুলবেন। স্কুটারে উঠেও ছিলেন। কিন্তু জোরালো হাওয়া আর ঢেউয়ের দাপটে ঠিক জমিয়ে উপভোগ করতে পারেননি।

বিদেশে কিন্তু পর্যটকেরা এমন অবস্থায় পড়েন না। কারণ, পর্যটনের জায়গাগুলিতে কোথায় কখন কী ধরনের আবহাওয়া থাকবে তার নির্দিষ্ট পূর্ভাভাস দেওয়া হয় ঘণ্টায় ঘণ্টায়। ফলে পর্যটকেরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে যেতে পারেন। এড়ানো যায ভোগান্তি। সাশ্রয় হয় অর্থেরও। ঝড়-জল-বৃষ্টি-গরমের চিরাচরিত পূর্বাভাসের বাইরে বেরিয়ে এসে পর্যটকের জন্য বিশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে দিল্লির মৌসম ভবন।

Advertisement

সম্প্রতি দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থায় বদল আনার জন্য পুণের আবহাওয়া দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন মৌসম ভবনের কর্তারা। সেখানেই পর্যটকদের জন্য বিশেষ পূর্বাভাসের প্রসঙ্গটি ওঠে। বৈঠকেই স্থির করা হয়েছে, এ বার থেকে দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া হবে। এর ফলে ভ্রমণপিপাসু জনতার সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের শীর্ষকর্তারা।

আরও পড়ুন- যোগ্যতা ছাড়াই সাঁতার শেখাচ্ছেন অনেকে, নিয়ম মানছে না ক্লাবগুলো

কেমন হবে সে পূর্বাভাস?

মৌসম ভবনের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, পর্যটনভিত্তিক আবহাওয়ার জন্য চারটি বিভাগ তৈরি করা হয়েছে। · উপকূলীয় পর্যটন, · পাহাড়ি পর্যটন, · তীর্থযাত্রা এবং · ঐতিহাসিক পর্যটন। চারটি ভাগের জন্য আলাদা আলাদা আবহাওয়ার চরিত্র ঠিক করা হয়েছে। যেমন, উপকূলীয় এলাকায় লোকে সাগরে স্নান করতে নামেন, নৌকো বা লঞ্চে চেপে সাগরে বেড়ান, অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় প্যারাগ্লাইডিং করেন বা ওয়াটার স্কুটারে চাপেন। তাই উপকূলীয় এলাকার জন্য চার-পাঁচ দিনের হাওয়ার গতিবেগ, ঢেউয়ের উচ্চতার নির্দিষ্ট পূর্বাভাস মিলবে। পাহাড়ের ক্ষেত্রে জোরালো বৃষ্টি হবে কি না, আকাশ সাফ থাকবে কি না, সে সব জানানো হবে। একই ধরনের চরিত্র থাকছে ঐতিহাসিক পর্যটনের ক্ষেত্রেও। তীর্থযাত্রার নির্দিষ্ট তীর্থস্থলের ক্ষেত্রে ভারী বৃষ্টি হবে কি না কিংবা তাপমাত্রা কতটা থাকবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বলছেন, শুধু চার-পাঁচ দিন নয়, পর্যটনের ক্ষেত্রে মরসুমি পরামর্শও দেওয়া হবে। অর্থাৎ, বছরের কোন সময়ে কোন এলাকায় ঘুরতে গেলে ভাল ভাবে ঘোরা যাবে, তা বলে দেওয়া হবে ওই পরামর্শবার্তায়। ‘‘সেই পরামর্শ মেনে চললে ভ্রমণে প্রকৃতির বাধা দেওয়ার আশঙ্কা কম। বিপদও এড়ানো যাবে,’’ বলছেন আবহাওয়া দফতরের ওই কর্তা। তাঁর ব্যাখ্যা, কেউ হয়তো রাজস্থানের জয়সলমেরে যাবেন। তিনি পরামর্শবার্তা দেখে জানতে পারবেন যে কোন সময়ে গেলে আবহাওয়া মনোরম থাকবে, মরুরাজ্য চষে বেড়ালেও বিশেষ কষ্ট হবে না। আবার গ্যাংটক, দার্জিলিঙে বেড়াতে গেলে কোন সময়ে যাওয়া ভাল, সেটাও বলে দেওয়া থাকবে।

মৌসম ভবনের খবর, পর্যটন পূর্বাভাস কী ভাবে দিলে ভাল হয় সে ব্যাপারে পরামর্শ চাইতে পর্যটন মন্ত্রক এবং রাজ্যের পর্যটন দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন তাঁরা। কথা বলবেন ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন