এক দিকে কয়লা, অন্য দিকে জল। এই দুইয়ের অভাবে দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি নরেন্দ্র মোদীর সরকার এ জন্য মনমোহন জমানার নীতিকেই দায়ী করেছে।
গরমের ফলে এমনিতেই যখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, সে সময় উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার অভাব দেখা দিয়েছে। কোথাও দু’দিন, কোথাও চার দিন চলার মতো কয়লা রয়েছে। যেখানে অবস্থা ভাল, সেখানেও কয়লা এক সপ্তাহের চেয়ে কম দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো কয়লা আছে। গত সোমবার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা এনটিপিসি কেন্দ্রীয় সরকারকে জরুরি বার্তায় জানিয়েছে, যে কোনও সময়ে ছ’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
একই ভাবে ঠিক মতো বর্ষা না হওয়ায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। গত এক মাসে ৮৫টি বড় মাপের জলাধারে জলের স্তর অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ৩১টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ক্ষমতার ৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। আজ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সঙ্কট ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র। কিন্তু এই সঙ্কটের জন্য তিনি মনমোহন সরকারের ভুল নীতির দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর যুক্তি, গত পাঁচ বছরে যে হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে, সেই হারে কয়লার উৎপাদন বাড়েনি।
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে কয়লা থেকে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। অথচ দেশে কয়লার জোগান বেড়েছে মাত্র ২২.৫ শতাংশ। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছেন, বহু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে কয়লার অভাব রয়েছে, তা সকলেরই জানা। কিন্তু সমস্যার মূলে গেলে দেখা যাবে, ২০০৯ থেকে এই সঙ্কট আরও ঘোরালো হয়েছে। ২০০৮-’০৯-তে ৩৪২.৬ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন হয়েছিল। পাঁচ বছর পরে ২০১৩-’১৪-য় কয়লা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে মাত্র ৪১৯.৬ মিলিয়ন টন। বার বার নীতি বদল এবং অনিশ্চয়তাই এর জন্য দায়ী।
বিদ্যুৎমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, পরিবেশের উপর জোর দিতে গিয়ে ২০০৯ সালে মনমোহন সরকার কোথায় কয়লাখনি করা যাবে, কোথায় করা যাবে না, তা চিহ্নিত করে। ফলে নতুন খনি খোলা যায়নি। পুরনো খনিগুলিতেও উৎপাদন কমে যায়। ২০১২ সালে আবার সেই নীতি বদলে ফেলা হয়। ২০১০ সালে নতুন পরিবেশ দূষণ সূচক তৈরি হয়। তার ফলেও সাতটি কয়লা খনিতে কয়লা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পীযূষ বলেন, “এর ফলে বিপুল পরিমাণে কয়লা আমদানি করতে হয়েছে।”
এখন পরিস্থিতি সামলাতে নতুন এলাকায় কয়লা খননের কাজ শুরু করার অনুমতির জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রক পরিবেশ মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছে। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিকে কয়লা সরবরাহ বাড়াতে অনুরোধ করেছে কেন্দ্র। খনি থেকে তোলার পর কয়লা ভাঙার ও তার ধুলো সাফ করার জন্য নতুন পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজন পড়লে যেন কয়লা আমদানি করা হয়। সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার জোগানের উপর নজর রাখা হচ্ছে। কোল ইন্ডিয়া কয়লার উৎপাদন ও তার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কেন্দ্রকে জরুরি বার্তায় এনটিপিসি যে ৬টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কথা জানিয়েছিল সেগুলিতে গোটা দেশের ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রকের বক্তব্য, চলতি মাসের শুরুতেও পরিস্থিতি খুব একটা ভাল ছিল না। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ গত ৯ জুলাইয়ে ৪৫টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হিসেব করে দেখেছিল, সেখানে সাত দিনেরও কম কয়লার জোগান রয়েছে। অথচ গরমের জন্য গত জুন মাসে গোটা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৪৭ মেগাওয়াটে পৌঁছে গিয়েছিল। যার মধ্যে ৫ হাজার ২৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা যায়নি। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী আজ দাবি করেছেন, নতুন সরকার যে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে এক থেকে তিন বছরের মধ্যে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়ে যাবে।