চলছে জগন্নাথ হেরিটেজ করিডরের কাজ। পুরীতে বুধবার। ছবি: পিটিআই।
অনেকে মনে করেন, রাজনীতিবিদদের রাম এখন শুধু উত্তর ভারতের একটি শহরেই রয়েছেন। কিন্তু রামের আসল বসত ভক্তের হৃদয়ে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেও কয়েক শো বছর ধরে রঘুনাথ হয়ে তিনি বিরাজমান। এক্স হ্যান্ডলে সদ্য এ ভাবেই টুইট করেছিলেন পুরাণবিদ লেখক দেবদত্ত পট্টনায়ক। বুধবার অনেক বাঙালির কাছেও প্রাণের শহর উৎকলের শ্রীক্ষেত্র নবসাজে সেজে উঠল। তবে সেই ঐতিহাসিক দিনে কেন্দ্রের শাসক দলের প্রতিনিধিদের কার্যত সেখানে দেখা গেল না।
পুরীর মন্দিরের প্রতিহারী তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরিবারের কুলপান্ডা রঘুনাথ গোচিকরই বলছিলেন, “এটা প্রধানত রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ড। ওড়িশার বিজেপি বিধায়কদেরও দেখিনি।” ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের উপস্থিতিতে পুরীর বহু প্রতীক্ষিত ঐতিহ্য করিডর প্রকল্প এ দিন নিচু তারেই জনগণের জন্য উৎসর্গীকৃত বা লোকার্পিত হল। পুরীর এই নয়া প্রকল্পে জগন্নাথ-দর্শনের অভিজ্ঞতাই যেন পাল্টে যাচ্ছে। জগন্নাথ মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতির চোখে দিনটি ঐতিহাসিক। তিনি বলছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কম কথার মানুষ। কিন্তু তাঁর সরকারের আমলের এই কাজ ইতিহাস হয়ে থাকবে। পুরীর রাজা পুরুষোত্তম দেব এবং কপিলেন্দ্র দেবের আমলে মন্দির লাগোয়া কূর্মবেড়ি এবং মেঘনাথ পাচিরি (প্রাচীর) মন্দিরের গৌরব বৃদ্ধি করেছিল। ঐতিহ্য করিডরও পাকাপোক্ত ইতিহাসে ঠাঁই পেল।” সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে মন্দির লাগোয়া তল্লাট আগেই দখলদার বিহীন করা হয়েছিল। নব সাজে সজ্জিত ‘পরিক্রমা মার্গ’ গড়ে ওঠায় এ বার মন্দিরের চারটি দরজা সিংহ, হাতি, বাঘ বা ঘোড়া দ্বার পর পর একটানা চক্কর কাটা যাবে। ৭৫ মিটারের ‘পরিক্রমা মার্গ’ গড়ে উঠতে ৮০০ কোটি টাকা লেগেছে। এই পরিসরটিতে ভক্তদের স্বাচ্ছন্দ্যে নানা পরিকাঠামো গড়া হচ্ছে। মন্দির লাগোয়া কাঁচা নর্দমা বিশিষ্ট সরু ঘিঞ্জি জঞ্জাল ডাঁই করা রাস্তা আর দেখা যাচ্ছে না। ভক্তদের আরও প্রাপ্তি, শ্রী সেতু (ট্রাম্পিট ব্রিজ) এবং শ্রী দাণ্ড (রাস্তা)। ২০০ কোটি টাকা খরচে ২.৩ কিলোমিটারের শ্রী সেতু ভুবনেশ্বর-পুরী সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পুরীর ঘিঞ্জি যানজট এড়িয়ে মন্দিরমুখী দর্শনার্থীদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। পুরীর ভিতরে দোলবেদী থেকে মন্দির সংলগ্ন রাস্তাকে যুক্ত করা হচ্ছে শ্রী দাণ্ডের মাধ্যমে। রথ চলার রাস্তা বড় দাণ্ডের পাশে এই শ্রী দাণ্ড বানানো হয়েছে। এখানে বহুতল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। অশক্ত বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবস্থাও থাকবে। এ দিন পুরীর গজপতি রাজা দিব্যসিংহ দেব প্রকল্পের উদ্বোধনে যজ্ঞের পূর্ণ আহূতি সম্পন্ন করেন।
কয়েক জন সেবায়েত বলছেন, কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের মতো পুরীতেও কিছু ছোট দোকানদারকে পরিক্রমা প্রকল্পের জন্য উৎখাত হতে হয়। স্বর্গদ্বারের পুরনো হোটেল ভিক্টোরিয়ার কর্ণধার দেবাশিস কুমার কিন্তু খুশি, নয়া প্রকল্পে পর্যটন আরও গতি পাবে। এখনই পুরী বিমানবন্দরের কাজ চলছে। বিশ্বমানের সমুদ্র সৈকত গড়তে সমুদ্রতটের একাংশ সংস্কারে ‘ব্লু ফ্ল্যাগ বিচ’-এর তকমা পায়। পুরী প্রশাসনের আশা, দিনে মন্দিরে ১০ হাজার বাড়তি পর্যটক আসবেন। দর্শনও অনেক সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে।