App Bike

Bengaluru: ‘এখানেই কাজ করতাম, লকডাউনে চাকরি যায়, মাকেও বলতে পারিনি’, গলা ধরে এল অ্যাপ বাইকচালকের

বিঘ্নেশ বলে চলেন, “জানেন, স্যর, ওই বিল্ডিংয়ে একটি চিনা সংস্থায় কাজ করতাম। অপারেশনাল টিমে ছিলাম। ২০২০ সালে আমার কাজটা চলে গেল।”

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২২ ১৫:০২
Share:

একটু এগোতেই অ্যাপ বাইকচালক নিজেই আলাপ জমিয়ে দিলেন সওয়ারির সঙ্গে। প্রতীকী ছবি।

স্যর, আসুন।

Advertisement

ডাকটা শুনে মোবাইল থেকে চোখ তুলতেই পরাগের চোখে পড়ল মধ্যবয়সি অ্যাপ বাইকচালকের দিকে। বাড়ি যাওয়ার জন্য পরাগই অ্যাপ বাইক বুক করেছিলেন। সুতরাং আর দেরি করার কোনও মানে হয় না। তাই চটপট বাইকে উঠে বসলেন পরাগ।

একটু এগোতেই অ্যাপ বাইকচালক নিজেই আলাপ জমিয়ে দিলেন সওয়ারির সঙ্গে। পরাগ জৈন। বেঙ্গালুরুর একটি নামী সংস্থায় কাজ করেন। সওয়ারিকে পিক আপের ঠিকানা দেখে মনটা একটু খারাপই হয়েছিল অ্যাপ বাইকচালকের। তাই বাইক চালাতে চালাতে সওয়ারি পরাগকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন চালক বিঘ্নেশ নাগাভূষণন।

Advertisement

‘‘স্যর, আপনার অফিস কি এই বিল্ডিংয়ে?’’

হঠাৎ এমন প্রশ্ন পেয়ে পরাগ পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন বলুন তো?’’

এ বার উত্তর আসে, ‘‘আসলে, স্যর, আপনার মতো আমারও অফিসের ঠিকানা ছিল ওই বিল্ডিংটাই।’’ বলতে বলতে বিঘ্নেশের গলার স্বরে কেমন যেন একটা বিষণ্ণতা অনুভব করেছিলেন পরাগ।

বিঘ্নেশ বলে চলেন, “জানেন, স্যর, ওই বিল্ডিংয়ে একটি চিনা সংস্থায় কাজ করতাম। অপারেশনাল টিমে ছিলাম। কিন্তু ভারত সরকার চিনা অ্যাপ্লিকেশনের উপর নিষেধাজ্ঞা আনতেই সংস্থাটি বন্ধ হয়ে গেল। ২০২০ সালে আমার কাজও গেল। তার পর করোনা এল। ফলে কোথাও কাজ খুঁজে পেলাম না।”

বিঘ্নেশের এই লড়াই পরাগকে পীড়া দিচ্ছিল। তবুও তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তা হলে এত দিন কী ভাবে সংসার চালালেন?’’ ঈষৎ হেসে বিঘ্নেশ উত্তর দেন, “আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল, ছবির নির্দেশনা করব। এই সময়ে সেই স্বপ্নকে বাস্তব করার পিছনে ছুটলাম। যা জমানো টাকা ছিল, সব নিয়ে নেমে পড়লাম ছবি নির্দেশনার কাজে।”

খুব অবাক হয়ে বিঘ্নেশের কথাগুলি শুনছিলেন পরাগ। আবার বলে চলেন, “ছোট ছোট কয়েকটি ছবির নির্দেশনা করেছি। ১৫টি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও ছবিগুলি মনোনীত হয়েছিল।” এই সাফল্য দেখে বিঘ্নেশ ভেবেছিলেন ওটিটি-তেও ছবিগুলি চলবে। কিন্তু বাণিজ্যিক কারণে তা আর হয়নি বলে দাবি বিঘ্নেশের।

ফলে নির্দেশনার স্বপ্নটাও মাঝপথে থমকে গিয়েছিল তাঁর। বিঘ্নেশ বলেন, “চুপ করে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না, স্যর। তাই পার্টটাইম অ্যাপবাইক চালকের কাজ নিলাম। জানেন, স্যর, আমার এই অবস্থার কথা মাকেও জানাইনি।”

এই কথোপকথনের মধ্যেই পরাগের বাড়ি চলে এসেছিল। বাইক থেকে নেমে বিঘ্নেশকে টাকা মিটিয়ে এক বুক বিষণ্ণতা নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিলেন পরাগ। নেটমাধ্যমে তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে, বিঘ্নেশের জন্য, তাঁর মতো একটা ভাল মানুষের জন্য সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন