National News

মুথুভেল করুণানিধি, রাজনীতির ‘কালাইগনার’

১৯২৪ সালের ৩ জুন জন্ম মুথুভেল করুণানিধির জন্ম তামিলনাড়ুর নাগাপাট্টিনাম জেলার তিরুক্কুভালাই গ্রামে। তখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। বয়স মাত্র ১৪। ওই অল্প বয়সেই জাস্টিস পার্টির নেতা আলাগিরিস্বামীর বক্তৃতা শুনে রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে খুব উৎসাহী হয়ে পড়েন করুণানিধি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ২১:১২
Share:

একটি বর্ণময় জীবন। কখনও তিনি লেখক, কখনও কোনও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার। কখনও বা তিনি রাজনীতিক। তামিল রাজনীতির এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ ‘ঈশ্বর’। যাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে কখনও তিনি দেশের ‘কিং মেকার’।

Advertisement

১৯২৪-এর ৩ জুন জন্ম মুথুভেল করুণানিধির জন্ম তামিলনাড়ুর নাগাপাট্টিনাম জেলার তিরুক্কুভালাই গ্রামে। তখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। বয়স মাত্র ১৪। ওই অল্প বয়সেই জাস্টিস পার্টির নেতা আলাগিরিস্বামীর বক্তৃতা শুনে রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে খুব উৎসাহী হয়ে পড়েন করুণানিধি। যোগ দেন ‘দ্রাবিড় স্বাভিমান আন্দোলন’-এ। তবে রাজনীতিতে পা রাখলে কি হবে, ওই সময় লেখক হিসেবেই ছড়িয়ে পড়ে তাঁর খ্যাতি। ছোটবেলা থেকেই লিখতেন কবিতা। বয়স একটু বাড়তে উপন্যাস, নাটকও লিখতে শুরু করেন করুণানিধি। সেই লেখার খ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে যায় যে তাঁকে দিয়ে চিত্রনাট্য লেখানোর জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক, পরিচালকদের মধ্যে। লেখক হিসেবে তাঁর সেই খ্যাতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, পুরোদস্তুর রাজনীতিক হয়ে ওঠার পরেও ‘কালাইগনার’ অর্থাৎ ‘শিল্পী’ বলে ডাকা হত করুণানিধিকে। আপামর জনতা তো বটেই, তামিল রাজনীতি মহলেও তাঁকে ‘কালাইগনার’ বলারই চল ছিল বেশি। দেশের স্বাধীনতার দু’বছর পর, ১৯৪৯ সালে করুণানিধি যোগ দেন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগম (ডিএমকে)-এ। তার পর রাজ্য বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য হতে তাঁর সময় লেগেছিল আরও ৮ বছর। তামিলনাড়ু বিধানসভায় করুণানিধি প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৫৭ সালে। তখন তাঁর বয়স ৩৩। বিধানসভায় নির্বাচিত সদস্য হয়ে ঢোকার পর জীবনে আর কখনও কোনও বিধানসভা ভোটে হারেননি ‘কালাইগনার’। ১৯৬১ সালে ডিএমকে-র কোষাধ্যক্ষ হন তিনি। আর তার পরের বছর হন তামিলনাড়ু বিধানসভায় বিরোধী দলের উপনেতা। তার ৫ বছর পর প্রথম মন্ত্রিত্ব পান করুণানিধি। ১৯৬৭ সালে তামিলনাড়ুর পূর্তমন্ত্রী হন।

Advertisement

তবে তার পর শুরু হয় ‘কালাইগনার’-এর দ্রুত উত্থান। মন্ত্রিসভায় প্রথম আসার দু’বছরের মধ্যেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান করুণানিধি। ১৯৬৯ সালে তামিলনাড়ুর তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী আন্নাদুরাইয়ের মৃত্যুর পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ‘কালাইগনার’। সেই ১৯৬৯ সাল থেকে মোট ৫ বার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন করুণানিধি।

আরও পড়ুন- প্রয়াত করুণানিধি, শোকপ্রকাশ মোদীর, চেন্নাইয়ের পথে মমতা​

আরও পড়ুন- করুণানিধির অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক, হাসপাতালে অনুগামীদের ভিড়​

সেটা ১৯৭৫ সাল। দেশে জরুরি অবস্থা জারি হল। প্রধানমন্ত্রী তখন ইন্দিরা গাঁধী। করুণানিধি ওই সময় জরুরি অবস্থার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। যার পরিণতি খুব ভাল হয়নি। তামিলনাড়ুতে করুণানিধির সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। জেলেও যেতে হয়েছে করুণানিধিকে। কিন্তু জনপ্রিয়তার জোরে বার বার ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন ‘কালাইগনার’।

ডিএমকে-র ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা করুণানিধির জীবনের শেষের দিকের দিনগুলি অবশ্য ততটা ভাল কাটেনি। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে বিপুল পরাজয়ের ধাক্কা থেকে তাঁর দল ডিএমকে-কে আর ক্ষমতায় ফেরাতে পারেননি ‘কালাইগনার’। জীবনের শেষ সাতটা বছর তাঁর দলকে বিধানসভায় বিরোধী আসনেই দেখতে হয়েছে করুণানিধিকে। শেষের দিকে চলাফেরার শক্তি অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। স্বয়ংক্রিয় হুইল চেয়ারে ঘোরাফেরা করতে হত তাঁকে। ২০১৮-র ৭ অগস্ট ৯৪ বছর বয়সে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে প্রয়াত হলেন করুণানিধি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন