যমুনা বাঁচাতে নির্দেশিকা, বিসর্জন শুধু পরিবেশ-বান্ধব প্রতিমার

আর মাত্র কয়েক দিন। তার পরেই দুর্গাপুজোয় মেতে উঠবেন রাজধানীর মানুষ। কিন্তু কপালে ভাঁজ পড়েছে দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের। এ বারে পরিবেশ-বান্ধব প্রতিমা ছাড়া ছাড়া অন্য ভাবে তৈরি প্রতিমা যমুনা নদীতে বিসর্জনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।

Advertisement

বর্ণালী চন্দ

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৮:০১
Share:

আর মাত্র কয়েক দিন। তার পরেই দুর্গাপুজোয় মেতে উঠবেন রাজধানীর মানুষ। কিন্তু কপালে ভাঁজ পড়েছে দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের। এ বারে পরিবেশ-বান্ধব প্রতিমা ছাড়া ছাড়া অন্য ভাবে তৈরি প্রতিমা যমুনা নদীতে বিসর্জনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। রাসায়নিক রং, প্লাস্টিক, পিওপি ইত্যাদি দ্বারা তৈরি প্রতিমাগুলি যমুনায় বিসর্জন করা যাবে না। শুধুমাত্র পচনশীল উপকরণে (বায়ো-ডিগ্রেডেবেল মেটিরিয়াল) তৈরি প্রতিমাই যমুনায় বিসর্জন করা যাবে, যাতে বিসর্জনের পরেই প্রতিমা জলে মিশে যায়। এবং তার অবশিষ্টাংশ নদীর জলকে দূষিত করতে না পারে।

Advertisement

মূর্তি বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) দিল্লি সরকারের সেচ বিভাগ ও উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি এজেন্সির কমিটি যমুনার পাড়ে ন’টি ঘাট তৈরির কথা জানিয়েছে। এই ন’টি ঘাটেই প্রতিমা বিসর্জন করার অনুমতি দেওয়া হবে পরিবেশ-বান্ধব প্রতিমাগুলিকে। এই ঘাটগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারি এজেন্সগুলিকেই। বিসর্জনের পর প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত বস্তু আবার ব্যবহারের জন্য একত্রিত করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া, এই ঘাটগুলিতে শৌচালয় তৈরির ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অবশ্য এই নির্দেশ এনজিটি আগেও জারি করেছিল। শুধুমাত্র রাজধানীতেই ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০০ থেকে এক হাজারটি দুর্গাপুজো হয়। তার পর কালীপুজো এবং তার পরেই উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ছট পুজো। ফলে প্রতি বছরই পুজোর পর বেড়ে যায় নদীর দূষণের মাত্রা।

যমুনাকে বাঁচাতেই এনজিটি নদীতে জঞ্জাল ফেলার ওপর জরিমানা জারি করেছিল। যমুনায় পুজোর সামগ্রী ও প্রতিমা বিসর্জন করলে ৫০০০ টাকা এবং নর্দমা ও কারখানার নোংরা আবর্জনা ফেললে ৫০ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করেছিল এনজিটি। কিন্ত তার পরেও উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ার মুখে দিল্লি সরকার কোনও রকম কার্যকরী পদক্ষেপ না করায় গণেশ পুজোর এক দিন আগে মাঠে নামে গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। যমুনোত্রী থেকে জন্ম নেওয়া যমুনা উত্তরাখণ্ড পর্যন্ত স্বচ্ছসলিলা, হরিয়ানা থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাত্রাপথেই শ্লথ হয়েছে তার গতি, জঞ্জালের জালে জর্জরিত হয়ে। সামনের পুজোয় আরও দূষিত হতে চলেছে যমুনা।

Advertisement

এনজিটি-র নির্দেশ

যমুনায় বিসর্জন নয়

• রাসায়নিক রং

• পিওপি

• প্লাস্টিক

যমুনায় বিসর্জনের অনুমতি

শুধুমাত্র পরিবেশ-বান্ধব প্রতিমা

জরিমানা

বিসর্জন করলে ৫০০০ টাকা।

বিসর্জনের জন্য ব্যবস্থা

ন’টি পৃথক ঘাট তৈরি করা হয়েছে।

ণ হচ্ছে নদীর কলেবর। সিপিসিবি (সেন্ট্রাল পলিউশন কনট্রোল বোর্ড) যমুনাকে মৃত নদী হিসাবে ঘোষণা করেছে অনেক দিনই। কেননা, যমুনাও হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। যমুনার কালো জলেই অমর হয়ে রয়েছে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম কাহিনি, শাজাহানের প্রেমের সাক্ষী তাজমহল আরও সুন্দর হয়ে ওঠে কল্লোলিনী যমুনার মধুর শব্দে। যমুনার জলের রং কালো বলেই বোধহয় এতো বেশি রোমান্টিক। সেই কালো জল আজ আরও কালো, কিন্তু প্রেমের রহস্যময়তা সেখানে নেই, আছে আবর্জনার স্তূপ আর দূষণ।

যেমন, সরস্বতীও আজ নেই। রয়ে গিয়েছে শুধু তার স্মৃতি। কিন্তু দু’চোখে স্বপ্ন এক দিন সরস্বতীকে ফিরে পাওয়ার। তাই আজকের প্রজন্ম মরিয়া হয়ে খুঁজে চলেছে সরস্বতীকে। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া নদীকে খুঁজতে। হারিয়ে যাওয়া সরস্বতীর হাল ঝড় তুলেছে মনে, আগামি প্রজন্মও কি যমুনাকে এ ভাবেই মরিয়া হয়ে খুজঁতে বাধ্য হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন